সুমন গাঙ্গুলি: এবার কি তবে বঙ্গ বিজেপিতে গুরুত্ব বাড়ছে মিঠুন চক্রবর্তীর?
২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় অন্যতম মুখ হিসাবে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে মহাগুরু’কে। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে প্রচারে দেখা গিয়েছিল মিঠুন চক্রবর্তীকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে অমিত শাহের সঙ্গে একাধিক সভায় বক্তব্য রাখতে দেখা গিয়েছিল মহাগুরুকে। বিজেপি সূত্রে খবর এবার শুধুমাত্র বক্তা হিসেবে নয়, ২০২৬ কে সামনে রেখে এবার বাংলার নির্বাচনে মিঠুন কে তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সেইমতো দলের তরফে নির্দেশেও দেওয়া হয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীকে। আপাতত একটি বাংলা চ্যানেলের নাচের রিয়েলটি শোয়ে প্রধান বিচারক হিসেবে কলকাতাতেই রয়েছেন তিনি। আর এই সময়গুলোকে মিঠুন চক্রবর্তীকে আরো বেশি করে প্রচারের কাজে ব্যবহার করতে চাইছে পদ্ম শিবির। সদ্য বদল হয়েছে বঙ্গ বিজেপি সভাপতি। সুকান্ত মজুমদারের বদলে দায়িত্বে এসছেন কট্টর আরএসএসপন্থী শমীক ভট্টাচার্য। তবে এখনো রাজ্যের সংগঠনকে ঢেলে সাজানো শুরু হয়নি। বিজেপি সূত্রে খবর, এবার রাজ্য বিজেপিতে কোন সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে ‘ এমএলএ ফাটাকেষ্ট ‘ কে। তবে শুধু কথার কথা নয় ইতিমধ্যেই ময়দানে নেবেও পড়েছেন মিঠুন। দুর্গাপুরে নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে একদা তৃণমূলের এই রাজ্যসভার সাংসদকে। প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে সুকান্ত মজুমদারদের সামনেই তৃণমূলকে একহাত নিয়ে যেমন আক্রমণ শানিয়েছেন, পাশাপাশি সেই সভায় উপস্থিত কর্মী সমর্থক দের মধ্যেও তথাকথিত বঙ্গ বিজেপির চেনা মুখদের থেকেও বেশি উন্মাদনা দেখা গেছে মিঠুনকে ঘিরে। আর এই জনপ্রিয় তাকেই কাজে লাগাতে চাইছে দল। বঙ্গ বিজেপির অন্দরের খবর ইতিমধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এবং নেতাদের মধ্যে লড়াইয়ে অনেকটাই ব্যাকফুটে বিজেপি। শুভেন্দু-সুকান্ত’র সঙ্গে দিলীপ – শমীকের দুরত্ব যেমন বাড়ছে। ঠিক একই ভাবে দলেই আস্তে আস্তে একঘরে হয়ে পড়ছে দাবাং দিলীপ। প্রায় প্রতিদিন ন নাম না করে শুভেন্দু-কৌস্তভদের মতো নব্য বিজেপিদের আক্রমণ করতে ছাড়ছেন না তিনি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে শেষ পর্যন্ত দিল্লী থেকে ডেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি জয়প্রকাশ নাড্ডা দিলীপকে চুপ থাকার নির্দেশ দেন। অর্থাৎ ২৬ এর নির্বাচনকে সামনে রেখে বাঙালি ইস্যুতে। যখন কোমড় বেঁধে ময়দানে তৃণমূল। তখন কার্যত অগোছলো বঙ্গ বিজেপি।
বিজেপি সূত্রের খবর, গোটা বিষয় দেখে অনেকটাই হতাশ বাংলার বিজেপি নেতা-কর্মীরা। অনেকেই এখন আর বিজেপির হয়ে মাঠে নামতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। এককথায় গোটা পরিস্থিতি নিয়ে ২৬ শে অশনি সঙ্কেত দেখছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। আর তাই এই বাংলারই ছেলে মিঠুনকে কাজে নামিয়ে বঙ্গ বিজেপির সব পক্ষকে এক নৌকায় তুলতে চাইছে কেন্দ্রীয় নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গ বিজেপির এক নেতার কথায়,” নেতাদের মধ্যে লড়াই আর একে অপরকে আক্রমণ দেখে দলের কর্মীরা উৎসাহ হারাচ্ছে হতাশ হয়ে পড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে চেয়ার দখল তো দুরঅস্ত, মাঠে ময়দানে লড়াই করার কর্মী পাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দেবে। আর তাই হয়ত মিঠুন চক্রবর্তীকে সামনে নামিয়ে আবার কর্মীদের একজোট করতে চাইছে দল।” সূত্রের খবর, নেতা নয় আগে দলীয় কর্মী সমর্থকদের অক্সিজেন দিয়ে ২৬ এর ময়দানে নামতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আর তাই ‘ অক্সিজেন সিলিন্ডার ‘ হিসেবে মিঠুন চক্রবর্তীকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। দুর্গাপুরের সভা থেকে অনেকটাই বাংলায় রাজনীতি করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। তৈরি হয়ে তিনি যে মাঠে নামছেন এবং কর্মীদের সাথে থেকেই যে তিনি লড়াই করবেন দুর্গাপুরের সভা থেকে তা নিজেই স্পষ্ট করে দেন।
বৃহস্পতিবার, দুই কলকাতার ৮ বিধানসভার কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন মিঠুন, শুক্রবার আরামবাগ- তারকেশ্বর এর সমস্ত বিধানসভার কর্মীদের নিয়ে বসবেন, এরপর রাজারহাট – নিউটাউন এর কর্মীদের সঙ্গে একই ভাবে বৈঠক করবেন তিনি। এরপর গোটা দক্ষিণবঙ্গ, বিশেষ করে বিজেপির হাতে থাকা বিধানসভা গুলোয় একাধিক বৈঠক করবেন মিঠুন। সূত্রের খবর, মিঠুন চক্রবর্তীকে দিয়ে সাংগঠনিক কাজ করার জন্য বিশেষ প্ল্যান তৈরি করেছে পদ্ম শিবির, প্রথমে দলের হাতে থাকা বিধানসভা, তারপর যে যে বিধানসভা ২০২১ সালে হাতে থাকলেও পরবর্তীতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা অন্য কারণে ২৬ সালে হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেটা এবং তৃতীয় যে যে জেলায় বিজেপি ২৬ সালে ভালো ফলাফল করতে পারে এমন জেলা বা বিধানসভা গুলোতে মিঠুন চক্রবর্তীকে কাজে লাগিয়ে ফসল তুলতে চাইছে পদ্ম শিবির।







