কাশ্মীরের অনন্তনাগে তুষারঝড়ে প্রাণ হারালেন দেশের দুই এলিট প্যারা কমান্ডো। তাঁদের মধ্যে একজন বীরভূমের রাজনগরের কুন্ডীরা গ্রামের সুজয় ঘোষ। গত শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে আহত দুই প্যারা কমান্ডোকে উদ্ধার করে সেনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুজয়ের পরিবারের কাছে তাঁর শহিদ হওয়ার খবর আসে। কান্নায় ভেঙে পড়ে সুজয়ের মা নমিতা ঘোষ, বাবা রাধেশ্যাম ঘোষ সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
নিতান্তই দরিদ্র পরিবারের সুজয় বছর সাতেক আগে ২০১৮ সালে সেনা বাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর হাত ধরেই পরিবার ধীরে ধীরে সচ্ছ্বল হচ্ছিল। কিন্তু মাঝপথেই বাড়ির ছেলের এই মর্মান্তিক পরিণতি যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সুজয়ের বৃদ্ধ দাদু বামাপদ ঘোষ, দাদা মৃত্যুঞ্জয় ঘোষরা। ঢুকরে কেঁদে উঠছেন বারবার।
অবশেষে শনিবার বিকেলে সুজয় ঘোষের কফিনবন্দি দেহ পৌঁছালো বীরভূমের রাজনগর ব্লকের কুণ্ডীরা গ্রামে। মুহূর্তের মধ্যেই শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা গ্রামে। সকাল থেকেই গ্রামের রাস্তার দুধারে মানুষের ঢল, শহিদকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায় হাজার হাজার মানুষ।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে দেশের জন্য প্রাণ দিলেন সুজয় ঘোষ। সেনা ট্রাক গ্রামের প্রবেশদ্বারে ঢোকার মুহূর্তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা নমিতা ঘোষ ও বাবা রাধেশ্যাম ঘোষ। চোখে জল পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও প্রতিবেশীদের। কান্নাজড়িত গলায় সুজয়ের মা বলেন, “আমার ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, এটাই আমার গর্ব।”
সুজয়কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এদিন উপস্থিত ছিলেন বীরভূম জেলা শাসক বিধান রায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী এবং বিজেপি জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও সুজয়কে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
শহিদের স্মৃতিতে কুণ্ডীরা গ্রামের আকাশ বাতাস যেন মুখরিত হয়ে ওঠে ‘সুজয় ঘোষ অমর রহে’ স্লোগানে। একদিকে বীর সন্তান হারানোর বেদনা, অন্যদিকে দেশের জন্য তাঁর আত্মবলিদানে গর্বিত মা— এই দুই অনুভূতির মাঝে, কিছুক্ষণের জন্য যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা বীরভূম জেলা।







