বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের ফলে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন(SIR) সমীক্ষায় বাদ পড়েছে প্রায় ৫৭ লক্ষ ভোটারের নাম। ভোটার-আধার বা রেশন কার্ডের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া যে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ নথির ভিত্তিতে ভোটার কার্ড সংশোধনের কাজ হয়েছে, সেখানে বাদ যাওয়া ভোটারদের প্রায় অধিকাংশই সেই সমস্ত নথিপত্র দেখাতে পারেননি। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিহারে বাদ যাওয়া প্রায় ৫৭ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ২০ লক্ষ মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ২৮ লক্ষ এমন ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে যারা এখন আর বিহারে থাকেন না, অথবা যাদের অন্যত্র ভোটার তালিকায় ইতিমধ্যেই নাম নথিভুক্ত হয়েছে।
বিহারে এসআইআর(SIR)-এর ফলে বাদ যাওয়া প্রায় ৫৭ লক্ষ ভোটার ইস্যুতে সরগরম দিল্লির রাজনীতি। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশের দাবি তুলে রীতিমত উত্তাল সংসদ। গতকাল এই ইস্যুতে সংসদের চলতি বাদল অধিবেশন বয়কট করে সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক দলগুলো। তাদের দাবি, সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করেও এনআরসি(NRC) লাগু করতে পারছে না। একমাত্র আসাম ছাড়া আর কোথাও এনআরসি চালু করা সম্ভব হয়নি। তাই মোদী সরকার এভাবে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে দেশে এনআরসি লাগু করতে চাইছে।
বিহারের পর কি পশ্চিমবঙ্গেও এসআইআর শুরু হবে? এই প্রশ্নেই এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি। ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ইতিমধ্যেই তৃণমূল সুপ্রিমো নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারের মদতেই যে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন সে অভিযোগও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বিজেপিকে নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী সাফ জানিয়ে দেন, তার রাজ্যে এনআরসি লাগু করতে হলে সবার আগে তাঁকেই ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাতে হবে। অন্যদিকে রাজ্য বিজেপিও এনআরসি চালু করার প্রশ্নে বারবার তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দাবি করেছে, এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য এসআইআর চালু হওয়া নিয়ে ধন্ধে আছে রাজ্যবাসী। তবে বিহারের মতো এ রাজ্যেও যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হবে তা একপ্রকার নিশ্চিত। যদিও বাংলার একটি দৈনিক পোর্টালের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আগামী আগস্ট মাস থেকে এ রাজ্যে শুরু হতে পারে এসআইআর-এর কাজ। তবে এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনও সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। তবে ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রেই আধার-ভোটার অথবা রেশন কার্ডকে প্রাধান্য দেওয়া হবে নাকি, বিহারের ধাঁচেই নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া ১১টি নথি যেমন— ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগের কোনও সরকারি নথি (ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এলআইসির নথিও গ্রাহ্য), জন্মের শংসাপত্র, পাসপোর্ট, শিক্ষা সংক্রান্ত শংসাপত্র (জন্মের তারিখ উল্লেখ থাকা চাই), স্থায়ী বসবাসকারীর শংসাপত্র, এসসি এসটি বা ওবিসির সংশাপত্র, এনআরসি তালিকায় নাম, স্থানীয় প্রশাসনের তৈরি করা পারিবারিক ‘রেজিস্টার’, দলিল বা পর্চার মো জমি-বাড়ির নথি— এগুলোকেই প্রমাণ্য নথিপত্র হিসাবে দেখাতে হবে, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারী ভাবে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তবে এসআইআর নিয়ে যে যথেষ্ট আতঙ্কে আছে রাজ্যবাসী, তার প্রমাণ বাংলাতে গত এক সপ্তাহেই ৭০ হাজারেরও বেশি ভোটার অনলাইনে তাদের ভোটার কার্ড সংশোধন বা আপডেটের জন্য আবেদন করেছেন। এর থেকেই পরিষ্কার যে, রাজ্য চালু হতে চলা এসআইআর নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান রাজ্যবাসী।







