আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) আইনে আজ, সোমবার বাংলাদেশ (Bangladesh)-এর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হতে চলেছে। দোষী সাব্যস্ত হলে হাসিনার মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশে উত্তেজনার পারদ চরমে।
রায় ঘোষণার আগেই গোটা বাংলাদেশ জুড়ে তৈরি হয়েছে চরম অস্থিরতা। এই রায়দানের প্রতিবাদে শেখ হাসিনা(Sheikh Hasina)-র দল আওয়ামী লীগ (Awami League) দেশব্যাপী বন্ধের ডাক দিয়েছে। যদিও মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যেই ওই বনধকে নিষিদ্ধ করেছে। ফলে পুরো দেশজুড়ে জারি করা রয়েছে হাই-অ্যালার্ট।
এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে শেখ হাসিনা(Sheikh Hasina)-র একটি অডিও বার্তা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে তিনি সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আরও জোরালো প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতিতে গোটা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মহাম্মদ সাজ্জাদ আলি নির্দেশ জারি করেছেন, “কেউ যদি পুলিশের ওপর হামলা চালায় বা হিংসায় উস্কানি দেয়, তবে তাদের দেখামাত্রই যেন গুলি চালানো হয়।”
শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মূলত যে ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো হল—
প্রথম অভিযোগ— অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে যে হাসিনা পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের সাধারণ নাগরিকদের উপর আক্রমণ করতে উস্কানি দিয়ে হিংসাকে উৎসাহিত করেছিলেন এবং পরিস্থিতির সামাল দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিলেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ– ছাত্র বিক্ষোভকারীদের দমাতে হাসিনা প্রাণঘাতী অস্ত্র, হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তৃতীয় অভিযোগ— ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডে হাসিনার প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে যে, হাসিনা এবং তাঁর সহযোগীরা তাকে হত্যার নির্দেশ ও ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
চতুর্থ অভিযোগ— গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার চাঁনখারপুলে ৬ জন নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীকে হত্যা করা হয়। এতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে এই হত্যাকাণ্ডগুলি সরাসরি হাসিনার নির্দেশে ঘটে।
পঞ্চম অভিযোগ— পাঁচজন বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি ওই পাঁচজনের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা এবং একজন বিক্ষোভকারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
আদালত ৪৫৩ পৃষ্ঠার একটি রায় লিখেছে, যা ছয়টি ভাগে বিভক্ত। আদালত বাংলাদেশের সরকারি আইনজীবী তাজুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং তার কাজের প্রশংসা করেছে। আদালত আসামিপক্ষের আইনজীবীদেরও ধন্যবাদ ও প্রশংসা করেছে। আদালত রায়ে প্রমাণ হিসেবে শেখ হাসিনার টেলিফোনিক কথোপকথন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন এবং ভুক্তভোগীদের উপর সংঘটিত নৃশংসতার সমস্ত তথ্যও এই রায়ে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বরিশালে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, সরকার অবিলম্বে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। তিনি আরো জানান, দোষীদের কোনভাবেই রেহাত করা হবে না।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলা এই মামলাকে “বিচারের নামে প্রহসন” এবং ন্যায়বিচারের নামে “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার” বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি করেছে। তাদের মতে, বিচার ব্যবস্থা সত্য উদ্ঘাটনের পরিবর্তে রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথানত করেছে। তাই হাসিনা সমর্থক থেকে শুরু করে বহু সাধারণ মানুষের কাছে এটি শুধুমাত্র একটি আইনি লড়াই নয়; বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং সাংবিধানিক অধিকারের বড় পরীক্ষা বলেই অভিমত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের। এখন দেখার, রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশ আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কিনা, কিংবা আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এই ঘটনায় কী প্রতিক্রিয়া দেখায়।







