বৃহস্পতিবারও ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করার কথা ছিল। সেই মতো দুপুর ১২টা নাগাদ শুরু হয় অধিবেশন। এর আগে গত মঙ্গলবার শঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাসপেন্ড হয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মতো তিনি আজ বিধানসভা কক্ষে ছিলেন না। বিজেপির হয়ে মুখ্য সচেতক ছিলেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ও বাঙালি ইস্যুতে সরাসরি বিজেপির বিজেপিকে নিশানা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘চোরেদের সরকার’ বলে আখ্যা দেন। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা কক্ষ। রীতিমত ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিজেপি বিধায়করা পাল্টা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই ‘চোর চোর’ শ্লোগান তুলতে থাকেন। এর পরেই সাসপেন্ড করা হয় বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে। বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীরা শঙ্কর ঘোষকে টেনে বের করার চেষ্টা করলে বিজেপির অন্যান্য বিধায়কদের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়। এরপর দু ঘণ্টার মধ্যে সাসপেন্ড হন বিজেপির পাঁচজন বিধায়ক। যদিও তৃণমূল বিধায়করা নিজেদের আসনে বসেই সবটা দেখেছিলেন।
এদিন অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে বক্তব্য রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তাঁর আগে বলার কথা ছিল বিজেপির অগ্নিমিত্রা পলের। কিন্তু স্পিকার তাঁর নাম ডাকলেও তিনি সভাকক্ষে উপস্থিত না থাকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ডাকা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই অগ্নিমিত্রা পল সভাকক্ষে ঢোকেন। তখন বিজেপি বিধায়করা চিৎকার করতে থাকেন, যাতে অগ্নিমিত্রাকে বলতে দেওয়া হয়। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই স্পিকারকে বলেন বিজেপি বিধায়ককে বলতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় যেহেতু তিনি উপস্থিত ছিলেন না, তাই তাঁর জন্য বরাদ্দ সময় কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়। তারপর আবারও মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেন। তখনই বিজেপির তরফ থেকে পাল্টা শ্লোগান তোলা হয়। স্পিকার বারণ করা সত্ত্বেও থামেননি বিজেপি বিধায়করা। এরপরই প্রথমে শঙ্কর ঘোষ। তার পর সাসপেন্ড করা হয় অগ্নিমিত্রা পাল। এরপর একে একে মিহির গোস্বামী, অশোক দিন্দা, বঙ্কিম ঘোষকেও সাসপেন্ড করা হয়। মিহির গোস্বামীকে কার্যত চ্যাংদোলা করে বার করা হয় বিধানসভা কক্ষ থেকে।
এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এই ঘটনার জন্য সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই আঙুল তুলে বলেন, “স্পিকার মমতার দালাল, মমতার নির্দেশেই এই নাটকের চিত্রনাট্য লিখেছেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।” পাশাপাশি বিজেপিকে মুখ্যমন্ত্রী ‘চোর’ বলায়, তার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শুভেন্দু বলেন, “মমতা সবচেয়ে বড় চোর। ও চাকরি চুরি করেছে, আর ভাইপো টাকা নিয়েছে। পিসি-ভাইপো মিলে প্রশ্ন ফাঁস করে বিক্রি করেছে। তার অডিও প্রমাণও আমার কাছে আছে।” তারপরই মমতার নাম ধরেই শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, “ওকে নন্দীগ্রামে হারিয়েছি, ভবানীপুরেও হারাব।”
পাশাপাশি এদিনের ঘটনা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আরও একবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, যাতে তাঁর বক্তব্য মানুষ শুনতে না পায় সে কারণেই বিজেপি পরিকল্পনা করেই এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তিনি বলেন, “আমি ধিক্কার জানাচ্ছি। এরা জেনেশুনেই, আমার কথা যাতে মানুষ শুনতে না পারে, আমার কন্ঠরোধ করার জন্যই ওদের এই কর্মসূচি। সকালে কিন্তু ওরা ছিল না। ওরা এসেছে, আমি আসার কিছুক্ষণ আগে। যখন নাম ডেকেছে, ওরা কিন্তু তখন বক্তব্য রাখেনি। যেই নিজেদের বলা হয়ে গিয়েছে, ওমনি অশান্তি। আমি বলবই, আমার কন্ঠরোধ করা যাবে না।” এরই সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালিদের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পর একটা দল, যাদের দেশ স্বাধীন করার পিছনে কোনও ভূমিকা ছিল না, তারা এখন দেশের সবথেকে বড় ডাকাত। মানুষে মানুষে ভাগাভাগি করেন। ব্রিটিশদের সঙ্গে মিশে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সাম্প্রদায়িক বিভাজন করেছিল। আগামী দিন বিজেপির কেউ নির্বাচিত হবেন না। স্বৈরাচারী শক্তি। যে বাঙালি দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে, সেই বাঙালিদের এরা অপমান করছে। এরা বাঙালির শত্রু।” সব মিলিয়ে রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে কেউ যে কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছেড়ে দিতে রাজি নয়, তা আজকের ঘটনায় স্পষ্ট। এরপর ভোট যত এগোবে ততই এই রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।







