শুক্রবার রাজ্যে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন দমদম বিমানবন্দর থেকে প্রথমে নবনির্মিত যশোর রোড মেট্রো স্টেশনে পৌঁছন তিনি। ইয়েলো লাইনের (নোয়াপাড়া-বারাসত) নোয়াপাড়া থেকে জয়হিন্দ বিমানবন্দর পর্যন্ত রুটে মেট্রো চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন তিনি। এখান থেকেই ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে অরেঞ্জ লাইনের (নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর) হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেশন (রুবি) থেকে বেলেঘাটা স্টেশন এবং গ্রিন লাইনের (সেক্টর ফাইভ-হাওড়া ময়দান) এসপ্ল্যানেড স্টেশন থেকে শিয়ালদা স্টেশন মেট্রো চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মোদি। তারপর যশোর রোড মেট্রো স্টেশন থেকে দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠে সভাস্থলের দিকে রওনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কনভয়। বঙ্গ সফরে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে মোদির। দমদম সেন্ট্রাল জেল মাঠের সভাস্থল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। শিলান্যাস করেন 6 লেনের এলিভেটেড কোনা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের। তারপর দমদমে দলীয় সমাবেশ করেন মোদী৷
প্রধানমন্ত্রী বাংলায় পা রাখতেই তাঁর উদ্দেশ্যে সরাসরি পাঁচটি তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রূপায়ন করা প্রকল্পের উদ্বোধনে এসেছেন। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা যত না, তার চেয়েও বেশি রয়েছে রাজ্য সরকারের ভূমিকা। পাশাপাশি তিনি ৫টি প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। প্রথমত, কোন অধিকারের বলে মোদী সরকার সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করাতে যাচ্ছেন, যেখানে বিজেপির নিজেদের একাধিক নেতা-মন্ত্রী অপরাধমূলক কাজে অভিযুক্ত। তাছাড়া সিবিআই ও ইডিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করে মোদী সরকার বিরোধীদের উপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কুণাল ঘোষ। দ্বিতীয়ত, এসআইআর(SIR)-এর নাম করে সাধারণ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে যেভাবে বাদ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার, তাতে কুণালে পাল্টা প্রশ্ন— তাহলে তো সবার আগে মোদীর উচিত নিজেদের ইস্তফা দিয়ে সংসদ ভেঙে দেওয়া। কেননা গত বছর তো এই ভুয়ো ভোটারদের ভোটেই প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেছেন। তৃতীয়ত, বিজেপি শাসিত রাজ্যে যখন বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বাঙালিদের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে, বাংলাকে অপমান করা হচ্ছে তখন একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আপনি কেন তার প্রতিবাদ করেননি। চতুর্থত, প্রধানমন্ত্রী নিজে ভোটের স্বার্থে বাংলায় এসে নিজে বাংলা ভাষায় শ্লোগান দিচ্ছেন, কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের, এর দায় কে নেবে? পঞ্চমত, কেন্দ্রের কাছে বাংলার বয়েকা টাকা ১ লক্ষ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছে করেই আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন কুণাল ঘোষ। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন এতসব কিছুর পরেও বাংলায় খালি হাতে আসতে প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা করে না। যেখানে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি তাদের বকেয়া সময়মত পাচ্ছে সেখানে শুধুমাত্র বঞ্চনার শিকার হচ্ছে বাংলা। এই পাঁচ প্রশ্নের উত্তর সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চান কুণাল।
অন্যদিকে, বাংলায় পা রেখেই নতুন বাংলা গড়ার ডাক দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। শ্যামাপ্রসাদের কৃতিত্বকে সামনে রেখে নতুন বাংলা গড়তে বঙ্গবাসী বিজেপির হাত শক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের নাম উচ্চারণ না করে সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হলে অনেক নেতা-মন্ত্রীদের জামানত যে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে সে হুঁশিয়ারিও দেন প্রধানমন্ত্রী। সব মিলিয়ে বঙ্গ রাজনীতির হাইভোল্টজ এই দিনে রাজনীতির হাওয়া যে যথেষ্ট উত্তপ্ত ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি নির্বাচন যত এগোবে এই উত্তাপ যে আরও বাড়বে, তা আজকের ছবি থেকে অনেকটাই স্পষ্ট।







