সম্প্রতি তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ বিধায়ক হুমায়ুন কবীর দলের অন্দরের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে একাধিক বার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন। নিজের বিধানসভা এলাকার ব্লক সভাপতি যে তাঁর এবং দলের নির্দেশ মানছেন না, এও খোলসা করেছিলেন ভরতপুরের বিধায়ক। পাশাপাশি এ বিষয়ে দলের উচ্চ নেতৃত্ব পদক্ষেপ না নিলে নতুন দল গড়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তৃণমূলের এই বিদ্রোহী নেতা। আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তিনি স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন যে, এর মধ্যে তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্ব তাঁর সমস্যা নিয়ে কথা না বললে তিনি নতুন দল গঠনের ঘোষণা করবেন। সেই দল যে শুধুমাত্র বহরমপুর কেন্দ্রীক নয়, তাও জানিয়েছিলেন হুমায়ুন। মালদা, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, নদিয়ায় ৫০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনাও ছোকে রেখেছিলেন তৃণমূলের এই বিক্ষুব্ধ বিধায়ক। শেষ পর্যন্ত ১৫ আগস্টের আগেই গত সোমবার ক্যামাক স্ট্রিটে বহরমপুর এবং মুর্শিদাবাদ জেলার সাংগঠনিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে হুমায়ুন সহ ১০ জন বিধায়ককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে নাকি অভিষেকের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় হুমায়ুন কবীরকে। দলের অন্দরের বিষয় বার বার প্রকাশ্যে আনায় হজম করতে হয়েছে বকুনিও। বৈঠকে নাকি হুমায়ুনকে অভিষেক বলেন, “আপনি সবকিছু নিয়ে কথা বলেন। দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেন।” এদিনের বৈঠকে হুমায়ুন কবীরও তাঁর অভাব-অভিযোগের কথা অভিষেককে জানান। পাশাপাশি সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণেরও আবেদন জানান। এদিনের বৈঠকে হুমায়ুনের প্রধান অভিযোগ ছিল তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্ব শুধুমাত্র হুমায়ুনের নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেকের নির্দেশও মানছেন না। সোমবারের বৈঠকে হুমায়ুন কবীরের করা সব অভিযোগ ডাইরিতে নোট করেন অভিষেক। এ বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নেবেন, সে কথাও জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে সোমবারের বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকের সামনে বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিলেন ভরতপুরের বিধায়ক। মুখের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বেশ রহস্যময় উক্তি হুমায়ুনের, ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়’। এদিন সাংবাদিকদের সামনে খুব বেশি কিছুই বলতে চাননি হুমায়ুন। তিনি বলেন— “আজকের বৈঠকে আমি সন্তুষ্ট। দল যা নির্দেশ দিল তা প্রকাশ্যে বলা যাবে না, সেটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।” তবে তাঁর করা, ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়’— এই হেঁয়ালি নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে কি নতুন দল গড়ছেন হুমায়ুন? যদিও ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তার পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেন, আগামী নির্বাচনেও জয়ী হবে তৃণমূল কংগ্রেসই। তার ফলে মনে করা হচ্ছে, হুমায়ুন তৃণমূলেই থাকছেন।







