প্রয়াত ছিলেন বর্ষীয়ান নকশাল নেতা আজিজুল হক। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে সোমবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই প্রবীণ নকশাল নেতা। রাজনীতির পাশাপাশি লেখক হিসেবেও নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছিলেন৷ জেলে বসেই লিখেছিলেন তাঁর জনপ্রিয় বই ‘কারাগারের ১৮ বছর’। জেলে তাঁর উপর হওয়া অত্যাচারের বিভিন্ন ঘটনাকেই লিপিবদ্ধ করেছিলেন আজিজুল হক— যা রীতিমত দাগ কেটেছিল পাঠকের মনে।
জানা গিয়েছিল, কয়েকদিন আগে বাড়িতে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে গিয়েছিল প্রবীণ এই নেতার। তারপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বেশ কিছুদিন ভর্তি থাকার পর ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হতে থাকে। কিন্তু হঠাৎই শনিবার দুপুরের পর থেকে বদলে যায় পরিস্থিতি ৷ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রাতে তাঁকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেশনেও। শেষমেশ সোমবার দুপুরে প্রয়াত হন এই প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা ৷
নকশাল বাড়ি আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ আজিজুলের জন্ম উলুবেরিয়ার রণমহল গ্রামের জমিদার পরিবারে। খুব কম বয়সে দাদার সঙ্গে কলকাতায় পড়তে আসেন। সেই সূত্রে সিপিআই নেতা নন্দগোপাল ভট্টাচার্যের সঙ্গে পরিচয়৷ পরে তাঁর হাত ধরেই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭ বছর ৷ পরে হাওড়ার কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন৷ ফলে বাবা সৈয়দ কাশেমেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি ৷ এরপর কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনের সময় সশস্ত্র বিপ্লবের প্রতি ঝুঁকে পড়েন আজিজুল। ১৯৬৫ সালে প্রথমবার জেলে যান৷ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে সুন্দরবন যান সংগঠনের কাজে। চারু মজুমদারের মৃত্যুর পর সিপিআই(এম-এল)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকও হয়েছিলেন তিনি।
জীবনে অসংখ্যবার জেলেই কাটিয়েছেন এই প্রবীণ নকশাল নেতা। সত্তরের নকশাল আন্দোলনের পর ১৯৮২ সালে বামফ্রন্টের শাসনকালেও গ্রেফতার হন তিনি। প্রায় সাত বছর জেলে ছিলেন। তাঁর মুক্তির দাবিতে সেসময় হয়েছিলেন বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ। ১৯৮৯ সালে জেলমুক্তির পর আর সেভাবে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না আজিজুল হক। তবে যেকোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ কখনও থেমে থাকেনি। এমনকি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময়ও তিনি প্রকাশ্যেই বামফ্রন্টের বিরোধিতা করেছেন।
তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, ‘প্রবীণ রাজনীতিক আজিজুল হকের প্রয়াণে আমি গভীর শোক জ্ঞাপন করছি। আজিজুল হক একজন লড়াকু, সংগ্রামী নেতা ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনও মাথা নত করেননি। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সহযোগীদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাই।’ কমরেড আজিজুল হকের মৃত্যুতে যে একটা যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল, তা দ্ব্যর্থহীন ভাবেই বলা সম্ভব।







