রাজনীতিতে তিনি যে অলরাউন্ডার, ২১শের সভা থেকে বুঝিয়ে দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রীতিমত ক্যাপ্টেনের মতো ২৬-এর ক্রিজে চতুর্থ বারের জন্য বাংলা দখলের ‘রান’ বেঁধে দিলেন দলীয় কর্মীদের। এদিন মমতা বলেন, “এবারে খেলায় বোল্ড আউট করতে হবে। একেবারে ছক্কা মারতে হবে।” একুশে জুলাই আসলে একটা আবেগ। তৃণমূল কংগ্রেসের মেগা ইভেন্ট, শহীদ স্মরণ। তাই সকাল থেকেই সরগরম গোটা চত্বর। ‘দিদি’ তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, তা শুনতে রাত থেকে একটু একটু করে সভামঞ্চে ভিড় করতে শুরু করেছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। ছাব্বিশের সুর কী হবে? ভোটের আগে বিজেপি সহ বিরোধীদের ক্লিন বোল্ড করতে ক্যাপ্টেন কী ভোকাল টনিক দেন, তা শুনতে ধর্মতলায় লাখো মানুষের ভিড়।তবে সেই চেনা রণংদেহী মেজাজে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। লড়াইয়ের মঞ্চে তিনি যে সামনে থেকে টিম সামলাবেন, তা বুঝিয়ে দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, শহীদদের রক্তে তর্পণ করে বলছি, যতদিন দিল্লি থেকে উৎখাত না করতে পারি, ততদিন শান্ত হব না। আমি একাই ১o জনের সঙ্গে লড়ে নেব।” আসলে বাঙালি অস্মিতা, এনআরসি, ভোটার তালিকা সংশোধন, বাংলার বঞ্চনা সহ একাধিক হাতিয়ার যে তার হাতে। ২৬শে আরও বেশি আসন যে দরকার তাও নির্দিষ্ট করে দেন। এদিন সভামঞ্চে পহেলগাও হামলায় শহীদ ঝন্টু আলী শেখ এবং বিতান অধিকারীর পরিবারকে মঞ্চে তুলে তাদের হাতে ২ লক্ষ টাকা তুলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “অপারেশন সিঁদুরে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা গেল না কেন? আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় চলছেন।” ইতিমধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে, অথচ ২০২৬-এ বিধানসভাকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আচমকাই জয় শ্রী রামের বদলে জয় মা দুর্গা, জয় মা কালীর নাম বারেবারে বলেন, যা নিয়েও একুশের মঞ্চ থেকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, “টেলি প্রম্পটারে দুলাইন বাংলা লিখে এনে বলে দিলেই বাঙালি হওয়া যায় না। ওদের না আছে জ্ঞান, না আছে কিছু।” পাশাপাশি কেন্দ্রের মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “সর্বনাশা আইন বাতিল না করলে, বাংলায় হাত দিলে কমিশন ঘেরাও করব আমরা। কিছুতেই বাংলা ও বাঙালির উপর অত্যাচার মানব না।” এরপরই মমতার হুঁশিয়ারি, “বাংলাভাষীদের ওপর অত্যাচার হলে ছেড়ে দেব না। আমাদের আটকে রাখা যায় না, রোখা যায় না।”
ইতিমধ্যে অসমের ফরেন ট্রাইবুনালে বাঙালিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা নিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাকে মমতার খোঁচা, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী আপনি অসমটাই সামলাতে পারছেন না, আর বাংলায় নাক গলাচ্ছেন। সুস্মিতা দেবকে বলব দরকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দরকার হলে আমরা সবাই যাব। দেখব কতজনকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখেন।” এদিন সিপিএমকেও মমতার তোপ, “মনে নেই হাজরা মোড়ে সেদিন আমায় মারতে মারতে প্রায় মেরেই ফেলেছিলেন, মাথা ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র এক্সারসাইজ করি বলে আর হাঁটি বলে এখনও চলছি, লড়াই করে যাচ্ছি।”







