১৬ জুলাই, ২০২৫: বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের পর মহম্মদ ইউনূসের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু তারপরেও হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা সেই অর্থে কমেনি। একের পর এক শিল্পী-সাহিত্যিকদের বাড়ি-ঘর স্থাপত্য ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের চোখের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আশানুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অন্ধ ভারত বিরোধিতার ফলে কয়েক মাস আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটেতেও ভাঙচুর চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এবার সামনে আসছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভাঙার ঘটনা।
যদিও ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ভারত সরকার এবং মহম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন যে, যাতে করে বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি-বিজড়িত তাঁর পৈতৃক বাড়িটি না ভেঙে ফেলা হয়। গত মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এক্স-হ্যান্ডেলে লেখেন, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লেখেন, “সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে তিনি জানতে পেরেছেন যে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সাহিত্যিক ও শিশুসাহিত্যের পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে । এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখজনক। রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক । উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন বাংলার নবজাগরণের এক স্তম্ভ । তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পোস্টের পরেই এবার নড়েচড়ে বসল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এবার তাদের তরফ থেকেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বাড়িটি না ভাঙার আর্জি জানানো হল। প্রয়োজন ওই বাড়ি সংস্কারে সমস্ত ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয় ভারত সরকারের তরফে। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর পৈতৃক সম্পত্তি ভেঙে ফেলা হচ্ছে ৷ কিন্তু বাংলা সাংস্কৃতিক নবজাগরণের প্রতীক এই ভবনটির ঐতিহাসিক মর্যাদা বিবেচনা করে, ভেঙে ফেলার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে সাহিত্যের জাদুঘর এবং ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে এটি মেরামত করে পুনর্নির্মাণের অনুরোধ জানানো হয়েছে ৷”
ময়মনসিংহ জেলায় হরিকিশোর রায়চৌধুরী রোডে অবস্থিত সত্যজিৎ রায়ের এই পৈতৃক বাড়ি। এই বাড়িটিতে এক সময় থাকতেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ৷ বিশিষ্ট সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী ও প্রকাশক ছাড়াও তিনি ছিলেন বিখ্যাত কবি সুকুমার রায়ের পিতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের দাদু। স্বাভাবিক ভাবেই ঐতিহ্যমন্ডিত এবং বহু স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটিকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের যে বাড়তি আবেগ রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আবেদন জানানোর পর বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদৌ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন কিনা।







