অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য শুভেন্দুর

নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে ভোটের বৈতরণী পেরোতে চাইছে বিজেপি— এমন অভিযোগ তুলে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলের সাংসদরা গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে সংসদ এবং সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এমনকী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও ২০২৪ সালের ভোটার লিস্ট ধরে ধরে বারাণসী সহ একাধিক কেন্দ্রের ভোট কারচুপির তথ্য সামনে আনছেন। স্বাভাবিক ভাবেই গোটা দেশজুড়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভোট চোর’ শ্লোগান তুলছেন বিরোধীরা। এই আবহে এবার বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধেই পাল্টা ভোট চুরির অভিযোগ তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগের তির ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে থেকে জয়ী তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। ২০২৪ লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে রেকর্ড ৭ লক্ষ ১০ হাজার ভোটে জিতেছেন অভিষেক। এবার এই জয়ের ব্যবধান নিয়েই সরব হল রাজ্য বিজেপি। প্রসঙ্গত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিপুল মার্জিনের জয় নিয়ে এর আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর। তিনি রীতিমত সাংবাদিক সম্মেলন করে ডায়মন্ড হারবারে লক্ষ লক্ষ ভুয়ো ভোটার আছে বলে দাবি করেছিলেন। যদিও তারপরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিনিধি মারফত অনুরাগ ঠাকুরের বাড়িতে সমস্ত তথ্য সম্বলিত ভিডিয়ো ডেটা পাঠিয়েছিলেন। রাজ্যে এসআইআর নিয়ে টালবাহানার মধ্যে আবারও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। সম্প্রতি বিজেপির এক সভা থেকে তিনি মন্তব্য করেন, “তিনি নাকি ৭ লক্ষ ভোটে জিতেছেন। জানেন, ৯০০-র বেশি বুথে সেলোটেপ লাগানো ছিল। প্রতি বুথে ৮ জন করে পোলিং এজেন্ট, আর বাইরে ছিল জাহাঙ্গির বাহিনী। আপনি যদি গিয়ে ভিতর থেকে চিৎকার করেন, যে আমি পদ্মফুল বা অন্য কোনও প্রতীক খুঁজে পাচ্ছি না, তাহলে আপনি যখন বুথ থেকে বেরোবেন, তখনই মারবে। আবার যদি নাও টেপেন, শব্দ না হয়, তাও মারবে। এই করে সাত লক্ষ ভোটে জিতেছে।” সব মিলিয়ে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগে সরগরম বঙ্গ রাজনীতি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উত্তাপ যে আরও বাড়বে তা এখনই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
শুভেন্দু গড়ে ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া অভিষেক, তমলুক ও বারাসত নিয়ে আজ বৈঠকে বসছেন

বর্তমানে সংসদে তৃণমূলের চিফ হুইপের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে স্বভাবতই ব্যস্ততা বেড়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু তার মধ্যেও ২৬শে বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নতুন করে দলের সংগঠন সাজাতে তৎপর তিনি। আর সেই উদ্দেশ্যেই প্রতি সপ্তাহে এক একটা জেলা ধরে ধরে তাদের নেতৃত্বদের সঙ্গে নিজে বৈঠকে বসছেন তৃণমূলের এই সেকেন্ড-ইন কমান্ড। সেই বৈঠকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে যেমন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, তেমনই আগামী নির্বাচনের রণকৌশলও তৈরি করে দিচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেননা ২৬শে নির্বাচনের আগে দলের সংগঠনকে আরও মজবুত করতে না পারলে বিজেপির সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যে মোটেও সহজ হবে না, তা ভালো মতোই জানেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আর তাই জেলা স্তরের নেতারাদের সঙ্গে কথা বলে সাংগঠনিক খামতি পূরণে মরিয়া তিনি। কেননা বিজেপিকে এই রাজ্যে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে যে চ্যালেঞ্জ তিনি নিয়েছিলেন তা কার্যকর করতে হলে সবার আগে তৃণমূল স্তরের সংগঠনকে যে আরও শক্তিশালী করতে হবে তা ভালো মতোই জানেন অভিষেক। তাই জেলা স্তরের নেতারা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে তাই নিয়ম মাফিক ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে জেলা স্তরের নেতারাদের নিয়ে মিটিং সারছেন তিনি। গত সপ্তাহে মালদা ও মুর্শিদাবাদ নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠকের পর আজ, অর্থাৎ মঙ্গলবার অভিষেক ডেকে পাঠিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক সাংগঠনিক কেন্দ্রের নেতৃত্বদের। সেই সঙ্গে আজ ক্যামাক স্ট্রিটের বৈঠক থাকবেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বও। এই বৈঠকে থাকার কথা দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিরও। সব মিলিয়ে আজকের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পূর্ব মেদিনীপুর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় নামে পরিচিত। এখানেই গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন শুভেন্দু। এমনকী গত লোকসভা নির্বাচনেও এই জেলার ১৪টির মধ্যে ১৩টি বিধানসভাতেই তৃণমূল হেরে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে বঙ্গ রাজনীতির হাইভোল্টজ কেন্দ্র বলেই পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুর। তাছাড়া এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং দলের একাংশের বিরোধী দলের সঙ্গে যোগসাজশ রাখা নিয়ে মাঝেমধ্যেই অভিযোগ ওঠে। সেসব নিয়েই আজ বৈঠকে বসছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। শুভেন্দুর গড়ে ঘাসফুল ফোটাতে জেলা নেতৃত্বকে কী বার্তা দেন অভিষেক সেদিকেই নজর সকলের। পাশাপাশি বারাসতের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র নিয়েও নতুন কী রণকৌশল সাজান অভিষেক তা নিয়েও কৌতূহলী রাজনৈতিক মহল। কেননা এই কেন্দ্র থেকে নানান সময়ে নাগরিক পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ সামনে এসেছে। ফলে এসবের বিরুদ্ধে জেলা নেতৃত্বকে কী দাওয়াই দেন অভিষেক, তাও তাৎপর্যপূর্ণ। গতকালই দিল্লি থেকে ফিরেই আজ হাইভোল্টজ বৈঠকে বসছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। এর থেকেই স্পষ্ট যে নির্বাচনের আগে নতুন করে বিজেপির বিরুদ্ধে রণকৌশল তৈরিতে তৎপর তৃণমূল। কেননা ২৬শে বিজেপির বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে সহজ জয় হাসিল করাই যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই লক্ষ্যের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার, পার্ক স্ট্রিটে অবস্থান বিক্ষোভ শুভেন্দুর

আরজি করের চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণ কাণ্ডের একবছর পূর্ণ হল। কিন্তু বছর ঘুরলেও তাঁর মেয়ে ন্যায় বিচার পায়নি বলে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বারবার সরব হয়েছেন অভয়ার বাবা-মা। এমনকী গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গেও দেখা করতে যান। কিন্তু অমিত শাহ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় সাক্ষাৎ হয়নি। পরে সিবিআই ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করে একপ্রকার হতাশা নিয়েই কলকাতায় ফেরে অভয়ার বাবা-মা। এই আবহে আজ শনিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অভিযান ঘিরেই এবার রণক্ষেত্রে পরিণত হল মহানগরী। এই আবহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করলেন, আরজি করে নির্যাতিতার মা-বাবার ওপর লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। পার্ক স্ট্রিট থেকে ডোরিনা ক্রসিং, হাওড়া ময়দান থেকে সাঁতরাগাছিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এদিকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে নবান্ন অভিযানের শুরুতেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বাধা দেয় পুলিশ। এরপর নির্যাতিতার মা-বাবার ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় বসে পড়ে প্রতিবাদ শুরু করেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনকী নবান্ন অভিযানে গিয়ে পুলিশের লাঠিতে মাথা ফেটেছে বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক যুব নেতা প্রিয়াংগু পান্ডের। আহত হয়েছে বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক। বিজেপির তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশের লাঠির আঘাতে নির্যাতিতার মায়ের কপালে চোট লেগেছে। তাঁর কপাল ফুলে গিয়েছে। এদিন নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন অভয়ার বাবা-মা। যদিও এই অভিযানে শুভেন্দু অধিকারীর নাম জড়িয়ে পড়ায় জুনিয়র ডাক্তারদের তরফ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। শনিবার পরিকল্পনা মাফিক ধর্মতলা থেকে প্রতিবাদীদের একটি মিছিল নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেই মিছিলেই সামনের সারিতে ছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। কিন্তু পার্কস্ট্রিট মোড়েই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। তার কিছুক্ষণ পরেই আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। সেই সময়েই নির্যাতিতার মা আঘাত পান বলে দাবি করা হচ্ছে। অন্যদিকে নির্যতিতার বাবার দাবি, “আমরা যে গাড়িতে করে আসছিলাম, তার নম্বর সব জায়গা দেওয়া হয়েছে। আমাদের গাড়ি বার বার আটকানো হয়েছে। বলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি করে এখানে পৌঁছেছি। হাই কোর্ট শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দিয়েছে। তার পরেও বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করেছে পুলিশ।’ অভয়ার বাবার সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল আটকাতে পুলিশ যেভাবে ব্যারিকেড দিয়েছে, যেভাবে নিরীহদের উপর পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে তাতেই স্পষ্ট যে মুখ্যমন্ত্রী মানবিক নন। তিনিও চান না অভয়া বিচার পাক। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়েছেন।”
‘চেয়ার ফেলে পালিয়েছেন মাননীয়া’— শুভেন্দু

“শহর ছেড়ে পালিয়েছেন মাননীয়া, কিন্তু চেয়ারটা তো রয়ে গেছে।” বুধবার ঠিক এভাবেই নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর তারপর থেকেই কার্যত তোলপাড় শুরু হয়ে যায় বঙ্গ রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ঠিক কাকে ইঙ্গিত করলেন তিনি? তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? আসলে ৯ আগস্ট অভয়া কাণ্ডের এক বছর বর্ষপূর্তিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন অভয়ার বাবা-মা এবং তার পরিবার। ইতিমধ্যেই এই অভিযান নিয়ে অটোসাটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে রাখতে বলা হয়েছে রাজ্যের তরফে। যদিও বুধবারই ‘জনজীবন ব্যাহত হতে পারে’ এই দাবি জানিয়ে অরাজনৈতিক অভিযানের বিরোধিতা করে হাওড়ার এক ব্যক্তি ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সে মামলার শুনানি হতে পারে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সুজয় পালের এজলাসে। রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ন্যায় বিচারের দাবি জানাতে এই অভিযানের ডাক দিয়েছেন অভয়ার পরিবার। তবে সরকারি কর্মসূচিতে আপাতত ঝাড়গ্রামে আছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারীর মতে ৯ আগস্টকে ভয় পেয়ে কলকাতার বাইরে চলে গিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। আর তা নিয়ে কটাক্ষ করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা নিজের সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “ডাক্তার বোনের উপর শারীরিক অত্যাচার এবং তাঁর মৃত্যুর জন্য প্রধান দায়ী, অভয়ার মা-বাবাকে এত ভয় পেয়েছেন যে, নিজে ভয়ে ঝাড়গ্রাম পালিয়েছেন, আর গোটা রাজ্যের পুলিশকে হাওড়ার নীল বাড়ি রক্ষা করতে পথে নামাচ্ছেন” এমনকী বিরোধী দলনেতার মতে, অভয়ার বাবা-মা ও তাঁর পরিবারকে ভয় পেয়েই আগেভাগে কলকাতা ছেড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী তার সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও লেখেন, “ভয়ে আগেভাগেই ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক কর্মসূচির অজুহাতে একেবারে শহর ছেড়ে পালিয়েছেন মাননীয়া! কিন্তু চেয়ারটা তো রয়ে গেছে হাওড়ার নীল বাড়ির চৌদ্দ তলায়, সেটা না কেউ টলিয়ে দেয় ওনার অবর্তমানে।”
‘ঘরে বসে থাকব না’— উদয়ন গুহ

কোচবিহারের খাগড়াবাড়িতে আক্রান্ত হয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়। কালো পতাকা দেখানোর পাশাপাশি বুলেট প্রুফ গাড়িতে ইট, এমনকি পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী উদয়ন গুহকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তবে শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে ‘খুনী’ বলে আক্রমণ করলেও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে নারাজ উদয়ন গুহ। বরং শুভেন্দু অধিকারীর মত ‘বাংলা বিরোধী’রা কোচবিহারে আসলে এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে, তার একটা আগাম ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন উদয়ন গুহ। রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী স্পষ্ট বললেন, “এতদিন তৃণমূল আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করেছেন, আমরা সেটা গণতান্ত্রিকভাবে মেনে নিয়েছি। কিন্তু বাংলা ভাষা, বাঙালি আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের মুখের ভাষা আমাদের মাতৃভাষা যদি আক্রান্ত হয়, তৃণমূল কর্মীরা চুপ থাকবে না। বাঙালি হিসেবে আমরা কেউ ঘরে বসে থাকব না। ওদের ভাষাতেই এসব মূর্খদের বুঝিয়ে দেব। খুব স্পষ্ট করে বলছি, বাংলা ভাষাকে অপমান করলে, আক্রমণ করলে, আমি ঘরে বসে থাকব না। মনে রাখতে হবে বাঙালিদের আক্রমণ করলে নিস্তার নেই।”
‘পুলিশ আর উদয়ন গুহ মিলে আমাকে খুন করতে চেয়েছিল’— শুভেন্দু

একদিকে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী, অপরদিকে সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁকে খুন করার অভিযোগ তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার কোচবিহারে এসপি অফিস অভিযানে যোগ দিতে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাগডোগরা থেকে সরাসরি গাড়িতে কোচবিহার যাওয়ার পথে একাধিক জায়গায় তাঁর কনভয় আটকে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মীরা। তবে অশান্তি শুরু হয় বিরোধী দলনেতার কনভয় খাগড়াবাড়ি পৌঁছতে। হাতে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে লক্ষ্য করে ‘চোর চোর’ স্লোগান দেওয়া হয়। দেখানো হয় কালো পতাকা। পুলিশের সামনেই বিজেপি নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট, ভাঙে কাচ। এরপরই সরাসরি জেলা পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে শুভেন্দু বলেন, “আমাকে মেরে ফেলার জন্য এগুলো করা হয়েছে। সবটাই হয়েছে পুলিশের সামনে। আসলে পুলিশ বিরোধী দলনেতাকে খুন করতে চেয়েছিল। আমাকে খুন করতে চাওয়ার পরোক্ষ আসামি এই জেলার পুলিশ সুপার।” তবে শুধু কোচবিহার জেলা পুলিশ নয়, গোটা ঘটনায় কোচবিহার জেলার দিনহাটার বিধায়ক এবং রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদায়ন গুহকেও কার্যত খুনী বলে তোপ দাগেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, “খুনের মামলার প্রত্যক্ষ আসামি উদয়ন গুহ। এই ঘটনা প্রমাণিত যে আমাকে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের দিয়ে এই কাজ করিয়েছে উদয়ন গুহ। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা নিয়ে এসে আমাকে খুন করতে চেয়েছে।” অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বিজেপি নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট, ভাঙে কাচ। গোটা ঘটনার পিছনে নাম না করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদককে দায়ী করে শুভেন্দু বলেন, “আসলে ভাইপোর নির্দেশে এই কাজটা করানো হয়েছে।” তবে এই আক্রমণের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তা স্পষ্ট করে দিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, “আর যদি পুলিশের গাড়িতে না থাকতাম তাহলে আপনাদের সঙ্গে আমার দেখা হত না আমাকে দেখতে মর্গ যেতে হত।”
‘মমতাকে এবার ভবানীপুরে হারাব’— শুভেন্দু অধিকারী

ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর চ্যালেঞ্জ দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে এবার আর নন্দীগ্রাম নয়, লক্ষ্য— ভবানীপুর। এবার কি তবে হাইভোল্টেজ লড়াই হতে চলেছে ভবানীপুরে? মঙ্গলবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রামের পর খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় ভবানীপুরেই তাঁকে হারানোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিরোধী দলনেতার স্পষ্ট বক্তব্য, “মমতাকে আমি নন্দীগ্রামে হারিয়েছি, এবার ২০২৬ এ ভবানীপুর হারাব।” প্রসঙ্গত ২০২১ সালে নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে ১৯৫৬ ভোটে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী ১,১০,৭৬৪ টি ভোট পান, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পান ১ লক্ষ ৮ হাজার ৮০৮টি ভোট, শতাংশ হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী পান ৪৮. ৪৯ শতাংশ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পান ৪৭. ৬৪ শতাংশ ভোট। অপরদিকে ওই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ভবানীপুর থেকে তৃণমূল প্রার্থী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভোট পান ৮৫,২৬৩ টি ভোট। অপরদিকে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল পান ২৬,৪২৮টি ভোট। এদিন শুভেন্দু বার্তা দেন, “আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। তৃণমূলের মালিককে হারিয়েছি মনে রাখবেন। শুভেন্দু অধিকারীকে ভয় দেখানো যাবে না। যখন সিপিএমের সময় , সিপিএম যখন ২৩৫ তখন লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়েছি।”
কল্যাণের ঢালাও প্রশংসা শুভেন্দুর, অন্য কিছুর ইঙ্গিত কী?

অভিষেকের থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক বড় রাজনীতিবিদ। উত্তরে দাঁড়িয়ে এভাবেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত প্রশংসা করতে শোনা গেল শুভেন্দু অধিকারীর মুখে। সোমবার দলীয় সাংসদদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই লোকসভার দলীয় সাংসদদের পারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। লোকসভায় দল পরিচালনার বিষয়ে তিনি যে আদৌ খুশি নন, ওই বৈঠকেই তা স্পষ্ট করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভার তৃণমূলের দলনেতা হিসেবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেন। তবে লোকসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষোভ থাকলেও শেষ পর্যন্ত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই বর্তায় মুখ্য সচেতকের দায়িত্ব। তবে সেই দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে সঙ্গে সঙ্গেই সেই পদ ছেড়ে দেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। এখানেই থেমে থাকেননি, দলের এমনকী দলনেত্রীর বিরুদ্ধে পর্যন্ত মুখ খোলেন তিনি। আর এই মুহূর্তে ‘বিদ্রোহী’ কল্যাণের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল বিরোধী দলনেতাকে। মঙ্গলবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকদিন ধরে রাজনীতি করছেন। তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষিত মানুষ। এটা ঠিক মাঝে মাঝে উনার ভাষা নিয়ে কিছু সমস্যা হয়, কিন্তু কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করা ঠিক না। রাজনীতিবিদ হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে অনেক এগিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।” এর আগেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘হেলিকপ্টার লিডার’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন শুভেন্দু। এদিনও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে একইভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা। বললেন, “ভাইপো ২০১১ সালের পর রাজনীতিতে এসেছে। ২০১১ সালে যখন আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সরকার বদল করি, তখন দিল্লি থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ভাইপোকে আমদানি করে। ওর একমাত্র পরিচয় যে ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সুপ্রিমোর ভাইপো। ২০১১ সালের আগে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আইনগতভাবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা বড় ভূমিকা আছে। সেটা অস্বীকার করা যাবে না।”
বিধানসভা ভোটের আগে পাহাড় রাজনীতিতে কি নতুন সমীকরণ?

পাহাড় রাজনীতির দুই অতি পরিচিত মুখ বিমল গুরুং ও রোশন গিরি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এই দুই নেতা। পাহাড় ও ডুয়ার্সের ভোট রাজনীতিতে বিমল গুরুং এখনও যথেষ্ট বড় ফ্যাক্টর। তাই ২০২৬ বিধানসভার আগে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এই বৈঠককে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে বিজেপির সঙ্গে গুরুংয়ের সম্পর্ক নতুন নয়। ২০০৭ সাল থেকে পাহাড়ে বিজেপির উত্থানের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল গুরুংয়ের। বিশেষ করে দার্জিলিং লোকসভা আসনে বিজেপির একাধিকবার জয়ের পিছনেও যে গুরুং বড় ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করেছিল, তা সর্বজনবিধিত। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ২০১৭ সালে পাহাড়ে অশান্তির সময় গুরুংকে একাধিক মামলায় ফাঁসানো হয়। সে সময় একপ্রকার অন্তর্ধানেই ছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় আত্মগোপন করে থাকার পর ২০২০ সালে কলকাতায় এসে তৃণমূলকে প্রকাশ্যেই সমর্থনের বার্তা দেন তিনি। এমনকি ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট এবং পরবর্তীতে দার্জিলিং পুরনির্বাচনে তাঁর দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়েই নির্বাচন লড়ে। কিন্তু ভোটের ফল আশানুরূপ হয়নি। এরপর ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে আবারও বিজেপিকে সমর্থন জানায় বিমল গুরুংয়ের দল। সে সময় শুভেন্দু অধিকারীর সভায় এসে বিজেপিকে সমর্থনের কথা জানিয়েও ছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সর্বময় নেতা। কিন্তু পাহাড়ে লোকসভা ভোটের ফলে তার তেমন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। তবে ফের আরও একটা বিধানসভা নির্বাচনের আগে বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিমল গুরুং এবং রোশন গিরির এই বৈঠক নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা দানা বাঁধছে। যদিও এই বৈঠক শেষে কোনও পক্ষ থেকেই সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু এটা যে নেহাতই সৌজন্য সাক্ষাত নয়, তা রাজনৈতিক মহলে স্পষ্ট। তবে কি ২০২৬-এর বিধানসভাকে মাথায় রেখে পাহাড় রাজনীতির নতুন কোনও সমীকরণ তৈরিতেই এদিনের বৈঠক—এই প্রশ্নের উত্তর তো ভবিষ্যতই বলবে। আপাতত গুরুংয়ের নেতৃত্বে পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা যে তাদের হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া তা স্পষ্ট।
‘আগে কর্মচারীদের ডিএ-টা মেটান’—শুভেন্দু অধিকারী

বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোরে পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে পুজোর অনুদান ২৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। গতবার পুজোর অনুদান বাবদ ৮৫ হাজার টাকা থাকলেও, এবছর তা বাড়িয়ে করা হল ১ লক্ষ্য ১০ হাজার টাকা। সাথে বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই পুজো অনুদান বৃদ্ধি নিয়ে বিধানসভার সামনে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন বিরোধী দলনেতা বলেন, “১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা কেন, পারলে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিন। কিন্তু তার আগে কর্মচারীদের ডিএ-র টাকাটা মেটান।” পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, “আগে চাকরি দিন। রাজ্য প্রায় ৬ লক্ষ পদ আছে সেই পদগুলো পূরণ করুন। আশা কর্মী, আইসিডিএস, কন্ট্রাকচুয়াল, সিভিক ভলেন্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এদের বেতন বাড়ান। তারপর যা ইচ্ছা তাই করুন।” শুভেন্দুর আরও সংযোজন, “দেখতে থাকুন, এবার উনি ইমাম মোয়াজ্জেমদের ভাতাও ৫০০ টাকা করে বাড়িয়ে দেবে।”