শ্রাবণ মানেই ভরা ইলিশের মরসুম। বাঙালি পাত আলো করে থাকে এই রুপোলি শস্য। কিন্তু এবার অর্ধেক শ্রাবণ পেরিয়ে গেলেও সেভাবে দেখা মেলেনি ইলিশের। বাজারে যা মিলছে তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়, ফলে দামও আকাশছোঁয়া। কিন্তু কবে সাধারণ বাঙালিদের নাগালের মধ্যে আসবে তাদের রসনা তৃপ্তির সুস্বাদু এই মাছ, তা নিয়ে আপাতত হাপিত্যেস রাজ্যবাসী। এমনিতেই গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে ছাত্র অভ্যুত্থানের ফলে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পদ্মার ইলিশ আমদানি একপ্রকার বন্ধ। স্বাভাবিক ভাবেই কোলাঘাট, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা, কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ ও দীঘার উপরই ভরসা করতে হচ্ছে রাজ্যবাসীকে। কিন্তু সেখানেও যে ইলিশের আকাল। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত জোগান না থাকায় বাজারে চড়চড়িয়ে বাড়ছে ইলিশের দামও। কলকাতার মানিকতলা, গড়িয়াহাট ও লেক মার্কেটের মতো জনপ্রিয় বাজারগুলোতে ৫০০ গ্রামের ওপরের ইলিশ বিকোচ্ছে বারোশো থেকে পনেরোশো টাকায়। স্বাভাবিক ভাবেই এখনও মধ্যবিত্ত বাঙালিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে তাদের প্রিয় মাছের দাম। অবশ্য ইলিশের এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত জোগানের অভাবকেই দায়ী করছেন মাছ বিক্রেতাদের একাংশ। অন্যদিকে রাজ্যে লাগাতার নিম্নচাপের জেরে জেলেরাও ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যেতে পারেনি। সেকারণেই এতটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির। এমনকী ডায়মন্ড হারবার নগেন্দ্র বাজার পাইকারি বাজার পরিচালন সমিতির সদস্যদের অভিমত অনেকটা সেরকমই। তবে শীঘ্রই এই পরিস্থিতি বদলানোর আশা করছেন সকলেই।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকেই সবুজ সংকেত মিলতে নতুন করে ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যাওয়ার তোড়জোড়ও ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে জেলেরা। আগামী কয়েক দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টির জেরে সাগর থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল তাদের। তবে গত সপ্তাহে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মধ্যেও ৪০০ টন ইলিশ নিয়ে ফিরেছিল মৎস্যজীবীরা। হাওয়া অফিসের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আপাতত বঙ্গের আকাশে নিম্নচাপের কোনও সম্ভাবনা নেই। আগামী বৃষ্টি আরও কমবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা। ফলে পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় মৎসজীবীরাও আশাবাদী ট্রলার ভর্তি করে ইলিশ নিয়েই সমুদ্র থেকে ফিরবেন তারা। ফলে আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহের দিকে ছবিটা কিছুটা বদলালেও বদলাতে পারে। কেননা বাজারে ইলিশের পর্যাপ্ত জোগান বাড়লে দামও কিছুটা মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে আসবে— সেই আশায় আপাতত হাপিত্যেস হয়ে দিন গুনছে মৎস্য প্রিয় বাঙালি।







