তীর্থযাত্রীদের ‘জলকর’? শ্রাবণী মেলায় ‘জিজিয়া’ তুল্য ফি নিয়ে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ সুকান্তর। তারকেশ্বরের বাবার মাথায় জল ঢালতে যাওয়া পুর্ণার্থীদের জল তোলার আগে গঙ্গায় চান করলেই দিতে হচ্ছে জিজিয়া কর। এমনই অভিযোগ করেছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি। হুগলির তারকেশ্বরে শ্রাবণ মাসে শুরু হয়েছে এক মাসব্যাপী শ্রাবণী মেলা। শিবভক্তদের বাঁকে করে গঙ্গাজল নিয়ে বহু কিলোমিটার হেঁটে তারকেশ্বর মন্দিরে জল ঢালার সেই বহুযুগের প্রথা নিয়ে এবার রাজনৈতিক বিতর্ক। শনিবার রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন, “পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জনপ্রতি ১০ টাকা করে ‘ফি’ আদায় করছে। গঙ্গাস্নানের জন্য ফি নেওয়া হচ্ছে। এ যেন ‘জিজিয়া কর’! হিন্দুদের ধর্মাচরণে কর চাপাচ্ছে তৃণমূল সরকার।”
টুইট করে সুকান্তর প্রশ্ন, “এটা কি নিছক রাজস্ব আদায়, না কি বাঙালি হিন্দুদের উদ্দেশ্যে এক নিঃশব্দ বার্তা যে ধর্মাচরণও এখন করযোগ্য?”
তাঁর অভিযোগ, “বৈদ্যবাটীর নিমাই তীর্থ ঘাট থেকে গঙ্গাজল সংগ্রহের সময় এই অর্থ নেওয়া হচ্ছে। শুধু এতেই থেমে থাকছে না, তোলাবাজি শুরু হয়ে গিয়েছে। সাধারণ ভক্তরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এটা প্রশাসনের নামে একপ্রকার চাঁদাবাজি,” বলেও দাবি তাঁর। প্রশাসন সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, রাজ্য সরকার কোনও বাধ্যতামূলক ফি চাপায়নি। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, পানীয় জল, স্বাস্থ্যপরিষেবা, থাকার ব্যবস্থা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নিয়েছে। ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে, চলছে সিসিটিভি-র মাধ্যমে নজরদারি। হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে বৈঠক করেছেন, যাতে ভক্তদের কোনও অসুবিধা না হয়। বহু সংগঠন বিনামূল্যে খাওয়া, চিকিৎসা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছে। তাঁদের দাবি, কোনও বাধ্যতামূলক ‘জলকর’ নেই। কিছু ঘাটে সাফাই ও পরিষেবার খরচ মেটাতে ভক্তদের থেকে স্বেচ্ছায় সামান্য অনুদান নেওয়া হয়ে থাকে, যা বহু বছর ধরেই প্রচলিত।
তবে, বিজেপি এই ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে ‘হিন্দু-বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রচার শুরু করেছে। তৃণমূল এখনও পর্যন্ত সুকান্তর অভিযোগের সরাসরি উত্তর দেয়নি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, পরিযায়ী বাঙালি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যখন তৃণমূল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে, তখন পাল্টা ধর্মীয় ইস্যু তুলে বিজেপি রাজ্য সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে। ২০২৬-এর ভোটের আগে রাজ্যে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।







