পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প ‘স্বাস্থ্য সাথী’। এই প্রকল্পের ধাঁচেই ২০১৮ সালে সারা দেশে ঘটা করেই ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প চালু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাধারণ নাগরিকদের কাছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পান গ্রাহক। এ পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৪১ কোটি ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এই সুবিধা পেতে রয়েছে নানা কঠোর বিধিনিষেধও, যার ফলে অনেক সাধারণ মানুষ এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের বাইরে রয়েছে।
এবার মুখ থুবড়ে পড়ল প্রধানমন্ত্রীর আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত ১.২১ লক্ষ কোটি টাকার বকেয়া বাকি। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই টাকা পাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। যার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রকল্পের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে তারা। ফলে প্রতি বছর ব্যাপকভাবে কমছে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে নথিভুক্ত হাসপাতালের সংখ্যা। যার জেরে সাধারণ মানুষও বঞ্চিত হচ্ছে এই পরিষেবা থেকে। এই সমস্যার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের গা-ছাড়া মানসিকতাকেই দায়ী করে ডাক্তারদের সংগঠন আইএমএ(IMA) জানাচ্ছে, “মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ১৫ দিনের মধ্যে চিকিৎসার খরচ পাওয়া যাচ্ছে। বাকি টাকা পেতে মাসের পর মাস ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৬৭ লক্ষ রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার পরও টাকা পায়নি হাসপাতালগুলি। যার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি এই প্রকল্প থেকে।” আইএমএ সূত্রে দাবি, এমনিতেই সাধারণ চিকিৎসা খরচের তুলনায় অনেক কম টাকায় এই প্রকল্পে পরিষেবা দিতে হয় হাসপাতালগুলোকে, তারপরও যদি সেই টাকা পেতে এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় সেক্ষেত্রে এই পরিষেবা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে অসুবিধার।
আইএমএ-র এই রিপোর্ট সামনে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই আসরে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। সোস্যাল সাইটে ‘স্বাস্থ্য সাথী’র পরিসংখ্যান তুলে ধরে কেন্দ্রকে নিশানা করেছে তারা। এতদিন রাজ্য বিজেপির তরফ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল যে, রাজ্য সরকার ইচ্ছে করেই ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মতো একটি জনমুখী প্রকল্পকে পশ্চিমবঙ্গে চালু করতে দিচ্ছে না। তারই পাল্টা জবাবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ‘স্বাস্থ্য সাথী’র পরিসংখ্যান তুলে দাবি করা হয়েছে, “বাংলা ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মতো সীমিত সুবিধার প্রকল্পে আগ্রহী হবে কেন, যেখানে রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিলেই সফলভাবে ‘স্বাস্থ্য সাথী’ চালাচ্ছে। ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পে ২.৪৫ কোটি পরিবারের ৮.৫১ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পান। ৮৫ লক্ষের বেশি উপভোক্তা ১১,০৯৮.৪৬ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চিকিৎসা পেয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় ৬,০০০ রোগী এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন।”







