বঙ্গ বিজেপি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা : ফিরহাদ

একুশের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন ফিরহাদ হাকিম। সপ্তাহের শুরুতেই কলকাতা কার্যত জন-অরণ্যে পরিণত হয়েছে। ধর্মতলার রাস্তা একপ্রকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের দখলে। আর এই ভরা সভা থেকেই গেরুয়া শিবিরকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে ফিরহাদ বলেন,”বাংলায় বেশি লাফালাফি করছে বিজেপি। মনে রাখবেন বঙ্গ বিজেপি আসলে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা।” এখানেই শেষ নয়, বিজেপির কারণে গোটা রাজ্যে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মত ফিরহাদের, তিনি বলেন, “রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে বিজেপি। গোটা দেশে বাঙালিদের নির্যাতন করা হচ্ছে বিজেপির কারণে। বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি বলে অত্যাচার করা হচ্ছে।” এদিন তার ভাষণে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের কথাও উঠে আসে। তিনি বলেন,”আমরা সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরে লড়াই করেছি। সেসব যেন না ভুলে যাই।” এদিন বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমকেও তীব্র আক্রমণ শানিয়ে ফিরহাদ বলেন, “আমরা সিপিআইএমের সঙ্গে লড়াই করেছি। মনে রাখতে হবে আজ শহীদদের রক্তেই বাংলা সিপিআইএম মুক্ত।”
দিল্লির চোখও মমতার সভায়

২১-এর মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী ঠিক কী বার্তা দেন? তা নিয়ে আগ্রহ দিল্লির অন্দরেও। এমনকী জাতীয় রাজনীতিতেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আজকের এই সভা। এককথায় বিজেপি-বাম-কংগ্রেস-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলই তাকিয়ে রয়েছেন আজ একুশের দিকে। হাতে আর মাত্র কয়েকমাস। সব ঠিক থাকলে ২০২৬-এর মে-জুন মাস নাগাদ রাজ্যে নির্বাচন। অর্থাৎ আগামী বছর বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ২১শে জুলাই। আর তাই এবারের সভায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি নিতে পারে তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে দিল্লির রাজনৈতিক অলিন্দেও। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের একটা প্রাথমিক রূপরেখা ধর্মতলার মঞ্চ থেকেই তৃণমূল নেত্রী ঠিক করে দেবেন। ইতিমধ্যেই নিজেদের ‘আঞ্চলিক’ তকমা থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় সর্বভারতীয় দলের মর্যাদা পেতে মরিয়া রাজ্যের শাসক দল। মেঘালয়ে কংগ্রেস ভেঙে মুকুল সাংমার হাত ধরে কিছুটা মুখ রক্ষা হলেও, ত্রিপুরা, অসম, কেরল, গোয়াতে রীতিমত হতাশাজনক ফলাফল হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দলের। তাই আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে তৃণমূলের ভূমিকা কী হতে চলেছে, সেই প্রশ্নের উত্তরও আজই মিলবে বলেই মনে করছে শাসক-বিরোধী দুই রাজনৈতিক শিবির। তবে প্রতি বছরের মতো এই মঞ্চ থেকে বিজেপিকে এক ইঞ্চি জায়গাও যে তৃণমূল নেত্রী ছাড়বেন না, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত বিজেপি শিবির। তাই বিধানসভার আগে আগে মমতার আক্রমণ ঠিক কীভাবে সামলাবে? তার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরও। বিজেপির সোশাল মিডিয়া সেল ইতিমধ্যেই এ নিয়ে তৎপর। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের ক্লিপিংস কেটে নিয়ে পালটা অভিযোগ, তীব্র আক্রমণ করার নির্দেশও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপির রাজ্যস্তরের তো বটেই, অনেক জাতীয় স্তরের নেতাদেরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে বলেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব । তবে শুধু বিজেপি নয়, অন্যদিকে, জাতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, বলা ভালো ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূল কংগ্রেসের উপস্থিতি কতটা সক্রিয় থাকবে, সেই উত্তরও মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ থেকে স্পষ্ট হবে বলেই মনে করছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে মমতার ভাষণের সমালোচনা করা হলেও জাতীয় স্তরের নেতারা তা থেকে বিরত থাকবেন বলেই সূত্রের খবর। সদ্য ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভার্চুয়াল বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি ও সক্রিয় ভূমিকা পালনের পরে সংসদে কংগ্রস ও তৃণমূলের মধ্যে সমন্বয় থাকবে বলেই তাঁরা আশা করছেন। যা বিজেপিকে কোণঠাসা করার জন্য প্রয়োজনীয় বলেই মত কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের।
২১শে জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের সভা, ভিড় এড়াতে কোন রাস্তায় যাবেন

আজ ২১শে জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের শহীদ সমাবেশ। ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের এই মেগা ইভেন্ট ঘিরে যে কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক জমায়েত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীরা আসতে শুরু করে দিয়েছেন। যদিও এই সমাবেশ ঘিরে কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের এই ভিড়ে নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কলকাতা পুলিশের কাছে। কলকাতা পুলিশের তরফ থেকেও যা ব্যবস্থা নেওয়ার ইতিপূর্বেই তা নেওয়া। জারি হয়েছে একাধিক বিধিনিষেধ। কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার নেতৃত্বে সকাল থেকেই সক্রিয় পুলিশ। অন্যদিকে আজকে সপ্তাহের প্রথম দিন হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে পারে সাধারণ মানুষ। অফিসযাত্রী থেকে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা তাই স্বাভাবিক ভাবেই ধন্দে আছেন কোথায় জ্যামের কবলে পড়তে হয় এটা ভেবে। যদিও এই হেভিওয়েট সভা ঘিরে বিপুল মানুষের সমাবেশে ভিড় এড়ানোটা সত্যি চাপের। তবু জেনে নেওয়া ভালো কোন কোন রাস্তায় আজ ভুলে পা দেবেন না। আজ শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট সাতটি বড় মিছিল রওনা দেবে ধর্মতলার উদ্দেশে। শ্যামবাজার মোড়, হাজরা পার্ক, হেদুয়া পার্ক, পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট, হাওড়া, শিয়ালদহ ও কলকাতা স্টেশন থেকে একে একে শুরু হবে মিছিল। শ্যামবাজার মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিল এগোবে বিধান সরণি, কলেজ স্ট্রিট, এনসি স্ট্রিট, জিসি অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে ধর্মতলায় পৌঁছবে। হাজরা পার্কের মিছিল যাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, এক্সাইড মোড়, জেএন রোড ধরে ধর্মতলায়। অন্যদিকে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট থেকে মিছিল এগোবে পার্ক স্ট্রিট, মল্লিকবাজার, এজেসি বোস রোড, মৌলালি মোড়, এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে সভাস্থলের দিকে। এই রাস্তাগুলি ছাড়া শহরের বাকি রাস্তায় তেমন যানজটের আশঙ্কা নেই। দিনের বেশ কিছুটা সময় ট্রাক ও ভারী যান চলবে না শহরে। ফলে মিছিল ধর্মতলায় পৌঁছে গেলে, মোটের উপর রাস্তা ফাঁকাই থাকবে।