‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক স্ট্যালিনের রাজ্যেই এবার বাংলার শ্রমিকের মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা

ভিন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় সরগরম বঙ্গ রাজনীতি। রাজ্যের শাসক দল এই ইস্যুতে বিজেপির বাংলা বিরোধিতাকে হাতিয়ার করে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ইস্যুতে রাস্তায় নেমে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু এবার বাংলার পরিযায়ী শ্রমিককে খুন করার অভিযোগ উঠল ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যতম শরিক স্ট্যালিনের রাজ্যে। মুর্শিদাবাদের সাদ্দাম হোসেন নামে এক পরিযায়ী শ্রমিকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। তার পরিবারের অভিযোগ, সাদ্দামকে খুন করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার স্বরূপনগরের বাসিন্দা বছর চব্বিশের সাদ্দাম মাস তিনেক আগে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে যান। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। মঙ্গলবার সমাজ মাধ্যমে তাঁর ঝুলন্ত দেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে তার পরিবার। তার পরিবার সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, সোমবার সন্ধেবেলাও মা ও স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সাদ্দাম। রাতে তাঁর স্ত্রী একাধিকবার ফোন করলেও সাদ্দাম ফোন ধরেনি। মঙ্গলবার ওই পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পায় তার পরিবার। সাদ্দামের মা জানান, “ছেলে সোমবার সন্ধেবেলা আমায় ফোন করে বলল, মা আমি আজ টাকা পেয়েছি। কিন্তু, ব্যাঙ্কে টাকা পাঠাতে পারছি না। আমায় আধার কার্ডের ডেরক্স পাঠিয়ে দাও। তারপর আর কথা হয়নি।” অন্যদিকে সাদ্দামের স্ত্রীর দাবি, “সোমবার রাতে আমি কয়েকবার ফোন করার চেষ্টা করেছিলাম। একবার ফোন ধরেও কেটে দেয়। আর ফোন ধরেনি। আমরা তখন ঘুমিয়ে পড়ি।” মঙ্গলবার ঠিকাদার ফোন করে সাদ্দামের মৃত্যুর খবর জানায়। সাদ্দামের ঝুলন্ত দেহের ছবিও পাঠায়। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সাদ্দামের পা মাটিতে লেগে রয়েছে। আর সেটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তার পরিবার এবং প্রতিবেশীরা। আত্মহত্যার তত্ত্বকে নস্যাৎ করে তাদের দাবি, সাদ্দাম খুন করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর পুলিশ ইতিমধ্যেই বডি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। ময়নাতদন্তের পরই সবটা পরিষ্কার হবে। অন্যদিকে সাদ্দামের পরিবার তার দেহকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছে।
আবারও তামিলনাড়ুর পুলিশের হাতে আটক বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক

আবারও বাংলায় কথা বলার অভিযোগে ভিন রাজ্যে পুলিশের হাতে আটক পরিযায়ী শ্রমিক, এমনটাই অভিযোগ পরিবারের, নাগরিকত্বের সমস্ত রকম তথ্য দেওয়ার পরেও আজ ২১ দিন আটকে রেখেছে তাদের, বাড়ির মানুষকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কাছে আবেদন জানিয়েছেন তাঁর পরিবার। টাকি পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজিব শেখ নামে এক ব্যক্তি তামিলনাড়ুতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে। বিগত পাঁচ বছর ধরে সেখানে কাজ করছে সে। হঠাৎই আজ থেকে একুশ দিন আগে অর্থাৎ গত ২২ জুলাই রাজিব শেখ সহ বেশ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায় তামিলনাড়ুর পেরেমবালা থানা পুলিশ। যদিও সেখানে পুলিশের হেফাজতে থাকার পরেও রাজিব শেখ তাঁর পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারছিল বা পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল বলেই জানা যাচ্ছে। এরপর সেখানকার থানার পুলিশ বিভিন্ন নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়ায় সমস্ত রকম নাগরিকত্বের প্রমাণ তার পরিবার পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তারপরেও ২১ দিন কেটে গেছে, এখনও রাজিব শেখকে ছাড়েনি তামিলনাড়ুর পুলিশ। এমনকী এখন আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না তার পরিবারের লোকজন, এমনই জানানো হয়েছে তাঁর পরিবার সূত্রে। এই অবস্থায় রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়েছে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের দাবি, বাংলায় কথা বলার কারণেই রাজিব শেখকে সেখানকার পুলিশ আটক করেছে। সংসারের একমাত্র উপার্জনের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সমস্যায় পড়েছে গোটা পরিবার। তাঁর স্ত্রীর পক্ষে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। কী করে সংসার চলবে সেটাই বুঝতে পারছেন না তাঁর স্ত্রী মোনোরা বিবি এবং ছেলে জাহিদুল ইসলাম শেখ। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তার স্ত্রীর কাতর আবেদন, তাঁর স্বামীকে অবিলম্বে রাজ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক। যদিও এই বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন টাকি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোবিন্দ সরকার।