বাংলা ও বাঙালি ইস্যুতে বিধানসভা উত্তাল, আবারও সাসপেন্ড শুভেন্দু অধিকারী

ভিন রাজ্যে বাংলা এবং বাঙালিদের উপর হেনস্থার প্রতিবাদে এর আগেই সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী এই ইস্যুতে মহানগরীর রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। এবার এই ইস্যু নিয়ে মঙ্গলবার প্রস্তাব পেশ করা হল বিধানসভায়। মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এই প্রস্তাব পেশ করার সময় প্রসঙ্গত উল্লেখ করেন দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের এক শিশুর উপর অমানবিক অত্যাচারের ঘটনা। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি বিধায়করা ‘আহা রে’ বলে ব্যঙ্গ শুরু করেন। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। আলোচনা পরবর্তীকালে বিস্তারিত রূপ নিলে বিভিন্ন বিজেপি বিধায়ক ‘মোদি’ ‘মোদি’ বলে স্লোগান শুরু করেন। এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ফিরহাদ হাকিম ‘জয় বাংলা’ রব তোলেন। বলাবাহুল্য, অধিবেশন কক্ষে এদিন বাংলা ও বাঙালি ইস্যুতে প্রস্তাব পেশ করার সময় রীতিমত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবারে বাঙালি হেনস্থা নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করার সময় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় উল্লেখ করেন কয়েক মাস আগে দিল্লির বুকে ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা। তাঁর অভিযোগ, দিল্লি পুলিশের এক কর্মী এক পরিযায়ী শ্রমিকের শিশুকন্যাকে শারীরিক নিগ্রহ করেন। এমনকি তাঁকে মারধোরের অভিযোগও ওঠে। এই প্রস্তাবের সময় বিরোধী দলের বেঞ্চে দেখা যায় বিভিন্ন ‘অভব্য’ আচরণ। ব্যঙ্গ করে ‘আহা রে’ বলে ধ্বনি তুলতেও শোনা যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শশী পাঁজা বলেন, “চুপ করে থাকো তোমরা। তোমরা অসভ্য, অসভ্যতা করছো।” এই ধমকে সাময়িকভাবে চুপ হয় বিজেপি বিধায়করা। গত কয়েকমাস ধরেই দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাত, তেলেঙ্গানা ও ওড়িশা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই খবর সামনে আসছিল যে, বাংলায় কথা বললে ‘বাংলাদেশি’ বলে তকমা দিয়ে আটক করছিল সেখানকার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। আজ বিধানসভায় অধিবেশন চলাকালীন এই বিষয় উল্লেখ করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বাংলাদেশি নই, আমরা ভারতীয় বাঙালি।” এই আলোচনা পরে বিশদে পর্যালোচনা করার সময় উঠে আসে বিভিন্ন মনীষীদের কথা এবং তাঁদের অবদান। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ক্ষুদিরাম বসুর কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেন তৃণমূল মন্ত্রীরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিজেপি বিধায়কদের বিরোধিতা অব্যাহত থাকে। এই বাংলা বিরোধী বিজেপির বিরোধিতাকে ব্রিটিশদের সঙ্গে তুলনা করেন তৃণমূল কংগ্রেস। সব মিলিয়ে বাংলা ও বাঙালিদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ হওয়া নিয়ে রীতিমত সরগরম হয়ে ওঠে তৃণমূল ও বিজেপি যুযুধান দু পক্ষই। এমনকী বিধানসভায় এদিন গতকালের মেয়ো রোডে সেনাবাহিনীর তৃণমূলের সভামঞ্চ খুলে ফেলার প্রসঙ্গও উঠে আসে। আর সেসময় সেনার পক্ষেই স্লোগান তুলতে শোনা যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। এমনকী মোদীর নামেও ওঠে জয়ধ্বনি। এই ঘটনার জেরে রীতিমত উত্তাল হয়ে ওঠে বিধানসভা কক্ষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সাসপেন্ড করেছেন বলেই দাবি করেন শুভেন্দু। বিধানসভা থেকে বেরিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, “আমাকে আবারও সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেনার হয়ে বলার জন্য সাসপেন্ড হতে হয়েছে। আমি সেনার জন্য গর্ব অনুভব করি।”