নেপালের গণ-অভ্যুত্থান নেহাতই কি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান করার কারণেই? উঠছে প্রশ্ন

চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নেপাল (Nepal)। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান এবং সরকারের উপরে ক্ষোভ থেকেই পথে নামে যুব সম্প্রদায়। বিক্ষোভ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালায় পুলিশ। এর ফলে মৃত্যু হয় কমপক্ষে ২০ জন আন্দোলনকারীর। এর পরেই নেপাল(Nepal) সেনার তরফে জারি করা হয় কার্ফু। যদিও তারপরও অশান্তির আগুন নেভানো যায়নি। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সংসদ ভবন। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালান কেপি শর্মা ওলি ও অন্যান্য মন্ত্রীরা। অর্থমন্ত্রী সহ একাধিক মন্ত্রীর মার খাওয়ার ছবিও সামনে আসে। অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর। পাশের রাষ্ট্র নেপাল(Nepal)-এর এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি তাঁর এক্স-হ্যান্ডেলে লেখেন, “হিমাচল প্রদেশ ও পঞ্জাব থেকে ফিরে নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠকে নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নেপালের হিংসা হৃদয় বিদারক। এত সংখ্যক যুবকের মৃত্যুতে আমি উদ্বিগ্ন। নেপালের শান্তি, স্থিতাবস্থা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি নেপালের ভাই-বোনদের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি আপনারা শান্তিকে সমর্থন করুন।” কিন্তু নেপালের এই গণ-অভ্যুত্থান শুধুই কি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান করার কারণে— না, বিষয়টা একেবারেই তেমন নয়। শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়ায় রাতারাতি একটা গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব নয়। আসলের নেপালে যুব সমাজের অন্দরে আগুনের সলতে পাকানোর কাজটা চলছিল বেশ কিছু বছর ধরেই। সরকার তাতে আমল দেয়নি। দুর্নীতি ও বেকারত্ব নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জমছিল যুব সমাজের মনে। এরই মধ্যে গত আগস্ট মাসে নেপালের ললিতপুর জেলার হরিসিদ্ধিতে ঘটে একটি দুর্ঘটনা। ১১ বছরের একটি শিশুকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায় মন্ত্রীর গাড়ি। কিন্তু সাধারণ মানুষ ধরে ফেলেন গাড়িটিকে। নেপালের এক মন্ত্রীর ড্রাইভার চালাচ্ছিলেন গাড়িটি। তাকে আটক করে পুলিশের কাছে দিলে রাতিরাতিই ছাড়া পেয়ে যায় সে। এমনকী নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি ওই ঘটনাকে ‘সামান্য ঘটনা’ বলে আখ্যা দেন। এরপরই ঘৃতাহুতি হয় আগুনে, ধিকিধিকি যুব সমাজের ভিতর বাড়তে থাকে ক্ষোভ। গুরুতর আহত ওই ১১ বছরের মেয়ের ছবি সমাজ মাধ্যমে ট্রেন্ডিং হতে শুরু করে। অবশেষে গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর নেপাল সরকারের তরফে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো মোট ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরই বাঁধ ভাঙে যুব সমাজের। হড়পা বানের মতো সাধারণ মানুষের এতদিনের জমে থাকা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যে আগুন এত বছর ধরে ধিকিধিকি জ্বলছিল, তা পূর্ণতা পায় সরকারের একটিমাত্র সিদ্ধান্তে। আর তাই সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের আঁচ সবার আগে গিয়ে পড়ে সংসদ ভবনে। সব মিলিয়ে নেপালে(Nepal) গণ-অভ্যুত্থানের চিত্রনাট্যের খসড়া রচনা চলছিল অনেক আগে থেকেই।