বন্ধু দেশ ভারতের উপর অতিরিক্ত বাণিজ্য শুল্ক চাপালো ডোনাল্ড ট্রাম্প

এতদিন আমেরিকার বন্ধু দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধুত্ব নিয়েও নানা মহলে নানা চর্চা হয়েছে। এবার সেই বন্ধু দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ও অতিরিক্ত শাস্তিমূলক পেনাল্টি আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত রাশিয়াকে সমর্থন করায় আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা হলেও শিথিল হয় বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। এমনকী অতি সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়ও পাকিস্তানকে প্রচ্ছন্ন মদত দিতে দেখা গেছে আমেরিকাকে। সেসময় হোয়াইট হাউসের অনেক দাবিকেই নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছিল ভারত সরকারের তরফ থেকে। তারই ফলশ্রুতি এই শুল্ক বৃদ্ধি বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। ভারতের উপর শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এখনও চলছে। এরই সঙ্গে তিনি ব্রিকস সম্পর্কে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, ডলারের উপর আক্রমণ করছে ব্রিকস। হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্পকে ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, ট্রাম্প বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে এখনও কথা বলছি। তবে এর মধ্যে অবশ্যই রয়েছে ব্রিকস। ব্রিকস আসলে এমন দেশগুলির একটি গ্রুপ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবং ভারতও এর সদস্য। এটি ডলারের উপর আক্রমণ করছে এবং আমরা কাউকে ডলারের উপর আক্রমণ করতে দেব না।” ট্রাম্পের মতে ভারত তাঁর বন্ধু। তা সত্ত্বেও মার্কিন পণ্যের ওপর বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করে ভারতই। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশও করেন। ট্রাম্প বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী আমার বন্ধু, কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে খুব বেশি বাণিজ্য করেন না। তারা আমাদের দেশে অনেক পণ্য বিক্রি করে, কিন্তু আমরা বিক্রি করতে পারি না। কেন? কারণ তাদের ট্যারিফ অনেক বেশি। এখন তারা এটি অনেকাংশে হ্রাস করতে ইচ্ছুক, তবে দেখা যাক এর পরে কী হয়।” এমনকী ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, “এই সপ্তাহের শেষের দিকে, আপনারা জানতে পারবেন যে আমরা ভারতের সঙ্গে কোনও চুক্তি করেছি কি না বা তাদের কোনও ফি দিতে হবে কি না।” অন্যদিকে আমেরিকার এই ঘোষণার পর ভারত সরকারের তরফ থেকেও বিবৃতি দিয়ে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তাতে বলা হয়েছে, “ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ এবং পারস্পরিক উপকারী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হওয়া উচিত। এর জন্য গত কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলছে। ভারত এই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” অতীতেও আমেরিকা অনেক দেশের উপরই এ ধরনের বাণিজ্য শুল্ক চাপিয়েছে। তবে ভারতের উপর এ ধরনের বাণিজ্য শুল্ক চাপানোয় দু দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হতে পারে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইন্দিরা গান্ধীকে টপকে গেলেন নরেন্দ্র মোদী

দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী থাকার নিরিখে এবার ইন্দিরা গান্ধীকেও পিছনে ফেলে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। আর আজ অর্থাৎ শুক্রবার টানা ৪০৭৮ দিন ক্ষমতায় থাকার নজির গড়ে নরেন্দ্র মোদী ভেঙে দিলেন ইন্দিরা গান্ধীর সেই রেকর্ড। ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম প্রধানমন্ত্রীর তকমা পেলেন তিনি। ২০১৪ সালের ২৬ মে প্রথমবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং গত বছর অর্থাৎ ২০২৪-এর জুনে টানা তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ভারতীয় জনতা পার্টির ৭৪ বছর বয়সী এই নেতা প্রথম অ-কংগ্রেসী কোনও দলের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এই পদে থাকার নজির গড়েছেন। এমনকী স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণকারী প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবেও সবচেয়ে বেশি সময় শীর্ষপদে বসে আছেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৭ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ৪০৭৭ দিন ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় ছিলেন। অন্যদিকে টানা তিন দফায় ২০২৫-এর ২৫ জুলাই পর্যন্ত মোদী ক্ষমতায় আছেন ৪০৭৮ দিন। নরেন্দ্র মোদীর আগে এখন শুধু ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় আছেন জওহরলাল নেহেরু। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট থেকে ১৯৬৪ সালের ২৭ মে পর্যন্ত ১৬ বছর ২৮৬ দিন এই পদে ছিলেন তিনি। নেহরু ছাড়া নরেন্দ্র মোদীই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর তিনটি নির্বাচনে দলের নেতা হিসেবে জয়ী হয়েছেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে, মোদী গুজরাটের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। নরেন্দ্র মোদীই প্রথম এবং একমাত্র অ-কংগ্রেসি নেতা যিনি লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য দারুণ সুখবর! চালু হতে চলেছে অষ্টম পে কমিশন

বর্তমানে প্রায় ১ কোটিরও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগী রয়েছে। তাদের জন্য গত বছরের জানুয়ারিতে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। কিন্তু তা কবে থেকে কার্যকর হবে তা নিয়ে এতদিন নানা আলোচনা হচ্ছিল। অষ্টম পে কমিশন নিয়ে অনেকদিন ধরে নানা জল্পনা-কল্পনা হাওয়ায় ভাসছিল। অবশেষে এল নতুন আপডেট— যা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য নিঃসন্দেহেই খুশির খবর। জানা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। যা সরকারি কর্মচারীদের বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধাগুলির পর্যালোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপই বলা যায়। কমিশন গঠিত হওয়ার পর সব দিক খতিয়ে দেখে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট পেশ করবে। এই রিপোর্টে বেতন বৃদ্ধি, ভাতা সংশোধন, পেনশন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত প্রস্তাব থাকবে। সাধারণত প্রতি ১০ বছর অন্তর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হয়। সেক্ষেত্রে সপ্তম বেতন কমিশন যেহেতু কার্যকর হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি, তাই মনে করা হচ্ছে অষ্টম বেতন কমিশনও ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে পারে। তবে, এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি বা বেতন কমিশন গঠন সম্পর্কিত বিশদ কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি কার্যকর হলে স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের উপর এর বড় আর্থিক প্রভাবও পড়বে। তাই ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষের বাজেটে যে এর প্রতিফলন দেখা যাবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত।
“এবারের খেলায় বোল্ড আউট করতে হবে,”—দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দলনেত্রীর

রাজনীতিতে তিনি যে অলরাউন্ডার, ২১শের সভা থেকে বুঝিয়ে দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রীতিমত ক্যাপ্টেনের মতো ২৬-এর ক্রিজে চতুর্থ বারের জন্য বাংলা দখলের ‘রান’ বেঁধে দিলেন দলীয় কর্মীদের। এদিন মমতা বলেন, “এবারে খেলায় বোল্ড আউট করতে হবে। একেবারে ছক্কা মারতে হবে।” একুশে জুলাই আসলে একটা আবেগ। তৃণমূল কংগ্রেসের মেগা ইভেন্ট, শহীদ স্মরণ। তাই সকাল থেকেই সরগরম গোটা চত্বর। ‘দিদি’ তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, তা শুনতে রাত থেকে একটু একটু করে সভামঞ্চে ভিড় করতে শুরু করেছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। ছাব্বিশের সুর কী হবে? ভোটের আগে বিজেপি সহ বিরোধীদের ক্লিন বোল্ড করতে ক্যাপ্টেন কী ভোকাল টনিক দেন, তা শুনতে ধর্মতলায় লাখো মানুষের ভিড়।তবে সেই চেনা রণংদেহী মেজাজে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। লড়াইয়ের মঞ্চে তিনি যে সামনে থেকে টিম সামলাবেন, তা বুঝিয়ে দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, শহীদদের রক্তে তর্পণ করে বলছি, যতদিন দিল্লি থেকে উৎখাত না করতে পারি, ততদিন শান্ত হব না। আমি একাই ১o জনের সঙ্গে লড়ে নেব।” আসলে বাঙালি অস্মিতা, এনআরসি, ভোটার তালিকা সংশোধন, বাংলার বঞ্চনা সহ একাধিক হাতিয়ার যে তার হাতে। ২৬শে আরও বেশি আসন যে দরকার তাও নির্দিষ্ট করে দেন। এদিন সভামঞ্চে পহেলগাও হামলায় শহীদ ঝন্টু আলী শেখ এবং বিতান অধিকারীর পরিবারকে মঞ্চে তুলে তাদের হাতে ২ লক্ষ টাকা তুলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “অপারেশন সিঁদুরে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা গেল না কেন? আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় চলছেন।” ইতিমধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে, অথচ ২০২৬-এ বিধানসভাকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আচমকাই জয় শ্রী রামের বদলে জয় মা দুর্গা, জয় মা কালীর নাম বারেবারে বলেন, যা নিয়েও একুশের মঞ্চ থেকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, “টেলি প্রম্পটারে দুলাইন বাংলা লিখে এনে বলে দিলেই বাঙালি হওয়া যায় না। ওদের না আছে জ্ঞান, না আছে কিছু।” পাশাপাশি কেন্দ্রের মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “সর্বনাশা আইন বাতিল না করলে, বাংলায় হাত দিলে কমিশন ঘেরাও করব আমরা। কিছুতেই বাংলা ও বাঙালির উপর অত্যাচার মানব না।” এরপরই মমতার হুঁশিয়ারি, “বাংলাভাষীদের ওপর অত্যাচার হলে ছেড়ে দেব না। আমাদের আটকে রাখা যায় না, রোখা যায় না।” ইতিমধ্যে অসমের ফরেন ট্রাইবুনালে বাঙালিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা নিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাকে মমতার খোঁচা, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী আপনি অসমটাই সামলাতে পারছেন না, আর বাংলায় নাক গলাচ্ছেন। সুস্মিতা দেবকে বলব দরকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দরকার হলে আমরা সবাই যাব। দেখব কতজনকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখেন।” এদিন সিপিএমকেও মমতার তোপ, “মনে নেই হাজরা মোড়ে সেদিন আমায় মারতে মারতে প্রায় মেরেই ফেলেছিলেন, মাথা ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র এক্সারসাইজ করি বলে আর হাঁটি বলে এখনও চলছি, লড়াই করে যাচ্ছি।”
রাস্তায় নেমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুংকার দিলেও অনুপ্রবেশ যে বন্ধ হবেই, সাফ জানালেন মোদী

একদিকে যখন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে কাজ করতে যাওয়া বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূল কংগ্রেস। ঠিক সেই সময় বাংলায় দাঁড়িয়ে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কঠোর বার্তা দিলেন আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার এই ইস্যুতে ধর্মতলায় সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেন প্রতিবাদ মিছিলও । আর দুর্গাপুরে দাঁড়িয়ে অনুপ্রবেশ নিয়ে যে কোনো আপোষ নয় তা স্পষ্ট করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার দুর্গাপুরে দলীয় সভা মঞ্চ থেকে তৃণমূলকে টার্গেট করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ” তৃণমূল নিজের স্বার্থে বাংলাকে অসম্মানিত করছে। রাজ্যের সম্মানকে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে। এই করে আসলে অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচাতে ফন্দি আটছে। অনুপ্রবেশকারীদের দেশে কোন স্থান নেই কোন জায়গা নেই যে ভারতের নাগরিক নয় বেআইনি প্রবেশ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান মেনে বর্তমানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনে রাখবেন এটা মোদীর গ্যারান্টি।” তিনি আরও বলেন,” টিএমসি নিজের স্বার্থের জন্য অনুপ্রবেশকারীদের নকল কাগজ বানিয়ে দিচ্ছে। দেশের সুরক্ষার জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক। দেশের সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকেও আক্রমণ করছে টিএমসি। যে ভারতের নাগরিক নয়, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে ভারতের সংবিধান অনুযায়ী। যে কোনও ধরণের চক্রান্ত বিজেপি সফল হতে দেবে না। বাংলার ডবল ইঞ্জিন সরকার প্রয়োজন। ” উল্টে তৃণমুলের আমলে এই বাংলায় বাঙালিরা আক্রান্ত বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি এই রাজ্যে মহিলারাও যে সুরক্ষিত নয় বলে দাবী করেন নরেন্দ্র মোদী। বাংলার হাসপাতাল ডাক্তার তরুণীর উপর অত্যাচার হয়েছে। অভয়া কাণ্ড মনে করালেন মোদি। বললেন, “কীভাবে তৃণমূল অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে?” কসবা কাণ্ডও উঠে এলো মোদির বক্তব্যে। বললেন, “এক কলেজে এক তরুণীর উপর ভয়ংকর অত্যাচার হয়েছে। অভিযুক্তের তৃণমূলের যোগ মিলেছে। এগুলোই তৃণমূলের নির্মমতার সাক্ষী।” বাংলাকে এই নির্মমতা মুক্ত করার ডাক দিলেন মোদি।
আজ ইস্পাত নগরীতে প্রধানমন্ত্রী, তার আগে এক্স-পোস্টে তৃণমূলকে নিশানা

গত ১৬ জুলাই বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের নিগৃহীত করার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন ডোরিনা ক্রসিংয়ের সভা থেকে বিজেপি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী হুংকার দিয়েছিলেন, “সাহস থাকে তো আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠান। আমাকে গ্রেফতার করুন।” এমনকী ওই সভামঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি সুর চড়িয়ে ‘ইন্ডিয়া'(INDIA) জোটের হয়েও সুপারিশ করতে দেখা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তারই পাল্টা হিসাবে আজ পশ্চিমবঙ্গে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুরে জনসভা করবেন তিনি। তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই বঙ্গ বিজেপির নেতা ও সমর্থকদের মধ্যে সাজো সাজো রব। সকাল থেকেই ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সব মিলিয়ে সরগরম ইস্পাতনগরী। এই সভা থেকে যে ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের রণকৌশল সাজাবেন নরেন্দ্র মোদী । আর তাই তাঁর আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য যে হবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা বলাই বাহুল্য। এমনকী বঙ্গে পা রাখার আগেই নিজের এক্স-হ্যান্ডেলে যেন সেই বার্তাই দিলেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার দুপুরেই দুর্গাপুরে প্রকাশ্য জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নরেন্দ্র মোদীর এই জনসভা ঘিরে রীতিমতো চনমনে গেরুয়া শিবির। দুর্গাপুরের সভার আগেই নিজের সোস্যাল সাইটে তৃণমূলকে কার্যত তুলোধনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। শাসকদলকে তুলোধনা করার পাশাপাশি তাঁর সভায় যোগদানেরও আহ্বান জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের অপশাসনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ অনেক আশা নিয়ে বিজেপি-র দিকে তাকিয়ে আছেন এবং তাঁরা নিশ্চিত যে একমাত্র বিজেপি-ই পারবে উন্নয়ন করতে। ১৮ জুলাই, দুর্গাপুরে একটি জনসভায় ভাষণ দেব। যোগদান করুন!” এর থেকেই আন্দাজ করা যায়, শুক্রবার কার্যত তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে কতটা সুর চড়াবেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।