স্বামীর মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছে মাওবাদী নেত্রী শোভা মুণ্ডা

সমাজ বদলের রঙিন স্বপ্ন চোখে নিয়ে একদিন ঘর ছেড়েছিলেন ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির মেয়ে চন্দনা সিং ওরফে শোভা মুণ্ডা। মাওবাদী নেতা কিষাণ জির নেতৃত্বে মাওসেতুং আদর্শে দীক্ষিত হয়ে জড়িয়ে পড়েন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে। অস্ত্রকেই বিপ্লবের হাতিয়ার বানিয়ে এরপর শুরু হয় একের পর নাশকতার ছক। ততদিনে মাত্র ১২ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে আসা বেলপাহাড়ির সেই ছোট্ট মেয়ে চন্দনা সিং হয়ে উঠেছে মাওবাদী নেত্রী শোভা মুণ্ডা। ২০১০ সালে ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলায় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ মামলায় ঝাড়খণ্ড পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। ঝাড়গ্রামে প্রায় ছ-ছটি মামলা আছে আদিবাসী এই তরুণীর বিরুদ্ধে। যদিও সবকটিতে জামিন পেয়ে গেলেও, ঘাটশিলা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তার। এরপর দীর্ঘ ১৫ বছর। অবশেষে মিলেছে মুক্তির স্বাদ। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে ছাড়া পেলেন মাওবাদী নেত্রী শোভা মুণ্ডা। যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণার পর একের পর এক জেল ঘুরে অবশেষে তার ঠাঁই হয় এই মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে। এখানেই এতদিন শাস্তি ভোগ করছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার জেলমুক্তির খবর পেয়ে তাকে নিতে এসেছিলেন, তার দাদা তারক সিং এবং বৌদি ছবি সিং। এত বছর পর ঘরছাড়া বোনকে ঘরে ফেরাতে পেরে আবেগমথিত হয়ে পড়ে তার দাদা। এদিন সেন্ট্রাল জেলের সামনে হাজির ছিল এপিডিআর(APDR) কর্মীরাও। তারা এত বছর ধরে শোভার জেলমুক্তির জন্য মুক্তির জন্য রাঁচি হাই কোর্টে আপিল করেছিল। ২০২২ সালে তার শুনানিও হয়। কিন্তু সরকারি বিচারব্যবস্থার গড়িমসিতে তিন বছর রায়দান হয়নি। তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভও উগরে দেন এপিডিআর(APDR) নেত্রী জয়শ্রী সরকার। অবশেষে শোভার জেলমুক্তিতে খুশি তারাও। জেল থেকে বেরিয়ে মাওবাদী নেত্রী জানান, যে মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে সেই ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন না। আগামী দিনগুলো কীভাবে কাটাতে চান, এখনও জানেন না শোভা মুণ্ডা ওরফে চন্দনা সিং। তবে মাওবাদী স্কোয়াডে থাকার সময় তার সাথে বিয়ে হয় মাওবাদী নেতা রাজেশ মুণ্ডার। ঘাটশিলার ছেলে রাজেশ এখন মুর্শিদাবাদ জেলে বন্দি। শোভা মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে থাকার সময় সেখান থেকে নিয়ম করে কথাও বলতে স্ত্রীর সঙ্গে। এখন আপাতত স্বামী রাজেশ মুণ্ডার মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনবে চন্দনা ওরফে শোভা মুণ্ডা।