মধ্যমগ্রাম কাণ্ডে নয়া মোড়, খোঁজ মিলল রহস্যময়ীর
মধ্যমগ্রাম বিস্ফোরণ কাণ্ডে নয়া মোড়। এবার এই ঘটনায় ‘রহস্যময়ী’ এক তরুণীর সন্ধান পেল পুলিশ। যার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মৃত যুবক সচ্চিদানন্দ মিশ্রের— এমনটাই দাবি বারাসত জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়ার। তাঁর কথায়,”মৃত যুবকের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল ঘেঁটে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে এখানকার এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর। প্রেমের টানেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ওই যুবক ছুটে এসেছিলেন মধ্যমগ্রামে।” যদিও ‘রহস্যময়ী’ ওই তরুণীর নাম প্রকাশ করতে চাননি পুলিশ সুপার। তবে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া খোলসা করে কিছু না বললেও পুলিশের একটি সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের তিন দিন আগেই উত্তরপ্রদেশের এই যুবক ঘাঁটি গেড়েছিলেন মধ্যমগ্রামে। আগেও প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে এখানে এসেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয় সচ্চিদানন্দের। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণে সেই মহিলার স্বামীকে খুন করার উদ্দেশ্যে নিয়েই সচ্চিদানন্দ মিশ্র মধ্যমগ্রামে এসেছিলেন। খুন করতে এসে নিজে মরে গেলেও এই ঘটনায় তার প্রেমিকা ওই রহস্যময়ী মহিলার জড়িত বলেই মনে করছে পুলিশ। সে কারণেই এই ঘটনার তদন্তকারী এসটিএফ টিম মহিলাকে আটক করেছে। তার স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলের আশেপাশেই ওই মহিলার বাড়ি। সচিদানন্দকে নিয়ে একাধিকবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। নিজের প্রেমিকার অপমান-অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তার স্বামীকে খুন করার প্ল্যান কষে সচ্চিদানন্দ। তবে তদন্তকারী আধিকারিকরা মনে করছেন সচ্চিদানন্দকে তার প্রেমিকাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। মধ্যমগ্রাম বিস্ফোরণ কাণ্ড নিয়ে প্রথম থেকেই রহস্যের ঘনঘটা! বিস্ফোরণের পর বছর পঁচিশের ওই যুবকের গতিবিধি নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, তেমনই প্রশ্ন উঠেছিল বিস্ফোরণের ধরন নিয়েও। কিন্তু সচ্চিদানন্দ নিজে আইটিআই-এর ছাত্র। তাই প্রযুক্তি, মেশিন, বিস্ফোরকের বিষয়ে তাঁর জ্ঞান থাকা অসম্ভব কিছু নয়। সেক্ষেত্রে পুলিশের অনুমান, ওই বিস্ফোরক নিজেই বানিয়েছিলেন সচ্চিদানন্দ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে একটি পেনের মত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে বিস্ফোরক বানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভুল বাটন চাপ দিয়ে নিজেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এর আগেও একাধিকবার উত্তর প্রদেশ থেকে মধ্যমগ্রামে এসেছে এই সচ্চিদানন্দ। চলতি বছরের গত এপ্রিল মাসে এসে বেশ কয়েকদিন থেকে গেছে। এক্ষেত্রে পুলিশের অনুমান যখনই ওই মহিলার স্বামী বাইরে কোনও কাজের জন্য যায় তখনই সচ্চিদানন্দ মধ্যমগ্রামে এসে থাকতেন। গত তিনদিন ধরে সচ্চিদানন্দ মধ্যমগ্রাম এলাকাতেই ছিলেন। তার প্ল্যান ছিল গত পরশু রাতে ওই মহিলার স্বামীকে খুন করার। কিন্তু তার আগেই রবিবার মধ্যরাতে মধ্যমগ্রাম বয়েজ স্কুল সংলগ্ন রবীন্দ্র মুক্ত মঞ্চ এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের অভিযুক্ত যুবক সচ্চিদানন্দের বাঁ হাত এবং পা উড়ে যায়। শরীরজুড়ে তৈরি হয় একাধিক ক্ষত। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সোমবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। জানা গিয়েছে, মৃত যুবক উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলার বাসিন্দা। তবে কাজের সূত্রে হরিয়ানাতে থাকতেন সচ্চিদানন্দ। সেখানকার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল না। এমনকী তিনি যে মধ্যমগ্রামে এসেছিলেন তাও জানত না তাঁর পরিবার। বারাসত জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া জানান, “মৃতের কাছ থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ফরেন্সিক টিমের তরফে জানানো হয়েছে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ভুল করে চাপ কিংবা অসাবধানতার ফলেই বিস্ফোরণ হয়েছে। কী রকম বিস্ফোরক ছিল, তা নমুনা বিশ্লেষণের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই জানা যাবে। ঘটনার তদন্ত চলছে। খুব শীঘ্রই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। মৃতের পরিবারের লোকজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত হলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে।” সব মিলিয়ে মধ্যমগ্রাম কাণ্ডে রহস্য ক্রমশই দানা বাঁধছে।