পুজোর আগে শর্তসাপেক্ষে কলকাতায় খুলছে রুফটপ রেস্তরাঁ

বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। এই কটা দিন বাঙালি কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করে না। বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরা-আড্ডা এবং সেই সাথে অবশ্যই পেটপুজো। খাদ্য রসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তির জন্য নতুন সুখবর দিল কলকাতা পুরসভা। পুজোর আগেই কলকাতার রুফটপ রেস্তরাঁ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল পুরসভা। তবে হ্যাঁ, তার জন্য মেনে চলতে হবে একাধিক শর্ত। কেননা আকাশ ছোঁয়ার আস্কারায় শহরের বুকে অগ্নিদগ্ধ স্মৃতিগুলো যে এখনও তাজা। তাই এক্ষেত্রে নিয়মের কোনও শিথিলতা থাকলে চলবে না, স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বুধবার পুরমন্ত্রী বলেন, “আমরা নতুন করে কোনও রেস্তরাঁর অনুমোদন দিচ্ছি না। তবে যেগুলি আগে থেকে ছিল, সেগুলি পুজোর আগেই চালু হবে। তবে রুফটপ চালু করা হলেও মানতে হবে একাধিক শর্ত। মোট রুফটপের ৫০ শতাংশ খালি রাখতে হবে। যেদিকে হাইড্রোলিক ল্যাডার ঢুকবে রেস্তরাঁর সেই দিকে ৫০ শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে, যাতে উদ্ধারকার্য করা যায়। মানুষকে বাঁচাতে যা যা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা দরকার, তা অবশ্যই রাখতে হবে। রাখতে হবে প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাও।” পাশাপাশি ফিরহাদ আরও বলেন, “ভবিষ্যতে আমরা একটা বিল আনব, যেখানে ছাদ কমন এরিয়া হিসেবে রাখতে হবে। ফায়ার, পুলিশ এবং কর্পোরেশন তিন মাস অন্তর সরোজমিনে খতিয়ে দেখবে। নিয়ম না মানলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।” তাঁর কড়া বার্তা—”মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ব্যবসা চলতে পারে না। ছাড়পত্র চাইলে নিয়ম মানতেই হবে।” এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে স্টিফেন কোর্টের কথা মনে করিয়ে দেন ফিরহাদ। ২০১০ সালে স্টিফেন কোর্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এমনকী গত বছরের এপ্রিলে বড়বাজারের মেছুয়ার ফলপট্টির হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। তাই এইসব পুরনো ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিয়মের বিষয়ে আরও কঠোর হতে চাইছে পুরসভা। পুরসভার গাইডলাইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রুফটপ রেস্তরাঁর ক্ষেত্রে ছাদে বসার জায়গার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ খালি রাখতে হবে। রাস্তার দিকে রেসকিউ স্পেস রাখতেই হবে। থাকতে হবে চলমান ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা — জলের পাইপ, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, অ্যালার্ম সিস্টেম সহ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সিঁড়ি খোলা রাখতে হবে। এই সমস্ত বিধিনিষেধ মানলে তবেই মিলবে ছাড়পত্র।
‘মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেই চলছে বেআইনি কাজ’—দেবাশীষ ভট্টাচার্য

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের বাড়ি সামনেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে ট্রাম লাইনে পিচ ফেলার কাজ। শুক্রবার কলকাতা পুরসভার সামনে এই মর্মে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, হাই কোর্টের পরিষ্কার নির্দেশ ছিল যে শহরে কোথাও কোনও জায়গায় ট্রাম লাইনে পিচ ফেলা যাবে না। তার পরেও আদালত অবমাননা করা হচ্ছে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে থাকা ট্রাম লাইনের উপরে। আবার এই পিচ ফেলার দায় না নিচ্ছে কলকাতা পুরসভা, না কলকাতা পুলিশ। পুরসভার তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। অন্যদিকে পুলিশের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তারাও বলতে পারছে না যে কোন সংস্থা এবং কার নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বাড়ির সামনে ট্রাম লাইনে পিচ ফেলা হল। অথচ রাস্তার কাজ কলকাতা পুরসভার সড়ক বিভাগ ছাড়া কেউ করতে পারে না। যেকোনও রাস্তার কাজের বরাত তারাই দিয়ে থাকে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি সামনেই আইনের তোয়াক্কা না করেই চলছে এই বেআইনি কাজ— বলে অভিযোগ করলেন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই যাতে কলকাতার রাস্তায় আর ট্রাম না চলে, তার জন্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু ট্রামের মতো কলকাতার ঐতিহ্যবাহী একটা গণ-পরিবহনকে ধ্বংব করে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে। এর ফলে কলকাতা শহরের বয়স্ক মানুষজন সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়বে। তারা বাধ্য হবে অটো-রিক্সাতে উঠতে। আর যাদের টাকা আছে তারা ট্যাক্সি বা ওলা-উবের ধরবে। সেই দিকেই নিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “একই ঘটনা চিতপুরেও ঘটেছে। সেখানেও ট্রাম লাইনের উপরে পিচ ফেলা হয়েছে। তার জন্য চিৎপুর থানায় অভিযোগ জানালে প্রথম টালবাহানা করার পর এফআইআর না নিয়ে শুধু অভিযোগ জমা নেওয়া হয়েছে।” ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ আসলে ট্রাম ডিপো জমি মাফিয়াদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। অথচ প্রবীণ নাগরিক থেকে শিশু-মহিলাদের জন্য ট্রামের চেয়ে সস্তা এবং আরামদায়ক যাত্রা আরও কোনও কিছুতে পাওয়া যায় না। তার পরেও ট্রাম তুলে দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন, যেমন– অটো, উবের এবং ওলাদের মত বড় সংস্থাগুলিকে ইনকামের জায়গায় করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ ঐতিহ্যবাহী ট্রামকে তুলে দেওয়ার সমস্ত চক্রান্ত চলছে বলে জানান সংগঠনের সদস্যরা। এদিন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে ডেপুটেশন জমা দিতে এসে কলকাতা পুরসভার সামনে বিক্ষোভ অবস্থান করেন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন।
এবার দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআরের ইঙ্গিত তৃণমূলের

এবার দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে বলে বুধবার জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিন তৃণমূল ভবনে দিল্লিতে দিল্লি পুলিশের হাতে সন্তান সহ আক্রান্ত সাজনু পারভিনকে সাথে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন কুণাল ঘোষ এবং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। উল্লেখ্য, দিল্লি পুলিশের অত্যাচারের শিকার মালদহের চাঁচলের মহিলা সাজনু পারভিন ও তাঁর শিশু সন্তানের অভিযোগ এমনটাই। এই হেনস্তার অভিযোগ তুলে কলকাতা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করবেন তাঁরা। ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমরা আমাদের দলের লিগ্যাল টিমের সাথে কথা বলছি, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে।” পাশাপাশি, ফিরে আসা এই পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের সব দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার, তাও জানালেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, “ফিরে আসা সবার পেটে ভাত, সবার হাতে কাজ, সবার মাথায় ছাদ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসার বার্তা দিয়েছেন। সেই সুর ধরেই ফিরহাদ হাকিম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, একটা রুটি থাকলে হাফ করে খাব। বাংলা ভাষার উপর অত্যাচার সহ্য করা হবে না।”
বঙ্গ বিজেপি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা : ফিরহাদ

একুশের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন ফিরহাদ হাকিম। সপ্তাহের শুরুতেই কলকাতা কার্যত জন-অরণ্যে পরিণত হয়েছে। ধর্মতলার রাস্তা একপ্রকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের দখলে। আর এই ভরা সভা থেকেই গেরুয়া শিবিরকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে ফিরহাদ বলেন,”বাংলায় বেশি লাফালাফি করছে বিজেপি। মনে রাখবেন বঙ্গ বিজেপি আসলে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা।” এখানেই শেষ নয়, বিজেপির কারণে গোটা রাজ্যে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মত ফিরহাদের, তিনি বলেন, “রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে বিজেপি। গোটা দেশে বাঙালিদের নির্যাতন করা হচ্ছে বিজেপির কারণে। বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি বলে অত্যাচার করা হচ্ছে।” এদিন তার ভাষণে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের কথাও উঠে আসে। তিনি বলেন,”আমরা সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরে লড়াই করেছি। সেসব যেন না ভুলে যাই।” এদিন বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমকেও তীব্র আক্রমণ শানিয়ে ফিরহাদ বলেন, “আমরা সিপিআইএমের সঙ্গে লড়াই করেছি। মনে রাখতে হবে আজ শহীদদের রক্তেই বাংলা সিপিআইএম মুক্ত।”