স্পিকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শুভেন্দু অধিকারীর

বিধানসভার ভিতর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবেশ নিয়ে এবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্ট অবমাননার মামলা দায়ের করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারীরই(Suvendu Adhikari) করা এক মামলায় কলকাতার হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতি অমৃতা সিনহা বিধানসভার আইনের উল্লেখ করে বলেছিলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে বিধানসভায় প্রবেশ করা যায় না। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তা রক্ষীদের নিয়ে বিধানসভায় প্রবেশ করায় ফের একবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন শুভেন্দু(SuvenduAdhikari)। কেননা গত ১লা সেপ্টেম্বর স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নির্দেশিকা জারি করেন, সেখানে তিনি স্পষ্ট জানান— ‘মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কোনও মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা বিধানসভায় ঢুকতে পারবেন না।’ এক্ষেত্রে শুভেন্দুর(Suvendu Adhikari)দাবি, স্পিকার মুখ্যমন্ত্রীর রক্ষীদের বিধানসভায় প্রবেশের অনুমতি দিয়ে আদালতের নির্দেশকে অবমাননা করেছেন। শুভেন্দুর(Suvendu Adhikari) পক্ষের আইনজীবীর মন্তব্য— “স্পিকার জানিয়েছিলেন বিধানসভায় কোনও বিধায়কের নিরাপত্তারক্ষীর প্রবেশের অধিকার নেই। তারপরেও বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে প্রবেশ করেছেন, যা আদালত অবমাননার সমান।” সম্প্রতি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিধানসভায় প্রবেশের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, তৃণমূল বিধায়কদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিধানসভা এলাকার মধ্যে প্রবেশ করার অনুমতি রয়েছে। অথচ বিজেপি বিধায়কদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। তাঁদের বিধানসভার বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যদিও সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করেনি। তবে বিচারপতি অমৃতা সিনহা বিধানসভার আইনের উল্লেখ করে সবার ক্ষেত্রেই সমান ভাবে নিয়ম বলবৎ করার নির্দেশ দেন, পাশাপাশি বিধানসভার সচিবকে তা নিশ্চিত করার কথাও জানান। শুভেন্দুর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে আদালতকেই অবমাননা করেছেন। সকলের জন্য সমান নিয়ম তিনি বলবৎ করেননি। এই মামলার প্রমাণ হিসাবে ওইদিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণের দাবিও জানান শুভেন্দুর পক্ষের আইনজীবীরা। আগামী সপ্তাহেই এই মামলার শুনানি হতে পারে। সবে রাজ্যে বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে ততই যে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও তীব্র হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলা ও বাঙালি ইস্যুতে বিধানসভা উত্তাল, আবারও সাসপেন্ড শুভেন্দু অধিকারী

ভিন রাজ্যে বাংলা এবং বাঙালিদের উপর হেনস্থার প্রতিবাদে এর আগেই সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী এই ইস্যুতে মহানগরীর রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। এবার এই ইস্যু নিয়ে মঙ্গলবার প্রস্তাব পেশ করা হল বিধানসভায়। মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এই প্রস্তাব পেশ করার সময় প্রসঙ্গত উল্লেখ করেন দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের এক শিশুর উপর অমানবিক অত্যাচারের ঘটনা। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি বিধায়করা ‘আহা রে’ বলে ব্যঙ্গ শুরু করেন। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। আলোচনা পরবর্তীকালে বিস্তারিত রূপ নিলে বিভিন্ন বিজেপি বিধায়ক ‘মোদি’ ‘মোদি’ বলে স্লোগান শুরু করেন। এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ফিরহাদ হাকিম ‘জয় বাংলা’ রব তোলেন। বলাবাহুল্য, অধিবেশন কক্ষে এদিন বাংলা ও বাঙালি ইস্যুতে প্রস্তাব পেশ করার সময় রীতিমত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবারে বাঙালি হেনস্থা নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করার সময় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় উল্লেখ করেন কয়েক মাস আগে দিল্লির বুকে ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা। তাঁর অভিযোগ, দিল্লি পুলিশের এক কর্মী এক পরিযায়ী শ্রমিকের শিশুকন্যাকে শারীরিক নিগ্রহ করেন। এমনকি তাঁকে মারধোরের অভিযোগও ওঠে। এই প্রস্তাবের সময় বিরোধী দলের বেঞ্চে দেখা যায় বিভিন্ন ‘অভব্য’ আচরণ। ব্যঙ্গ করে ‘আহা রে’ বলে ধ্বনি তুলতেও শোনা যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শশী পাঁজা বলেন, “চুপ করে থাকো তোমরা। তোমরা অসভ্য, অসভ্যতা করছো।” এই ধমকে সাময়িকভাবে চুপ হয় বিজেপি বিধায়করা। গত কয়েকমাস ধরেই দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাত, তেলেঙ্গানা ও ওড়িশা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই খবর সামনে আসছিল যে, বাংলায় কথা বললে ‘বাংলাদেশি’ বলে তকমা দিয়ে আটক করছিল সেখানকার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। আজ বিধানসভায় অধিবেশন চলাকালীন এই বিষয় উল্লেখ করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বাংলাদেশি নই, আমরা ভারতীয় বাঙালি।” এই আলোচনা পরে বিশদে পর্যালোচনা করার সময় উঠে আসে বিভিন্ন মনীষীদের কথা এবং তাঁদের অবদান। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ক্ষুদিরাম বসুর কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেন তৃণমূল মন্ত্রীরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিজেপি বিধায়কদের বিরোধিতা অব্যাহত থাকে। এই বাংলা বিরোধী বিজেপির বিরোধিতাকে ব্রিটিশদের সঙ্গে তুলনা করেন তৃণমূল কংগ্রেস। সব মিলিয়ে বাংলা ও বাঙালিদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ হওয়া নিয়ে রীতিমত সরগরম হয়ে ওঠে তৃণমূল ও বিজেপি যুযুধান দু পক্ষই। এমনকী বিধানসভায় এদিন গতকালের মেয়ো রোডে সেনাবাহিনীর তৃণমূলের সভামঞ্চ খুলে ফেলার প্রসঙ্গও উঠে আসে। আর সেসময় সেনার পক্ষেই স্লোগান তুলতে শোনা যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। এমনকী মোদীর নামেও ওঠে জয়ধ্বনি। এই ঘটনার জেরে রীতিমত উত্তাল হয়ে ওঠে বিধানসভা কক্ষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সাসপেন্ড করেছেন বলেই দাবি করেন শুভেন্দু। বিধানসভা থেকে বেরিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, “আমাকে আবারও সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেনার হয়ে বলার জন্য সাসপেন্ড হতে হয়েছে। আমি সেনার জন্য গর্ব অনুভব করি।”