জমা জলে পড়ে মৃত্যু পাঁচ মাসের শিশুর, শোকস্তব্ধ এলাকা — কাঠগড়ায় পৌর প্রশাসন

উত্তর দমদম পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দেবীনগর এলাকায় জমা জলে পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হল পাঁচ মাসের এক কন্যাশিশুর। শনিবার সকালে এই দুর্ঘটনার পর গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিস্ফারিত চোখে এলাকার মানুষ বলছেন, ‘‘জলের অভিশাপেই গেল ছোট্ট মেয়েটার প্রাণ।’’ ঘটনাটি ঘটেছে বিরাটির দেবীনগর এলাকার একটি বস্তি অঞ্চলে। প্রায় একমাস ধরে এলাকাটি কোমড় সমান জলে ডুবে রয়েছে। কোনও কার্যকর নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় জল সরে যায়নি। তার মধ্যেই এই মৃত্যু যেন গোটা সমস্যাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ শিশুটিকে কোলে নিয়ে ঘরের মধ্যেই হাঁটছিল তার মা। আচমকা পা হড়কে পড়ে যান তিনি, আর শিশুটি সটান পড়ে যায় জমে থাকা নোংরা জলের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে তুলে স্থানীয় উত্তর দমদম পৌর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে পাঠানো হয় কলকাতার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটিকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে আনা হয়েছিল। মৃত শিশুটির বাবা পাপন ঘোড়াই নিমতা থানার সিভিক ভলান্টিয়ার। ঘটনার কথা শুনেই কাজ ফেলে হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি। হাসপাতালের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির ঠাকুমা। ‘‘এই জলের জন্যই তো ও চলে গেল। একমাস ধরে বলছি, জল সরাও। কেউ শুনল না,’’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন তিনি। ময়না তদন্তের জন্য শিশুটির দেহ পাঠানো হয়েছে এনআরএস হাসপাতালে। পুলিশ জানিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছেন, প্রায় একমাস ধরে তাদের এলাকা জলমগ্ন। বৃষ্টি হলেই ঘরে ঢুকে পড়ছে জল। বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পৌরসভা। ‘‘এখানে বাঁচা যাচ্ছে না। শিশু, বৃদ্ধ সকলেরই অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ছে। এখন তো প্রাণ গেল এক শিশুর। আর কত বড় মর্মান্তিক ঘটনা হলে পৌর প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে?’’ প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা রত্না দে। এই ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চাপা উত্তেজনা। যদিও কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাইছেন না। অনেকেই বলছেন, আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। এই ওয়ার্ডটি উত্তর দমদম বিধানসভার অন্তর্গত। এই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ও অর্থ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তাঁর বিধানসভাতেই এমন জলমগ্নতা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ‘‘এই ঘটনার পূর্ণ দায় প্রশাসনের। একমাস ধরে এই অবস্থার কথা জানিয়ে এসেছি। আজ একটি শিশুর প্রাণ গেল, কাল হয়তো আরও কারও যাবে। মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীর দৃষ্টি কি আদৌ পড়বে এখানে?’’ বলেন এক স্থানীয় নাগরিক। প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত এই মৃত্যু নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে এলাকার মানুষের প্রশ্ন— ‘‘এই জলে আরও কত প্রাণ হারালে মিলবে মুক্তি?’