মতুয়াদের নাগরিকত্বের আন্দোলনকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ডাক অধীরের

এসআইআর (SIR)-এর প্রতিবাদে ও মতুয়াদের নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে গত ৫ নভেম্বর থেকে ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে (Thakurnagar Thakurbari) আমরণ অনশনে বসেছেন তৃণমূলের(TMC) রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুরের (Mamata Thakur) অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সাধু-গোঁসাইরা। ইতিমধ্যেই অনশন মঞ্চে অনেকেই গুরুতর অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকেই ভর্তি হয়েছেন বনগাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে। এই আবহে গত বুধবার অনশনে যোগ দেন মমতা ঠাকুর নিজে। অনশনের নবম দিনে, অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার সর্বভারতীয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য শ্রী অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) ঠাকুরনগরে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের (All India Matua Mahasongha) চলমান অনশন মঞ্চে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের দাবি সমর্থন করেন এবং অনশনরতদের স্বাস্থ্যের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অধীর চৌধুরী অনশনকারীদের অনুরোধ করেন যেন তাঁরা আপাতত অনশন স্থগিত করেন এবং তাঁদের আন্দোলনকে আরও সুসংগঠিত রূপে এগিয়ে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “প্রয়োজনে দিল্লিতে গিয়ে এই দাবি নিয়ে আন্দোলন করা যেতে পারে, আমি সর্বতোভাবে পাশে থাকব।” তিনি আরও আশ্বাস দেন যে, সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিষয়টি তিনি দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে উত্থাপনের উদ্যোগ নেবেন। তাঁর দাবি, কেন্দ্র সরকার যেন সংসদে একটি অর্ডিন্যান্স আনে, যাতে SIR প্রক্রিয়ায় মতুয়া ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সমাজের নাম বাদ না পড়ে। বর্তমান SIR প্রক্রিয়ায় বাংলায় বিপুল সংখ্যক মতুয়া এবং তপশিলি জাতির মানুষের নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই আশঙ্কার প্রতিবাদে গত ৫ নভেম্বর থেকে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ ঠাকুরনগরে আমরণ অনশন শুরু করেছে। গত ১০ নভেম্বর অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের একটি প্রতিনিধি দল দিল্লিতে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর বাসভবনে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে এবং ঠাকুরনগরের অনশন মঞ্চে তাঁর উপস্থিতির অনুরোধ জানায়। সেই আহ্বানেই বৃহস্পতিবার তিনি দিল্লি থেকে ঠাকুরনগরে এসে অনশন মঞ্চে উপস্থিত হন ও মতুয়া সমাজের দাবির প্রতি কংগ্রেসের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
তামান্না এবং অভয়ার জন্য পাল্টা সভা কংগ্রেসের

বিজেপির পর এবার কংগ্রেস। ২১শে জুলাই পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিল মুর্শিদাবাদ জেলা যুব কংগ্রেস। শুক্রবার বহরমপুরে জানালেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ২১শে জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের ‘গ্র্যান্ড ইভেন্ট’। অর্থাৎ শহীদ দিবস পালন। যার পাল্টা হিসাবে ইতিমধ্যেই সেই দিনই উওরকন্যা অভিযানের ডাক দিয়েছে বিজেপি ও যুব মোর্চা। উপস্থিত থাকবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যার অনুমতি ইতিমধ্যে আদালত থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর এবার একই ভাবে একইদিনে আরও একটি পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিলেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তবে এই কর্মসূচি প্রদেশ কংগ্রেসের নামে নয়, করা হবে মুর্শিদাবাদ জেলা যুব কংগ্রেসের নামে। এদিন বহরমপুরে দলীয় কার্যালয়ে বসে অধীর চৌধুরী বলেন, “আমরা একুশে জুলাই সভা করছি পলাশীর প্রান্তরে— ছোট্ট তামান্না এবং আমাদের বোন অভয়া’র বিচারের দাবিতে। কালীগঞ্জে নির্বাচনের পর তৃণমূলের বোমাবাজিতে যে ছোট্ট তামান্নাকে আমরা হারিয়েছি, পাশাপাশি আমাদের বোন অভয়া, এই দুজনকে শহীদের আখ্যা দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা যুব কংগ্রেস এই কর্মসূচি নিয়েছে। ” তবে বিজেপির উত্তরবঙ্গের সভার মতো পলাশীর এই সভার অনুমতি নিতে হয়েছে বলেও দাবি অধীরের। এর পাশাপাশি ২১শে জুলাই নিয়ে কলকাতার পুলিস কমিশনারকে মুচলেখা দিতে বলেছেন কলকাতা হাইকোর্ট। এমনকী সাধারণ মানুষের যেন সমস্যা না হয় সেই বিষয় নিয়ে পুলিশ কমিশনারকে নির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে। এর ফলে আগামী বছর ২১শে জুলাই নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠে আসছে এই প্রসঙ্গ টেনে অধীর বলেন, “একুশে জুলাই যে পুলিশদের গুলিতে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী প্রাণ হারান সেই পুলিশদেরকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরস্কার দিয়েছেন। কেন একুশে জুলাই ঘটেছিল, কারা কারা দোষী, তার তদন্ত করার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই তদন্ত নিয়ে রাজ্য সরকার চুপ। আসলে একুশে জুলাই প্রমোদ ভ্রমণ হয়, পিকনিক হয়। তার জন্য কেন কলকাতার মানুষজন সমস্যায় পড়বে? হাইকোর্ট যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে একদম সঠিক সিদ্ধান্ত।।”
তৃণমূলই তৃণমূলকে শেষ করবে, বিস্ফোরক অধীর

১৩ জুলাই, ২০২৫: রাজ্যে গত তিনদিনে পর পর তিন তৃণমূল নেতা খুন। গত বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে নৃশংস ভাবে খুন হন শওকত মোল্লা ঘনিষ্ঠ দাপুটে তৃণমূল নেতা রেজ্জাক খাঁ। স্বাভাবিক ভাবেই এই খুনের পিছনে ISF-এর হাত আছে বলে অভিযোগ করেছিলেন শওকত মোল্লা। কিন্তু ঘটনার তিন কাটতে না পুলিশি তদন্ত যত এগিয়েছে ততই এই খুনে তৃণমূলের যোগই সামনে এসেছে। রেজ্জাক খুনের মূল অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে মোফাজ্জেল মোল্লাকে। যিনি এলাকায় দাপুটে তৃণমূল নেতা বলেই পরিচিত। বৃহস্পতিবার রাতে মালদার ইংরেজবাজার থানার লক্ষ্মীপুর এলাকায় বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে সেখানেই খুন হন তৃণমূল নেতা আবুল কালাম আজাদ। এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসাবে গ্রেফতার করা হয় মাইনুল শেখ নামে এক তৃণমূল নেতা। জানা যায় তারা দুজনেই একসাথে জমির ব্যবসা করতেন। জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই এই খুন বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। তবে এই দুজনের নামেই বেনামি নানা ব্যবসা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। যদিও জেলা তৃণমূলের তরফে পুরো বিষয়টিকে অস্বীকার করে মহিলা ঘটিত কারণে খুনের তত্ত্বকেই সামনে হাজির করা হয়। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বীরভূমের সাঁইথিয়ায় শনিবার মাঝরাতে বাড়ি থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন করা হয় লাভপুর বিধানসভা এলাকার শ্রীনিধিপুর তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে। যদিও তার পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়, রাজনৈতিক কারণেই তাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু এর পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, না বিরোধী রাজনৈতিক দলের চক্রান্ত— সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি তার পরিবার। তবে পর পর এই তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনার বিষয়ে রবিবার মুর্শিদাবাদের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি স্পষ্টতই জানান— “তৃণমূল মানেই গুণ্ডা-মাফিয়াদের রাজত্ব। এরাই দলের সম্পদ। এরাই এখন নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগির অংশীদারি নিয়ে একে অন্যকে খুন করছে। এটা আসলে ভাগ-বাটোয়ারার লড়াই। এভাবেই তৃণমূলের হাতে তৃণমূল খুন হতে হতে একদিন দলটাই শেষ হয়ে যাবে। বিরোধীদের এ রাজ্যে ক্ষমতা আছে যে, তারা তৃণমূল নেতাদের খুন করবে। এটা পরিষ্কার ওদের নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এরাই তো ভোটে ভয় দেখিয়ে, বুথ দখল করে জিতিয়েছে তৃণমূলকে। এখন ঝেড়ে ফেলতে চাইলেও পারবে না।