মুখ্যমন্ত্রীর থেকে ভাইফোঁটা, নির্বাচনেও লড়বেন শোভন!

বড় দায়িত্ব পাওয়ার পরই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ভাইফোঁটা নিতে গেলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়(Sovan Chatterjee)। প্রতিবারই এই দিনটিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) বাড়িতে ধুমধাম করে পালন হয় ভাইফোঁটা। সেখানেই উপস্থিত থাকেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বরা। এবার সেখানেই বড় চমক শোভন চট্টোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ভাই ফোঁটা নিতে উপস্থিত হন শোভন। কয়েকদিন আগেই এনকেডিএ-র চেয়ারম্যানের পদে বসেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়(Sovan Chatterjee)। আর তৃণমূল নেতৃীর বাড়িতে ভাইফোঁটা নিতেই শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন জল্পনা। পদ পাওয়ার পর এবার কী শোভন চট্টোপাধ্যায়(Sovan Chatterjee) ফের ভোটে দাঁড়াতে চলেছেন। সবকিছু যেন তারই একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর উত্তর বঙ্গ সফরের সময় তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। এরপরই এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান পদে বসা। অর্থাৎ শোভনের তৃণমূলে ফেরার ঘোষণাটা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। তবে জল্পনাটা হল তাঁর ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে। বিশেষ করে ভাইফোঁটা নিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আসার পর থেকেই শোভনের নির্বাচনে লড়াই নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ কয়েকদিন আগেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেন্দ্রে পোস্টার পড়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। তবে কী এবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এলাকা থেকে বিধানসভা নিুর্বাচনে লড়তে চলেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়! এই নিয়ে অবশ্য এখনই মুখ খোলেনি কেউ। কিন্তু কানভুষো এমনটাই চলছে। তৃণমূলের সঙ্গে একসময় দুরন্ত তৈরি হলেও, ধীরে ধীরে সেই ব্যবধান কমছে বলেই শোনাযাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের এনকেডিএ-র পদ পাওয়াটা। বিধানসভার আগে এবার বহু চমক রয়েছে। শেষপর্যন্ত কী হয় সেটাই দেখার অপেক্ষাতে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক মহল।
এসআইআর নিয়ে ফের সুর চড়ালেন শান্তনু, পাল্টা জবাব তৃণমূলেরও

নির্বাচনের দিন যত এগোচ্ছে ততই এসআইআর(SIR) নিয়ে সুর চড়াতে শুরু করেছে বিজেপি(BJP)। সেইসঙ্গে পাল্টা দিচ্ছে রাজ্যের শাসক দলও(TMC)। এই মুহূর্তে নির্বাচনের আগে যে এসআইআরই প্রধান আলোচনার বিষয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই নিয়েই এবার ফের একবার বিস্ফোরক বিজেপি(BJP) সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর(Shantanu Thakur)। আবারও তিনি বললেন এসআইআর-এ(SIR) নাকি এক কোটি ২০ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ যেতে চলেছে। সেইসঙ্গে এবারই নাকি ১৬০ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি। বেশ কয়েকদিন আগেও এই একই বিষয় নিয়ে সরব হয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুর(Shantanu Thakur)। সেই সময় বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিল কীভাবে তিনি এই সংখ্যাটা বলছেন। এসআইআর নিয়ে বিজেপির চক্রান্তের কথাও বলতে পিছপা হননি তৃণমূলের(TMC) নেতারা। কিন্তু শান্তনু ঠাকুর রয়েছেন তাঁর মেজাজেই। নির্বাচনের আগে বারবার সেই এসআইআর অস্ত্রেই শান দিচ্ছে বিজেপি। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ২ নাম্বার মণ্ডল বিজেপির উদ্যোগে হেলেঞ্চা বাজারে একটি লজে বিজয়া সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল শুক্রবার । এই বিজয় সম্মেলনকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর , বনগাঁ জেলা বিজেপি সভাপতি বিকাশ ঘোষ , প্রাক্তন জেলা বিজেপি সভাপতি দেবদাস মন্ডল সহ বিজেপি নেতৃত্ব । এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবারো কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তু ঠাকুর বলেন এস আই আর হলে এক কোটি কুড়ি লক্ষ্য ভোট বাদ যাবে । আগে তার বক্তব্য নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধিতা করেছেন সে বিষয়ে তিনি বলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে এই বিষয়ে তার এত গাত্রদহ কেন ? এস আই আর হলে ১৬০ সিটের বেশি আসনে জিতে বিজেপি ২০২৬ সালে সরকারে আসবে । এবং উত্তর চব্বিশ পরগনায় বাগদা , বনগাঁ উত্তর, বনগা দক্ষিণ , গাইঘাটা এই চারটি আসনে বিজেপি জয়ী হবে এই বিষয়ে তৃণমূলকে তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন । এবং তিনি ডাক দিয়েছেন বাগদা থেকে তৃণমূল নিপাত যাক । শান্তনু ঠাকুরের এমন মন্তব্যের পাল্টা দিতে অবশ্য ছাড়েনি তৃণমূল কংগ্রেসও(TMC)। তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের(Bishwajit Das) সাফ বার্তা, ১৬০ আসন স্বপ্ন, এবার নাকি বিজেপি রাজ্যে বিরোধি দলের তকমাও হারাবে। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই এসআইআর নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চাপান উতের বেড়েই চলেছে। ১৬০ আসনের বেশি পেয়ে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে এই প্রসঙ্গে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন বনগাঁ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস এই স্বপ্ন দূর স্বপ্ন এবার বিরোধীদলের তকমা হারাবে বিজেপি । কর্মীদের চাঙ্গা করতে এই সমস্ত বলছে । পার্থ ভৌমিকের প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুরের বক্তব্য নিয়ে বিশ্বজিৎ দাস বলেছেন ও কুয়োর ব্যাংক সেই কারণে এই ধরনের মন্তব্য করেছেন । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত সাহা পরিযায়ী ।
ভোট অঙ্কে কংগ্রেসের অস্ত্রও এবার মতুয়া! ঠাকুরনগরে সত্যাগ্রহের ডাক কংগ্রেসের

বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় কংগ্রেস পার্টি(Congress) অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন উত্তর ২৪ পরগনা গ্রামীন জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ইন্দ্রানী দত্ত চ্যাটার্জি। সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি জানান, ভোটের আগে নাগরিকত্ব ইস্যুতে মতুয়াদের(Motua) বিপদে ফেলা হচ্ছে। ঠাকুর বাড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা তারা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি নিজে ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন মতুয়ারা তার কাছে বিভিন্ন অভিযোগের কথা বলেছিলেন। মতুয়াদের(Motua) নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করতে মতুয়াদেত সার্বিক উন্নয়ন এবং জাতি গণনার দাবীতে ঠাকুরনগর স্টেশন সংলগ্ন ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তির পাদদেশে সত্যাগ্রহ করবেন তারা। ইন্দ্রানির দাবি, কেন্দ্র সরকার যত তাড়াতাড়ি জাতি গণনা শুরু করবে তত তাড়াতাড়ি মতুয়ারা স্বীকৃতি পাবে। কংগ্রেসের এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছে শান্তনু ঠাকুর পন্থী অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সুখেন গাইন। তিনি বলেন, মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষেরা হয়রানি হয়েছে কংগ্রেসের কারণে। পূর্ব বাংলার মানুষেরা উদ্বাস্তু হওয়ার পেছনেই কংগ্রেস। আজকের মতুয়া দরদী হয়েছেন সামনে ভোট আসছে তাই মতো। মতুয়াদের ভোট দরকার? মতুয়াদের জন্য কি করেছেন? অন্যদিকে মমতা ঠাকুর পন্থী অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সুকেশ চৌধুরী বলেন, দেশ ভাগের পরে ওপার বাংলা থেকে আসা মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করার জন্য কংগ্রেস কখনো ভাবেনি। কংগ্রেস এই পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে মতুয়া এবং উদ্বাস্তু মানুষেরা বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দিতে হয়েছে । হয়রানি হচ্ছে। এই হয়রানির দায় কংগ্রেসও এড়াতে পারে না। এখন যদি তারা রাজনীতি করতে না এসে সত্যি সত্যি মতুয়াদের অসুবিধা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে চায় তাহলে তাদের স্বাগতম। এই বিষয়ে বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল বলেন, এভাবে রাজনীতিতে ভেসে থাকা যায় না। কংগ্রেসের কথা কেউ শোনেনা। মতুয়ার নাগরিকত্বের জন্য ঠাকুরবাড়িতে যাচ্ছে এবং তারা নাগরিকত্ব পাচ্ছে।
সুকান্ত গড়ে ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের গড় হিসাবে পরিচিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলায় ৬টি আসনের মধ্যে ৫টিতে জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ফল আশানুরূপ হয়নি। ৬টার মধ্যে মাত্র ৩টিতে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু ২৬শে বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬টি আসনের সবকটিতেই জয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে নাকি জেলা নেতৃত্বকে পুরনো ফল পর্যালোচনা করে খামতি পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন থেকেই ২৬শের নির্বাচনকে পাখির চোখ করতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল। সেইমতো প্রস্তুতিও জোরকদমে শুরু করে দিয়েছে। জেলার সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে প্রতি সপ্তাহেই নিয়ম করে ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকের নির্বাচনের রণকৌশল তৈরির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানো এবং দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে নির্মূল করার দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের কাছে রীতিমত প্রেস্টিজ ফাইট বলা যায়। কেননা এই লোকসভা কেন্দ্র থেকেই জিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তাই এই জেলাতে হারানো জমি ফেরত পেতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। এই আবহে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ৬টি আসনের ৬টিতেই জয়ের বার্তাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই দেখছেন সংশ্লিষ্ট মহল। তৃণমূলের হাইকমান্ডের তরফে নির্দেশ পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা নেতৃত্বও। কেননা এই অভিষেকের নির্দেশ মেনে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে যে কড়া টক্কর দিতে হবে বিজেপিকে সেকথাও স্বীকারও করেছেন তৃণমূল মন্ত্রী তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর বিধানসভার বিধায়ক বিপ্লব মিত্র। তাঁরা যে প্রস্তুতিতে কোনও ধরনের খামতি রাখতে চাইছেন না, তাও স্পষ্ট করে দেন তিনি। এখন দেখার ২৬শে নির্বাচনে দক্ষিণ দিনাজপুরে আবারও ঘাসফুল ফোটে কিনা।
আগামী মঙ্গলবার বর্ধমান সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

২৬শে বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে আগামী মঙ্গলবার বর্ধমান সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৬ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি থাকছে একগুচ্ছ দলীয় কর্মসূচি। বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি যে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অনেক আগেই শুরু করে দিয়েছিল তা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফর থেকেই স্পষ্ট। এর আগে বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙালি অস্মিতায় শান দিয়ে ভাষা আন্দোলন উপলক্ষ্যে বীরভূম এবং ঝাড়গ্রাম সফর করেছিলেন মমতা। এবার তাঁর লক্ষ্য পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা। সেখানে একাধিক প্রকল্প উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রশাসনিক বৈঠকও করবেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ২৬ আগস্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান পৌঁছেই প্রশাসনিক সভা করবেন বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েদ হাইস্কুলের মাঠে। মুখ্যমন্ত্রীর সেই সভায় উপস্থিত থাকার কথা দুই জেলার প্রশাসনিক কর্তা, বিধায়ক ও সাংসদদের। এই সভা থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকজন উপভোক্তার হাতে পাট্টা তুলে দেবেন। দুই জেলার প্রশাসনিক বৈঠক শুরু হবে দুপুর ১২টা থেকে। এই বৈঠকের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই জেলার মোট ৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। প্রশাসনিক বৈঠক সেরে আবার ওই দিনই কলকাতায় ফেরার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। অন্তত এখনও পর্যন্ত নবান্ন সূত্রে এমনটাই জানা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই একদিনের সফর ঘিরে নিরাপত্তা আঁটোসাটো করতে বর্ধমান জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি হয়ে গেছে। ২৬শে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে সরিয়ে সংগঠনকে আরও মজবুত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের কাছে। তাই দলের গোষ্ঠীকোন্দল রুখতে ইতিমধ্যেই দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি সপ্তাহে তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে নিয়ম করে ডেকে পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন জেলা নেতৃত্বদের। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে জেলার সমস্যা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি নির্বাচনী রণকৌশলও তৈরি করে দিচ্ছেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এমনকী সম্প্রতি বীরভূম সফরে গিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও দেখা গেছে কাজল শেখ ও অনুব্রত মণ্ডলকে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিতে। এর ফলে এটা স্পষ্ট যে, ২৬শে নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে অলআউট ঝাঁপানোর আগে দলের গোষ্ঠীকোন্দল যেন বিড়ম্বনায় না ফেলে তৃণমূল কংগ্রেসকে। তার সব রকম প্রস্তুতি এখন থেকেই সেরে ফেলতে চাইছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর ঘন ঘন জেলা সফরও সেই সম্ভাবনাকেই জোরালো করছে।
শুভেন্দু গড়ে ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া অভিষেক, তমলুক ও বারাসত নিয়ে আজ বৈঠকে বসছেন

বর্তমানে সংসদে তৃণমূলের চিফ হুইপের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে স্বভাবতই ব্যস্ততা বেড়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু তার মধ্যেও ২৬শে বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নতুন করে দলের সংগঠন সাজাতে তৎপর তিনি। আর সেই উদ্দেশ্যেই প্রতি সপ্তাহে এক একটা জেলা ধরে ধরে তাদের নেতৃত্বদের সঙ্গে নিজে বৈঠকে বসছেন তৃণমূলের এই সেকেন্ড-ইন কমান্ড। সেই বৈঠকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে যেমন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, তেমনই আগামী নির্বাচনের রণকৌশলও তৈরি করে দিচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেননা ২৬শে নির্বাচনের আগে দলের সংগঠনকে আরও মজবুত করতে না পারলে বিজেপির সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যে মোটেও সহজ হবে না, তা ভালো মতোই জানেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আর তাই জেলা স্তরের নেতারাদের সঙ্গে কথা বলে সাংগঠনিক খামতি পূরণে মরিয়া তিনি। কেননা বিজেপিকে এই রাজ্যে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে যে চ্যালেঞ্জ তিনি নিয়েছিলেন তা কার্যকর করতে হলে সবার আগে তৃণমূল স্তরের সংগঠনকে যে আরও শক্তিশালী করতে হবে তা ভালো মতোই জানেন অভিষেক। তাই জেলা স্তরের নেতারা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে তাই নিয়ম মাফিক ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে জেলা স্তরের নেতারাদের নিয়ে মিটিং সারছেন তিনি। গত সপ্তাহে মালদা ও মুর্শিদাবাদ নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠকের পর আজ, অর্থাৎ মঙ্গলবার অভিষেক ডেকে পাঠিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক সাংগঠনিক কেন্দ্রের নেতৃত্বদের। সেই সঙ্গে আজ ক্যামাক স্ট্রিটের বৈঠক থাকবেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বও। এই বৈঠকে থাকার কথা দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিরও। সব মিলিয়ে আজকের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পূর্ব মেদিনীপুর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় নামে পরিচিত। এখানেই গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন শুভেন্দু। এমনকী গত লোকসভা নির্বাচনেও এই জেলার ১৪টির মধ্যে ১৩টি বিধানসভাতেই তৃণমূল হেরে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে বঙ্গ রাজনীতির হাইভোল্টজ কেন্দ্র বলেই পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুর। তাছাড়া এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং দলের একাংশের বিরোধী দলের সঙ্গে যোগসাজশ রাখা নিয়ে মাঝেমধ্যেই অভিযোগ ওঠে। সেসব নিয়েই আজ বৈঠকে বসছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। শুভেন্দুর গড়ে ঘাসফুল ফোটাতে জেলা নেতৃত্বকে কী বার্তা দেন অভিষেক সেদিকেই নজর সকলের। পাশাপাশি বারাসতের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র নিয়েও নতুন কী রণকৌশল সাজান অভিষেক তা নিয়েও কৌতূহলী রাজনৈতিক মহল। কেননা এই কেন্দ্র থেকে নানান সময়ে নাগরিক পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ সামনে এসেছে। ফলে এসবের বিরুদ্ধে জেলা নেতৃত্বকে কী দাওয়াই দেন অভিষেক, তাও তাৎপর্যপূর্ণ। গতকালই দিল্লি থেকে ফিরেই আজ হাইভোল্টজ বৈঠকে বসছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। এর থেকেই স্পষ্ট যে নির্বাচনের আগে নতুন করে বিজেপির বিরুদ্ধে রণকৌশল তৈরিতে তৎপর তৃণমূল। কেননা ২৬শে বিজেপির বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে সহজ জয় হাসিল করাই যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই লক্ষ্যের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘এক ইঞ্চি জমিও কাউকে ছাড়া হবে না’— অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

ভোটের ঢাকে কাঠি বাজিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৬-কে সামনে রেখে জোরকদমে ভোটের ময়দানে রাজ্যের শাসক দল। একাধিক ইস্যুতে, বিশেষ করে এসআইআর বা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের উপর নির্যাতনের ঘটনা সহ একাধিক ইস্যুতে ইতিমধ্যে ময়দানে রাজ্যের শাসক দল। আরও ভালো করে বললে ভোটের ক্রিজে এখন থেকেই হাফ সেঞ্চুরি করার পথে জোড়া ফুল শিবির। সোমবার নির্বাচনী প্রস্তুতিতে জেলা ধরে ধরে বৈঠক শুরু করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে সোমবার ক্যামাক স্ট্রিটে বৈঠক করেন তিনি। আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার এই দুই জেলা নিয়ে বৈঠক হয়। তবে নির্বাচনের আগে যে কোনোভাবেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রেয়াত করা হবে না এই দুই জেলার নেতৃত্বকে রীতিমত বুঝিয়ে দেন তিনি। পাশাপাশি নির্বাচনে যে রাজ্যের শাসক দল ‘অল-আউট’ খেলতে নামবে সেই বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, “সবাইকে সবার সাথে চলতে হবে। কোনও ভাবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রাখবেন না। এক ইঞ্চি জমিও কাউকে ছাড়া হবে না।” ২০২১-এর বিধানসভা ও ২০১৯ সালের লোকসভায় উত্তরবঙ্গ জুড়ে রীতিমত লজ্জাজনক ফলাফল হয় তৃণমূলের, যার মধ্যে অন্যতম ছিল এই দুই জেলাও। তবে ২০২৪-এর লোকসভায় কিছুটা হলেও মান রক্ষা হয় কোচবিহারে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে কোচবিহার জেলা নেতৃত্বকে অভিষেকের নির্দেশ, ‘‘কোচবিহারে লোকসভার ফল ধরে রাখতেই হবে। ব্লক ভিত্তিক প্রচারে আরও বেশি করে জোর দিতে হবে।” অসম সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এই বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলনকে আরও সক্রিয় করতে হবে বলে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “অসম সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলা ভাষা আন্দোলনে আরও জোর দিতে হবে।” জেলার বাইরে বা নিজের এলাকার বাইরে আর সময় কাটানো বা সংগঠন নয়, নেতাদের এবার থেকে নিজের এলাকাতেই সব জায়গায় প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করতে হবে বলেও বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, “নিজের এলাকায় বেশি করে সময় দাও। যত বেশি সম্ভব এলাকায় সময় কাটান। পাড়ায় উপস্থিত থেকে বুঝবেন মানুষ কী চাইছে। সেই অসুবিধা দূর করতে হবে।’’ সোমবার থেকে জেলাওয়াড়ি বৈঠক শুরু করেছেন অভিষেক। বুধবার বৈঠক হবে মালদহ ও জলপাইগুড়ির। বৃহস্পতিবার বৈঠক হবে দক্ষিণ দিনাজপুর ও জঙ্গিপুর নিয়ে। এরপরেই ১১ অগাস্ট বৈঠক হবে উত্তর দিনাজপুর জেলা নিয়ে। বৈঠকে থাকবেন জেলা সভাপতি, চেয়ারম্যান, যুব সভাপতি, সকল বিধায়ক ও সাংসদরা। আগামিকাল জেলার ১৯ জায়গায় প্রতিবাদ সভা হবে। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহ থেকেই জেলা ও ব্লক স্তরে সংগঠন পদাধিকারীদের নাম প্রকাশ হবে। জনসংযোগে দক্ষ এমন নেতাদের সামনে রেখেই এগোবে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এক ব্যক্তি এক পদ নীতি সামনে রেখে এই প্রক্রিয়া এগোতে পারে। সমস্ত জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ৫ তারিখের বৈঠকে প্রায় ৯ হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।