বিহারে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর(SIR)-এর বাদ পড়েছে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম। যা নিয়ে রীতিমত উত্তাল দিল্লির রাজনীতি। সংসদ এবং সংসদের বাইরেও এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। এমনকী এসআইআর-এর নাম করে কেন্দ্রীয় সরকার এনআরসি(NRC) চালু করতে চাইছে বলে অভিযোগ তাদের। নির্বাচন কমিশনের গত ২৪ জুনের এসআইআর সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগও জানিয়েছিল। তাদের দাবি, কমিশনের এই পদক্ষেপ সংবিধানের ১৪, ১৯, ২১, ৩২৫ এবং ৩২৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী এবং ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং ১৯৬০ সালের ভোটার রেজিস্ট্রেশন রুলসের অধীনে নির্ধারিত পদ্ধতি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেন যে, ভোটার-আধার ও রেশন কার্ডের মতো জরুরি বিষয়কে এই সমীক্ষার অঙ্গ হিসাবে ধার্য্য করা হচ্ছে না। যদিও সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনকে এই বিষয়ে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছিল। কিন্তু শীর্ষ আদালত কোনও ভাবেই তাদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চায়নি।
কিন্তু বিহারে অন্তত ১৫ জন ভোটারের নাম তালিকা থেকে মৃত বলে বাদ দেওয়া হলেও তাঁরা এখনও বেঁচে আছেন, এই অভিযোগ সামনে আসতেই নির্বাচন কমিশনকে কড়া হুঁশিয়ার দিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় কোনও অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে তারা হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা করবে না। এর আগে নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল যে বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের(SIR) পরে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এবং তার প্রতিলিপি সমস্ত রাজনৈতিক দলকে দেওয়া হয়েছে। এমনকী তাদের ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হয়েছে। কিন্তু এদিন আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে আইনজীবী কপিল সিব্বল এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আবারও অভিযোগ জানিয়েছেন, যে ১ অগস্ট নির্বাচন কমিশন যে খসড়া তালিকা প্রকাশ করবে তা থেকে মানুষকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার হারাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, যে নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা এবং তাদের আইন অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং যদি কোনও অন্যায় ঘটে থাকে তবে আবেদনকারীরা এটি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষ থেকে অভিযোগকারীদের স্পষ্ট জানানো হয়েছে, “যে ১৫ জনকে ওরা মৃত বলে দাবি করেছে, কিন্তু তারা বেঁচে আছে, তাদের আপনারা সামনে নিয়ে আসুন, আমরা ব্যবস্থা নেব।”
সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আবেদনকারীদের এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার জন্য নোডাল অফিসার নিয়োগ করেছে। নির্বাচন কমিশনের এসআইআর প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা পিটিশন বিবেচনার জন্য আগামী ১২ ও ১৩ অগস্ট সময়সীমা বেঁধে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আবেদনকারীদের আগামী ৮ অগস্টের মধ্যে লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন শীর্ষ আদালতে শুনানি শেষে আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, “কমিশন এসআইআর প্রক্রিয়ায় যেভাবে বিহারে প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে, তা গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন। আমরা এই বিষয়টাতে মহামান্য শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছি।”







