প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী সপ্তাহে বন্যা ও ভূমিধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য সফর করবেন। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ভারী বর্ষার কারণে ভারতের উত্তর অঞ্চলের রাজ্যগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে ঘরবাড়ি। প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ এই ক্ষতির সম্মুখীন। তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতেই প্রধানমন্ত্রীর এই সফর। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, মোদীর সফরসূচীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির দিকে নজর দেওয়া হবে, যেখানে তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করবেন, ত্রাণ দেওয়া নিয়ে পর্যালোচনা করবেন এবং সরকারি সহায়তার আশ্বাস দেবেন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলির মধ্যে উপরের সারিতে রয়েছে হিমাচল প্রদেশ। রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৬০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে। কমপক্ষে ১০৮৭টি রাস্তা অবরুদ্ধ, ২৮৩৮টি বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন এবং ৫০৯টি জল সরবরাহ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৯.৭ বিলিয়ন (৪৭৮ মিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিশেষ করে বার্ষিক মণিমহেশ যাত্রার সময় আটকে পড়া তীর্থযাত্রীদের সাহায্যের জন্য ভারতীয় বিমান বাহিনীকে উদ্ধার অভিযানের জন্য একত্রিত করা হয়েছে।
প্রতিবেশী পাঞ্জাবের কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতিকে কয়েক দশকের মধ্যে রাজ্যের সবচেয়ে খারাপ বিপর্যয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ২৩টি জেলার ১৯০০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত রয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রায় ১৭১,০০০ হেক্টর ফসল নষ্ট হয়েছে, যা রাজ্যের কৃষিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পঞ্জাব সরকার নয়াদিল্লির কাছে একটি বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের আবেদন করেছে। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এই সপ্তাহের শুরুতে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলি পরিদর্শন করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি বিস্তারিত মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করছেন।
কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের পর জম্মু ও কাশ্মীরে বন্যার জল কমতে শুরু করেছে, যা কিছুটা স্বস্তির খবর। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর আগামী ২৪ ঘন্টায় আর নতুন করে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়নি, শুধুমাত্র বিক্ষিপ্ত কয়েকটি জায়গা ছাড়া। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সভাপতিত্বে শুক্রবার একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলি শক্তিশালীকরণ এবং জলের তলায় থাকা গ্রামগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য রাজ্য জুড়ে চব্বিশ ঘন্টার হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে।
উত্তরাখণ্ড এবং অন্যান্য হিমালয় রাজ্যগুলিতেও মারাত্মক আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধ্বসের খবর পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ত্রাণ দলগুলি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা পুনরুদ্ধার, আটকে পড়া বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ বিতরণের জন্য একসাথে কাজ করছে।
আধিকারিকরা জোর দিয়ে বলেন যে, মোদীর সফরের উদ্দেশ্য হল বিপর্যয়ের মাত্রা সরাসরি মূল্যায়ন করা এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিকে অগ্রাধিকার দেবেন এবং উদ্ধার ও পুনর্বাসন ত্বরান্বিত করতে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে সমন্বয় স্থাপন করবেন।”
নদীগুলি এখনও বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ভূমিধ্বসের ফলে প্রধান পরিবহন পথগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়েছে যে মানবিক সংকট এখনও শেষ হয়নি। তাঁরা বলেন, এই বর্ষাকাল কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।







