চাষের কারণে অনেক সময় কৃষকরা ব্যবহার করেন কার্বাইড গান(Carbide Gun)। কিন্তু এবারের দীপাবলিতে হঠাৎই চর্চায় সেই বাড়িতে বানানো কার্বাইড গান(Carbide Gun)। আর তাতেই দৃষ্টি শক্তি হারাতে বসেছে মালদার ৯ শিশু। সেই খবরেই এখন তোলপাড়। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে। আসলে চাষের জন্য ব্যবহৃত কার্বাইড গান এখন যে মানুষের খেলনায় পরিণত হয়েছে। দীপাবলির(Diwali) উৎসবে অন্যতম বাজি হয়ে উঠেছে এই ভয়ঙ্কর যন্ত্র। আর তাতেই বলি ৯ শিশু।
পলকা জিনিস দিয়ে তৈরি এই কার্বাইড গান(Carbide Gun) যে ছেয়ে গিয়েছে বিভিন্ন জায়গাতে। পিভিসি পাইপ(PVC Pipe) দিয়ে নিজেদের বাড়িতেই বানিয়ে ফেলা হচ্ছে এই কার্বাইড গান। যার নিরাপত্তা একেবারেই শূন্য। সেই বন্দুক ফাটাতে গিয়েই বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন মালদার(Maldaha) ৯জন শিশু। এর আগেই এই একই ঘটনায় মধ্যপ্রদেশে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন বেশ কিছু শিশু। অচিরেই যে নিজের ঘরের ছোটদের বিপদ ডেকে আনছেন অভিভাবকরা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মালদার চক্ষু চিকিৎসক দেবদাস মুখার্জির কাছে পাঁচজন, মলয় সরকারের কাছে একজন এবং সৌরভ পোদ্দারের কাছে দুইজনের চিকিৎসা চলছে। এক চিকিৎসকের দাবি মানিকচকের মহানন্দটোলার এক শিশুকে চিকিৎসার জন্য ওই পরিবারের লোকজন নিয়ে গিয়েছেন নেপালে।
এই ঘটনায় চক্ষু বিশেষজ্ঞদের বিশ্বের বৃহত্তম পেশাদার সমিতি, অল ইন্ডিয়া অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এবং জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি জরুরি জাতীয় আবেদন জারি করেছে। যাতে কার্বাইড-ভিত্তিক এবং ইম্প্রোভাইজড বিস্ফোরক আতশবাজি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসক মলয় সরকার।
মালদা শহরের খ্যাতনামা চক্ষু বিশেষজ্ঞ দেবদাস মুখার্জির কাছে চোখ দেখাতে এসেছিল বছর ১৩-র কিশোর আকাশ বিশ্বাস। তার বাড়ি গাজোলের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। কিভাবে চোখে আঘাত পেয়েছে জানতে চাইলে ওই কিশোর জানায়, ‘আমি ইউটিউব দেখে বাড়িতে থাকা খালি জলের বোতল আর কার্বাইড দিয়ে ওই বন্দুক বানিয়ে ছিলাম। গ্যাসের ওভেন ধরানোর লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালাতেই বিস্ফোরণ হয়ে যায় হাতে। আমার চোখে আঘাত লাগে। বাড়িতে এসে জল দিয়ে বার বার চোখ ধুয়েছি। কিন্তু এখনও সব ঠিকভাবে দেখতে পাচ্ছি না।’ ছোট্ট কিশোরের কাছ থেকে একথা শুনে রীতিমতো বিরক্ত চিকিৎসক দেবদাস মুখার্জি। তাঁর মন্তব্য, ‘আপনারা যাদের জেন এক্স বলেন, তারা বড্ড অবাধ্য। কোনও ভালো কথা শোনে না। ইউটিউবে অনেক ভালো ভালো জিনিসও দেখা যায়। কিন্তু কেউ দেখে না। দেখে কে কোন খারাপ কাজ করে বেড়াচ্ছে। আর তা দেখে সেগুলো শিখে নেয়। আর সেগুলো করতে গিয়েই বিপদে পড়ে। দেখেন হয়তো কেউ কেউ বাড়িতে বসে সত্যিকারে বোম বানাচ্ছে বন্দুক বানাচ্ছে। এসব তো এখন দেখা যায় ইউটিউবে। তাই এদের সতর্ক করার কোনও মানে হয় না।’
হবিবপুর থেকে একইভাবে আহত বছর ২০-র তরুণ কিশোর বিশ্বাস এসেছিলেন মালদা শহরের মকদুমপুরের আর এক চক্ষু চিকিৎসক সৌগত পোদ্দারের কাছে। কিশোর বিশ্বাস জানান, তাদের গ্রামেরই একটি ছেলে সেই কার্বাইড গান তৈরি করেছিল। তাতে আগুন ধরে যায়। নেভানোর সময় হাত লেগে যায় কার্বাইডে। ভুলবশত সেই হাত চোখে লাগে। তারপর থেকেই সমস্যা বেড়ে যায়। এখন চোখে ঝাপসা দেখছি।’ চিকিৎসক সৌগত পোদ্দারের মন্তব্য, ‘গাজোলের ভৈরব রায় নামে এক শিশু এসেছিল। চিকিৎসা করাতে। তার রেটিনার ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নর্মাল স্যালাইন দিয়ে ক্রমাগত ওয়াশ করার পর এখন অবজার্ভে রাখা হয়েছে। দুটি ক্ষেত্রেই উঠে আসছে সেই কার্বাইড গানের কথা। এক ভয়ঙ্কর। আসলে কার্বাইড মালদায় সহজলভ্য। কারণ এই কার্বাইড দিয়েই আম পাকানো হয়। আর তাই গ্রামগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতেই থাকে।’
কার্বাইড গান আসলে কি? কী ভাবে বানাতে হবে, খুব সহজেই সেই কৌশল মিলছে ফেসবুক, ইউটিউবের মতো সমাজমাধ্যমে। স্রেফ প্লাস্টিকের পাইপে কার্বাইড দিয়ে উপরে সামান্য জল ফেলে পাইপ জোরে ঝাঁকালেই বিকট আওয়াজে বাজি ফাটছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই কার্বাইড গান কোনও খেলার জিনিস নয়, এটি আসলে বিস্ফোরক। মালদা শহরের আরেক চক্ষু চিকিৎসক অমিতেন্দু সাহা জানান, ‘ক্যালসিয়াম কার্বাইড আর জলের বিক্রিয়ায় তৈরি হয় দাহ্য গ্যাস অ্যাসিটিলিন। তার জেরেই বিস্ফোরণ ঘটছে। আর তা চোখে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দৃষ্টি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখনও পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছি মালদা জেলায় এমন একজন রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়। তবে অভিভাবকদের প্রচন্ড সতর্ক হতে হবে। সন্তানদের বোঝাতে হবে এই বিস্ফোরক নিয়ে খেলা কতটা বিপদজনক।’







