গত বছর অগস্ট মাসে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকার ‘অপরাজিতা’ বিল পাশ করিয়েছিল। আরজি করের ঘটনায় প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাই ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকার যে কড়া অবস্থান নিচ্ছে, তা বোঝাতে বিধানসভায় পাশ করা হয় ‘অপরাজিতা’ বিল। এমনকী এই বিলে ছিল মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশও। গত বছর বিধানসভায় ওই বিল পাশ হওয়ার পর তা পাঠানো হয় রাজভবনে। তারপর সেটি ছিল রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই বিল আবার ফিরে এল রাজ্য সরকারের কাছে। ‘অপরাজিতা’ বিল ফেরত পাঠালেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজভবনের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই বিল অত্যন্ত কঠোর এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ওই বিল সংবিধানের নির্দিষ্ট কিছু বিধির পরিপন্থী। এমনকী শীর্ষ আদালতের রায়েরও পরিপন্থী বলে কেন্দ্রের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে। অন্যসব বিলে রাজ্যপাল নিজেই সাধারণত সই করেন, কিন্তু এটি স্পর্শকাতর বিষয় সংক্রান্ত হওয়ায় তা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হল বিল।
‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ২০২৩ এর ৬৪ নম্বর ধারা সংশোধনের মাধ্যমে ধর্ষণের শাস্তি বাড়িয়ে ১০ বছরের পরিবর্তে যাবজ্জীবন (আজীবনের জন্য) বা মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে অপরাজিতা বিলে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই সংশোধনীকে অতিরিক্ত কঠোর ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে। বিলটিতে ৬৫ নম্বর ধারা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ১৬ বছরের নীচে ও ১২ বছরের নীচে ধর্ষণের শাস্তির মধ্যে যে পার্থক্য ছিল, তা মুছে ফেলার কথা বলা হয়েছে।
বিলের ৬৬ নম্বর ধারায় ধর্ষণের ফলে নির্যাতিতার মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডকে বাধ্যতামূলক বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পর্যবেক্ষণ, এতে বিচার ব্যবস্থার বিবেচনার স্বাধীনতা লঙ্ঘণ হবে। আর সেই কারণেই রাজভবন অপরাজিতা বিল রাজ্য সরকারের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে বলে রাজভবন সূত্রের খবর।
অন্যদিকে ‘অপরাজিতা’ বিল ফেরত পাঠানোয় কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপিকে আবারও নিশানা করলেন রাজ্যের শাসক দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “এতে আবারও প্রমাণ হয়ে গেল যে এই বিজেপি নারী নির্যাতনকারীদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিতে প্রস্তুত নয়। কারণ এদেরই সাংসদরা শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত, তাঁদের পাশে নিয়ে বসে থাকে। এদের রাজ্যগুলিতেই পরপর ধর্ষণ-খুনের মতো ঘটনা ঘটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের স্বার্থে, মা-বোনেদের স্বার্থে ভারতের মধ্যে নজিরবিহীন যে বিল পাশ করিয়েছিলেন, তাতে অনুমোদন না দেওয়ায় বিজেপির দ্বিচারিতার মুখোশ খুলে গেল।” সব মিলিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোরের ফলে এই বিলের ভবিষ্যৎ যেন অনিশ্চিত হয়ে পড়ল তা বলা যায়।







