এ বছর রাজ্যে প্রথম ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কলকাতার বাসিন্দা ৭৫ বছরের স্বরূপ মুখোপাধ্যায়ের। এবার মৃত্যু হল আরও এক ডেঙ্গি আক্রান্তের। বেহালার গাবতলা লেনের বাসিন্দা বছর ৩৫-এর অরিজিৎ দাস গত কয়েক দিন আগে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন স্কুল অফ ট্রপিক্যালের মেডিসিন বিভাগে। সেখানেই গত শুক্রবার মৃত্যু হয় তাঁর। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসাবে ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ করা হয়েছে। এই নিয়ে এবছর এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে দু জনের মৃত্যু হল।
স্বাস্থ্য ভবনের রিপোর্ট বলছে, রাজ্যে এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০২০ জন। সেখানে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ৩২২০ জনের ডেঙ্গি রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। অর্থাৎ, গত আড়াই মাসে ডেঙ্গিতে অন্তত ২২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন— যা রীতিমত উদ্বেগের। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে আরও জানানো হয়েছে যে, গত জুলাই মাসের পর থেকে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার প্রমাণ কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বছর বঙ্গে এমনিতেই বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার দরুন জল জমে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বদ্ধ জমা জলে মশাদের বংশ বিস্তারও তরান্বিত হচ্ছে। তাছাড়া পরিবেশের খামখেয়ালিপনা যেমন, কখনও রোদ তো কখনও আবার টানা বৃষ্টি। এছাড়াও বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় ডেঙ্গির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ের পুরসভা বা পঞ্চায়েতের গাফিলতি এবং উদাসীনতাও অনেকাংশেই দায়ী। ফলে সব মিলিয়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বঙ্গে।
প্রথম দিকে ডেঙ্গির প্রবণতা মূলত শহর কেন্দ্রিক হলেও, করোনার পর থেকে গ্রামেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে মোট ১৬টি জেলাতেই ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণবঙ্গে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনের তরফ থেকে যে পরিসংখ্যান সামনে রাখা হয়েছে তাতে তালিকায় সবার উপরে আছে মুর্শিদাবাদ। এখনও পর্যন্ত সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২০ জন। দ্বিতীয় স্থানে আছে উত্তর ২৪ পরগনা (৩৮৭ জন)। ২৯৮ জন নিয়ে হুগলি আছে তিন নম্বরে। অন্যদিকে প্রতি বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে হাওড়া এক নম্বর থাকলেও, এবার আছে ৪ নম্বরে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮১ জন। পাশাপাশি ৫ নম্বরে আছে মালদা (২৬৫ জন)। কলকাতা আছে ষষ্ঠ স্থানে। এখনও পর্যন্ত কলকাতায় ১৯১ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের রিপোর্ট পজিটিভ পেয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। যদিও কলকাতার এই পরিসংখ্যানে এখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চাইছে না কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। কেননা পরিবেশ অনুকূল হওয়ায় ডেঙ্গির মূল উৎস এডিস ইজিপ্টাই মশার বংশ বিস্তারকে আটকাতে না পারলে যেকোনও মুহূর্তে ডেঙ্গিও মহামারির আকার ধারন করতে পারে। তাই এ বিষয়ে সাবধানী কলকাতা পুরসভা। ডেঙ্গি প্রতিরোধে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বঙ্গে ডেঙ্গি প্রতিহত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রাজ্য সরকারের কাছে।







