রাজ্য সরকার এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মধ্যে আবারও ঠান্ডা লড়াই অব্যাহত। ২৬শে বিধানসভা ভোটের আগে যে এই সংঘাত আরও চরমে উঠবে তার আঁচ পাওয়া গেল গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দিল্লিতে তলবের পরেই। সেখানে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ভোটার তালিকায় হস্তক্ষেপের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চার অফিসারকে সাসপেন্ড করার এবং এফআইআর দায়েরের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হল। আগামী ২১ আগস্টের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। যা নিয়ে আবারও কমিশনের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাতের আঁচ করছেন রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত অভিযোগের জেরে গত সপ্তাহে চার সরকারি অফিসারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়ে মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠায় কমিশন। তার মধ্যে দু’জন ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO) এবং দু’জন সহকারী ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে (AERO) সাসপেন্ড করে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দু’জন ডব্লুবিসিএস অফিসারও ছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, একজন এইআরও এবং একজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে তারা নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেবে। পাশাপাশি বাকি অফিসারদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার নিজে তদন্ত করবে। সেখানে দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রাজ্য সরকার, নচেৎ নয়। যা একপ্রকার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে অমান্য করার সামিল। আর এর পরেই নড়েচড়ে বসে কমিশন। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে তড়িঘড়ি দিল্লিতে তলব করা হয়।
সেখানে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নির্দেশ অমান্য করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্ট জানান, তিনি নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি তিনি এও জানান অভিযুক্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের এক্তিয়ার তাঁর নেই, পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে রাজ্য সরকারের উপর। মুখ্যসচিব সচিব নাকি এও জানিয়েছেন কমিশনের নির্দেশ মতো ওই চার অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা, তা একান্তই মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে। তিনি বড়জোর মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ম জানিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু তার বেশি কিছু করার এক্তিয়ার তাঁর নেই। এর পরেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ওই চার অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আরও সাতদিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এখন দেখার কমিশনের এই কঠোর নির্দেশের পর রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কী ভূমিকা পালন করা হয়। তবে কমিশন ও রাজ্য সরকারের এই ঠান্ডা লড়াই যে আরও দীর্ঘায়িত হবে, সেই সম্ভবনাই দেখছে বিশিষ্ট মহল।







