রাজ্যের তফসিলি জাতি (SC) ও উপজাতি (ST) তালিকায় বহু অযোগ্যদের নাম ঢুকে পড়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে জনজাতি উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক থেকেই তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে অভিযোগ খতিয়ে দেখে এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
নবান্নে এ দিনের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং প্রাক্তন সাংসদ দশরথ তিরকেকে। কিন্তু তাঁরা কেউই বৈঠকে যোগ দেননি। যদিও খগেন মুর্মু পরে সাংবাদিকদের সামনে বলেন, চিঠিতে কোনও এজেন্ডার উল্লেখ ছিল না। এজেন্ডা ছাড়া বৈঠকে গিয়ে আলোচনা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়, তাই তিনি যাননি।
এসসি-এসটি সম্প্রদায়ের শংসাপত্র সহ নানা বিষয়েই এই বৈঠকে আলোচনা হয়। এদিনের বৈঠকের জনজাতি সম্প্রদায়ের এক মন্ত্রীও অভিযোগ করেন যে, বহু অযোগ্য মানুষ এই তালিকায় ঢুকে পড়ায় প্রকৃত এসসি-এসটিরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এতেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী তৎক্ষণাৎ পুরো বিষয়টিই তদন্ত করে দেখার জন্য মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বনাঞ্চলের অধিকার এবং অন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প থেকে যাতে প্রকৃত জনজাতি মানুষ বঞ্চিত না হন সেদিকে সচেতন ভাবে নজর রাখতে বলেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের। এমনকী তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের সক্রিয় ভূমিকার উপরও গুরুত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় সরকারি প্রকল্পকে ঠিক পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও উদ্যোগী হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এমনকী এই বৈঠকে এসসি-এসটি সংশাপত্র হাতে পেতে উপভোক্তাদের যে সময় লাগছে, সেই বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের এক স্কুলের প্রশ্নপত্রে অলচিকি হরফ না থাকা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, সরকার স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও কেন এই রকম অবহেলা হবে? মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা যোগ্যরা যেন বঞ্চিত না হন। এমনকী অনেক সরকারি প্রকল্প যে শুধুমাত্র প্রচারের অভাবেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, সে অভিযোগও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সব মিলিয়ে সোমবার নবান্নে জনজাতি উন্নয়ন পর্ষদের এই বৈঠক যত না প্রশাসনিক, তার চেয়েও বেশি ২৬শে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।কেননা ২০১৯ লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে বড় ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১-এ সেই জমি কিছুটা উদ্ধার হলেও বিজেপির প্রভাব রয়ে গিয়েছে অনেক জায়গাতেই। তবে শেষ লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার মতো জনজাতি অধ্যুষিত জেলায় ঘাসফুল ফোটাতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। সেই নির্বাচনের আগে আদিবাসি জনজাতিদের মন জয় করে নিজেদের ভোট-ব্যাংক বাড়াতে এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।







