সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত অযোগ্য ১৮০৬ জন জালি শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই তালিকা প্রকাশ হতেই তুমুল হইচই পড়ে যায় গোটা রাজ্য জুড়ে। দেখা যায় সেই ‘টেন্টেড’ তালিকায় নাম রয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। পাশাপাশি এই তালিকা যে সম্পূর্ণ নয়, বিরোধীদের তরফ থেকে সে দাবিও তোলা হয়। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল কোনও ভাবেই অযোগ্য শিক্ষকরা যেন নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না পারেন। কিন্তু বিরোধীদের তোলা অভিযোগের মধ্যেই গতকাল নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছে রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন। যেখানে পরীক্ষায় বসেছিল প্রায় ৩ লক্ষ ১৯ হাজার পরীক্ষার্থী। এবার আবারও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াও কি তবে বাতিল হতে পারে?
এ প্রসঙ্গে এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমাদের মতে, দুর্নীতিগ্রস্তদের যে তালিকা স্কুল সার্ভিস কমিশন দিয়েছে, তা অসম্পূর্ণ। এবারের চাকরিপ্রার্থীদের ভিড়ে কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত লুকিয়ে রয়েছে কিনা, অর্থাৎ যাঁরা অযোগ্য, তাঁরাও পরীক্ষা দিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি তা হয়, তাহলে এই পরীক্ষাও বাতিল হবে। পাশাপাশি তার দায় অবশ্যই স্কুল সার্ভিস কমিশনকেই নিতে হবে।”
গতকালের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে একের পর এক দুর্নীতির খবর সামনে এসেছে। পাশাপাশি এই ইস্যুতেই আদালতে বার বার ধাক্কা খেয়েছে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া। ফলত পরীক্ষা দেওয়ার পরেও রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের মনেও সেই সংশয় কিছুতেই কাটছে না যে, আদৌ স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং সুষ্ঠ ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তো? যদিও গতকাল কঠোর নিয়ম ও নিরাপত্তার মধ্যেই সুষ্ঠ ভাবে পরীক্ষা নিতে সক্ষম হয়েছে কমিশন। এমনকী এর জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও এক্স হ্যান্ডেলে পরীক্ষা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকী নির্বিঘ্নে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে হওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তুও তার পরেও সংকট কাটবে কি? সেই প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের মনে।
এ বিষয়ে সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, “স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওপর ভরসা রাখা যাচ্ছে না। কারণ যেভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশন বিগত দিনে দুর্নীতি করেছে, যেভাবে এখনও তাঁরা দুর্নীতিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন, যেভাবে এখনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অযোগ্যদের হয়ে সওয়াল করে যাচ্ছেন—তাতে করে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের মনের এই আশঙ্কা যে ভিত্তিহীন, তা বলা যাবে না।”







