ইসলাম বিরোধী আখ্যা দিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লালন ফকিরের স্মরণোৎসবকে বন্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন যে অন্তর্বর্তী সরকার, সেই তারাই এবার লালন ফকিরের প্রয়াণ দিবসকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিল। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ৪০তম বৈঠকে এই প্রস্তাকে অনুমোদন দেওয়া হয় বলেই জানা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ঘিরে গত একবছর ধরেই নানা অভিযোগ সামনে আসছিল। পাশাপাশি সেই সব ঘটনায় প্রচ্ছন্ন মৌলবাদী মদতও লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এই সমস্ত ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসকে সদর্থক ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে শুধু লালন স্মরণোৎসব বন্ধ করে দেওয়ারই নয়, এর আগে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী লালন মেলাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তার পিছনেও যুক্তি ছিল, লালনের মতাদর্শ ইসলাম বিরোধী। এমনকী প্রশাসনের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও বন্ধ করে দেওয়া হয় লালনের স্মরণোৎসব। যদিও বাংলাদেশে মৌলবাদ রুখতে মহম্মদ ইউনূস সরকারকে এখনও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি।
লালন ফকির কিন্তু নিজেকে সব সময় হিন্দু-মুসলমানের উর্ধ্বে একজন আধ্যাত্মিক সাধক হিসাবেই নিজেকে ভাবতেন। তাঁর গান তাই সময়ের গন্ডি ছাড়িয়ে চিরকালের। প্রেম, মানবতা, সম্প্রতির করুণ আর্তিই বারবার ঝরে পড়েছে তাঁর সুরে। ধর্ম ও জাতপাতের ঊর্ধ্বে তাঁর গান তাই জীবনমুখী গান। অথচ সেই লালনের মতাদর্শকে ইসলামের পরিপন্থী বলে আখ্যা দিয়েছিল বাংলাদেশের মৌলবাদীরা। শুধু লালনই নয়, বাংলাদেশে এই মৌলবাদীদের রোষে পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলও। অথচ সরকারি ভাবে এর বিরোধিতা করে কোনও বিবৃতিও দেওয়া হয়নি।
এবার লালনের প্রয়াণ দিবসকেই ‘জাতীয় দিবস’ হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিল ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইউনূসের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকি নিজের সোস্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে এই খবর জানান। তিনি তাঁর পোস্টে লেখেন, “লালনকে উদযাপন করার মধ্য দিয়ে আমরা রবীন্দ্র-নজরুলের পাশাপাশি চেনা ছকের বাইরে তাকাতে শুরু করলাম। এটা কেবল শুরু।” আর ফারুকির এই পোস্টই নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তা হল— তবে কি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে কোণঠাসা করতেই লালনকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।







