বাংলায় এসআইআর (SIR) আবহে মতুয়াদের নাগরিকত্ব(Matua Citizenship) নিয়ে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। গত ৫ নভেম্বর থেকে এসআইআর (SIR)-এর বিরোধিতা করে মতুয়াদের নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে আমরণ অনশনে বসেছেন তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুরের (Mamata Thakur) নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের (All India Matua Mahasongha) সাধু-গোঁসাইরা। গত বৃহস্পতিবার সেই অনশন মঞ্চে হাজির হয়ে মতুয়াদের আন্দোলনকে দিল্লিতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন
সর্বভারতীয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। সেইমতো শনিবার মতুয়া সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব ইস্যুতে কেন্দ্রের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীকে পাঠালেন তিনি। তাঁর দাবি, এসআইআর (SIR)-এর কঠোর নথিপত্রের বিধান থেকে এই বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য নাগরিকত্ব স্বীকৃতি প্রদান করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
গত বৃহস্পতিবার অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের আমন্ত্রণে অধীর চৌধুরী ঠাকুরনগরের অনশন মঞ্চে উপস্থিত হয়ে অনশনরত মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করেন তাঁদের গভীর অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ। তিনি আশ্বাস দেন—এই সংগ্রামে তিনি সর্বশক্তি দিয়ে তাঁদের পাশে থাকবেন। সেই কথা রাখতেই এবার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে অডিন্যান্স জারি করার আর্জি জানালেন তিনি।
চিঠিতে অধীর চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় নির্যাতন, দুঃখ-কষ্ট নিয়ে বহু দশক আগে যে মতুয়া সম্প্রদায় ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, তারা আজও দেশের সামাজিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে আজ অযথা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এবং তাঁদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের আওতায় প্রতিবেশী দেশের ‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার’ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব নির্ধারণের কাট-অফ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ থেকে বাড়িয়ে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ করেছে। তার ভিত্তিতেই মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্যও একইরকম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন কংগ্রেসের এক সময়ের এই বিরোধী দলনেতা। তাঁর যুক্তি—যারা কয়েক দশক আগে বাধ্য হয়ে এ দেশে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব রক্ষায় আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করা অত্যন্ত জরুরি।
একই সঙ্গে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, বহু বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিধানসভা ও সংসদ—উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিনিধি নির্বাচিত করা এই জনগোষ্ঠী আজ ২৫ বছরের পুরনো নথি দেখাতে না পারায় ভোটাধিকার হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। যা অত্যন্ত অমানবিক, অবজ্ঞাসূচক এবং সামাজিকভাবে সংবেদনহীন বলেই অধীর চৌধুরী তাঁর চিঠিতে অভিহিত করেছেন।
অধীর চৌধুরী তাঁর এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মতুয়া সহ অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের সম্মান, নিরাপত্তা এবং পূর্ণ নাগরিকাধিকারের প্রশ্নে তাঁর অটল অবস্থান আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন বলেই মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সমর্থকরা।







