সংশয়ে জন্ম শংসাপত্র। সরকারি হিসেবে যেখানে প্রসবের সংখ্যা কমছে, সেখানে বার্থ সাটিফিকেট রেজিষ্ট্রেশন আশ্চর্য জনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরং বলা ভালো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মালদা জেলাতে। যা চরম সন্দেহজনক বলে দাবি করা হয়েছে মালদা বিজেপির তরফ থেকে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা তৃণমূল পঞ্চায়েতগুলো থেকে বার্থ সার্টিফিকেট বানিয়ে নিচ্ছে। এদিকে ইতিমধ্যেই জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়ার নির্দেশে, জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।এসআইআর-এর ভয়ে জন্ম সার্টিফিকেট করাচ্ছে বলে দাবি তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে জেলা পঞ্চায়েত দফতর থেকে মোট ৪৪ হাজার ২২৯টি জন্মের শংসাপত্র অনুমোদন করা হয়েছিল৷ ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৯২১টি৷ আর চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত সেই সংখ্যাটি এসে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২৬টিতে। অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালে পঞ্চায়েতের অনুমোদিত জন্মের শংসাপত্র বেড়েছে ১১ হাজার ৬৯২টি৷
প্রশাসনিক কর্তাদের নজরে সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে ইংরেজবাজারের যদুপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত ও মানিকচক ব্লকের উত্তর চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতl মালদা শহর সংলগ্ন এই পঞ্চায়েতে ২০২২ সালে মোট শংসাপত্র অনুমোদিত হয়েছিল ২৫ হাজার ৬০২টি৷ ২০২৪ সাল পর্যন্ত এখানে প্রতি মাসে গড়ে ৭১১টি জন্মের শংসাপত্র অনুমোদিত হয়েছে৷ কিন্তু ২০২৫ সালের মার্চ মাসেই এই পঞ্চায়েতে অনুমোদিত হয়েছে ৮০৩টি শংসাপত্র৷ আরও বড় ছবি মানিকচকের উত্তর চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে৷ সেখানে ২০২২ সালে ৫৩৬টি ও ২০২৩ সালে অনুমোদন করা হয়েছিল ৫৩৮টি শংসাপত্র৷ অথচ ২০২৪ সালে এখানে অনুমোদিত হয়েছে ৪৫৪৭টি৷ চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত অনুমোদিত হয়েছে ৩২৪০টি শংসাপত্র৷ এই পঞ্চায়েতে গত তিন বছরে শংসাপত্র প্রদানের গড় মাসে ১৮৫টি৷ চলতি বছরের মার্চ মাসে ৭২৭টি শংসাপত্র অনুমোদিত হয়েছে৷
তৃণমূল পরিচালিত ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নমিতা চৌধুরীর বক্তব্য, “আসলে এসআইআর নিয়ে মানুষের মনে একটা ভয় কাজ করছে৷ তাই আগে যাঁরা জন্মের শংসাপত্র রেজিস্ট্রেশন করাননি, এখন পঞ্চায়েত দফতরে তাঁদের ভিড় বাড়ছে৷ এই কারণেই শংসাপত্র রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা এভাবে বেড়ে গিয়েছে৷ এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই৷”
যদিও বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নামতে দেরি করতে রাজি নয় গেরুয়া শিবিরও৷ বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি, পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্য৷ এই ছবিটা তারই প্রমাণ।”
মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র আশিস কুণ্ডু জানান, “বিষয়টি সামনে আসতেই ইতিমধ্যেই প্রশাসন এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। আর বিজেপি বলছে অনুপ্রবেশের কথা। সীমান্তে পাহারা দিচ্ছে তো কেন্দ্রীয় বাহিনি। তাহলে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশিদের কারা অনুপ্রবেশ করাচ্ছে ? যে দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা সামনে এসেছে ইতিমধ্যেই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর তার তদন্ত শুরু করেছে।”







