বিহারে ইতিমধ্যেই স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর(SIR)-এর ফলে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ৬৪ লক্ষ ভোটারের নাম। এর ফলে উত্তাল গোটা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এমনকী ভোটার তালিকা সংশোধনের নাম করে নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র যে সুকৌশলে এনআরসি(NRC) চালু করতে চাইছে, এই দাবি তুলে সংসদের বাদল অধিবেশন বয়কট করে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলো। এমনকী সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। এই আবহে চড়তে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি পারদ। কেননা বিহারের পর যে পশ্চিমবঙ্গেও একই ভাবে এসআইআর হবে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর এই নিয়ে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির দালাল বলেও ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের তল্পিবাহক হিসাবে কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়েই বিজেপি তাদের ভোট-ব্যাংক বাড়াতে চাইছে। এমনকী গত সোমবার বোলপুরে ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ থেকেও তিনি দাবি করেছেন, রাজ্যকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে বিএলও(BLO) ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। রাজ্যকে এ বিষয়ে কিছুই জানাননি বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক এই ডামাডোলের মধ্যে রীতিমত আতঙ্কে আছে সাধারণ মানুষ। কেননা বিহারে এসআইআর(SIR)-এর সময় নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই সমীক্ষার প্রামাণ্য নথি হিসাবে আধার, ভোটার ও রেশন কার্ডকে গণ্য করা হবে না। কমিশনের বেঁধে দেওয়া ১১টি নথির ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে একজন ভোটার বৈধ কি অবৈধ। বলা হয়েছে, সরকারি কর্মীদের পরিচয়পত্র, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগের কোনও সরকারি নথি (ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এলআইসির নথিও গ্রাহ্য), জন্মের শংসাপত্র, পাসপোর্ট, শিক্ষা সংক্রান্ত শংসাপত্র (জন্মের তারিখ উল্লেখ থাকা চাই), স্থায়ী বসবাসকারীর শংসাপত্র, এসসি এসটি বা ওবিসির সংশাপত্র, এনআরসি তালিকায় নাম, স্থানীয় প্রশাসনের তৈরি করা পারিবারিক ‘রেজিস্টার’, দলিল বা পর্চার মো জমি-বাড়ির নথি। বিহারের এই সমীক্ষা নিয়ে শীর্ষ আদালতে আপিল করা হলে, সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য আধার এবং এপিককে গণ্য করার কথা বিবেচনা করে দেখতে বলেছে কমিশনকে। তবে এই নিয়ে শীর্ষ আদালত কোনও নির্দেশ দেয়নি। ফলে এই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আরও সংশয় বেড়েছে রাজ্যবাসীর মনে। তার প্রমাণ হচ্ছে, গত কয়েকদিনে বাংলাতে প্রায় লাখের কাছাকাছি ভোটার অনলাইনে ভোটার কার্ড সংশোধন বা আপডেটের জন্য আবেদন করেছেন।
বিভিন্ন সূত্র মারফত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আগামী আগস্ট মাস থেকে সম্ভবত রাজ্যে এসআইআর(SIR)-এর কাজ শুরু হতে পারে। এই আবহের মধ্যে এবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আর এর ফলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে সামনে রেখেই এসআইআর(SIR)-এর কাজ শুরু করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন? কেননা পশ্চিমবঙ্গে শেষ ২০০২ এসআইআর হয়েছিল।







