তৃণমূলের শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতির বিএলও হওয়া নিয়ে বিতর্ক মালদায়

তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা বিএলও(BLO), এই অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠল মালদা। এই ঘটনা নিয়ে মালদা জেলা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি বিএলও(BLO)। তিনি প্রভাবিত করছেন ভোটারদের, চলছে কারচুপিও। আর এই নিয়েই মালদায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক। মালদার ইংরেজবাজার পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ১০১ নম্বর বুথের বিএলও হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন আশিস মণ্ডল। তিনি ঝলঝলিয়া রেলওয়ে হাই স্কুলের শিক্ষক। গত ৪ অগাস্ট তিনি বিএলও(BLO) হিসাবে নিযুক্ত হন। কাজ শুরু করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় ফিল্ড ওয়ার্ক। অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিতরণ। এরই মাঝে গত ৮ নভেম্বর তৃণমূল তাঁকে মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করে। এর ফলে বিএলও(BLO)-র নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জেলা শাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি। এই বিষয়টি নিয়ে দ্রুত নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে চলেছে অনান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। তবে এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বিষয়টি প্রশাসন দেখছে। অন্যদিকে ওই বিএলও(BLO) আশিস মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও তিনি একইভাবে ফর্ম বিলি করছেন, ফর্ম জমাও নিচ্ছেন। আশিস মণ্ডল বলেন, “আমি আগাস্ট মাস নাগাদ বিএলও(BLO) হিসাবে নিযুক্ত হয়েছি। চলতি মাসের ৮ তারিখে তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির মালদা জেলা সভাপতির পদ পেয়েছি। বিষয়টি আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি।” এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার আন্দোলনে নামে বিজেপি। বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার পক্ষ থেকে জেলাশাসকের কাছে এই মর্মে একটি ডেপুটেশনও তুলে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে মালদা বিজেপির জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় জানান, “এ সম্পূর্ণ ভাবে অসাংবিধানিক। উনি তৃণমূলের পদে থেকে বিএলও(BLO) হিসাবে কাজ করায় কমিশনের বিধিভঙ্গ করেছেন। ওনার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমরা আশা করি কমিশন ওনার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”
SIR নিয়ে বীরভূমে প্রকাশ্য সভায় বিতর্কিত মন্তব্য অনুব্রতর

রাজ্যে SIR চলাকালীনই তৃণমূলের প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়ালেন তৃণমূলের বীরভূম জেলার সাংগঠনিক সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। বৃহস্পতিবার বীরভূমের বোলপুরে ভোট সুরক্ষা সভা ঘিরে ফের বিতর্কে অনুব্রত মণ্ডল। সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “SIR নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, আমাদের লোকেরা আছে ঠিক ভোটার লিস্টে নাম ঢুকিয়ে দেবে।” তাঁর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। কারণ বর্তমানে দেশের ১২টি রাজ্যে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের (National Election Commission) তত্ত্বাবধানে চলছে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়া— যেখানে দলীয় প্রভাবের কোনও সুযোগ নেই বলেই দাবি কমিশনের। সেখানে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতার এই বক্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনুব্রত এদিন আরও বলেন, এনআরসি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন, কাউকে জেলে যেতে হবে না।” তিনি এও উল্লেখ করেন, আসামে এনআরসি(NRC)-র সময় অধিকাংশ বাদ পড়া মানুষ হিন্দু, তাই বিভ্রান্তিতে না পড়ার বার্তাও দেন ভোটারদের। অনুব্রতর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি। বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল প্রশ্ন তোলেন— “কিভাবে কোনও দলের লোক ভোটার লিস্টে নাম তুলতে পারে? এটিই প্রমাণ করছে বিএলও(BLO)-দের প্রভাবিত করার অভিযোগ সত্য।” রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার ভুয়ো ভোটারের তালিকা জমা দিয়েছেন। এই পটভূমিতেই অনুব্রত মণ্ডলের এই মন্তব্য যে রাজ্য রাজনীতিতে আরও বিতর্ক বাড়াবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মামলা জয়ী শুভেন্দু, মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজ হাই কোর্টের

নির্বাচনের আগেই শুভেন্দু অধিকারির(Suvendu Adhikari) কাছে হার বিধানসভা স্পিকার কথা তৃণমূল নেতা বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Biman Banerjee)। হাই কোর্টের রায়ে জয়ী হলেন শুভেন্দু অধিকারি(Suvendu Adhikari) ও অম্বিকা রায়(Ambika Roy)। নির্বাচনের আগে এই জয় যে শুভেন্দুকে বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বৃহস্পতিবারই দল বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে বিধায়ক পদ খোয়ালেন মুকুল রায়(Mukul Roy)। ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথমবার কেউ দল বিরোধী কাজের জন্য বিধায়ক পদ খোয়ালেন। মুকুল রায়(Mukul Roy) ২০২১ সালের জুন মাসে বিজেপি(BJP) থেকে তৃণমূলে(TMC) ফিরে গিয়েছিলেন। এরপরই তাঁকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর সেই কমিটির চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন মুকুল রায়। সেই সময়ই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ছিলেন বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারি(Suvendu Adhikari) এবং বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়। মুকুল রায়ের(Mukul Roy) বিরুদ্ধে দল বিরোধী কাজের অভিযোগ এনে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজেরই আবেদন করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারি। দীর্ঘদিন ধরেই এই মামলাটির শুনানি হচ্ছিল হাই কোর্টে। বর্তমানে মামলাটি যায় বিচারপতি দেবাংশু বসাক(Debangshu Basak) এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির(MD Shabbar Rashidi) ডিভিশন বেঞ্চে। বৃহস্পতিবার তারাই মুকুল রায়ের বিধায়র পদ খারিজের রায় দিয়েছেন। আর এই ঘটনাকে অনেকেই নির্বাচনের আগে বিজেপির নৈতিক জয় হিসাবেও দেখছেন। শুধুমাত্র তাই নয় শুভেন্দু অধিকারির নেতৃত্বাধীন বিজেপি যে নির্বাচনের আগে নতুন অস্ত্রও পেয়ে গেল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিন মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের পাশাপাশি, তাঁকে যে পিএসি কমিটির চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্তও ত্রুটিযুক্ত, তাও এদিনে খারিজ করে দিয়েছে দেবাংশু বসাক ও শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।