সজল ঘোষের পোস্ট ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে— তবে কি বন্ধ হতে পারে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো

সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের (Santosh Mitra Square) পুজো বকলমে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের (Sajal Ghosh) পুজো নামেই পরিচিত। কলকাতার অন্যান্য নামীদামী পুজোর সঙ্গে রীতিমত টেক্কা দিয়ে প্রতি বছরই বিপুল ভিড় জমে এই মণ্ডপে। উপরন্তু এবারে যেহেতু সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের (Santosh Mitra Square) থিম ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor)— স্বাভাবিক ভাবেই অন্যবারের তুলনায় এবার এই মণ্ডপ ঘিরে মানুষের বাড়তি উৎসাহ থাকাই স্বাভাবিক। একনকী গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) শহরে এসেছিলেন এই পুজো উদ্বোধনে। কিন্তু পুজো উদ্বোধনের চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সজল ঘোষের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে তৈরি হল জল্পনা। সেই পোস্টে সজল ঘোষ (Sajal Ghosh) লিখেছেন, ‘পুজো চালাতে পারব জানি না’ ! আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। গতকাল অমিত শাহ (Amit Shah) পুজো উদ্বোধনের পর থেকেই রীতিমত দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে (Santosh MitraSquare)। এর থেকেই অনুমান করা যায় আগামী কয়েকদিন কী পরিমাণ মানুষের সমাগত হতে পারে এখানে। তারই মধ্যে সজল ঘোষের (Sajal Ghosh) পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে কী বন্ধ হয়ে যেতে পারে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের (Santosh Mitra Square) পুজো ? গত শুক্রবার সজল ঘোষ (Sajal) সংবাদমাধ্যমের সামনে পুলিশি জুলুমের অভিযোগ তুলে জানিয়েছিলেন, তাঁকে বারবার থানা থেকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। মানুষ যাতে মণ্ডপ অবধি পৌঁছাতে না পারে সেজন্য যেখানে সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। এই পুলিশি জুলুমের মুখে তিনি পুজো চালাতে পারবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি কাউন্সিলর। যদিও পুলিশের তরফ থেকে সজল ঘোষের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলা হয়েছে, সকলে যাতে দুর্ঘটনা এড়িয়ে প্রতিমা দর্শন করতে পারে, সে কারণেই ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই ! চলতি বছরের ১৪ মে, ১২ জুন এবং ১৫ জুলাই, ৯ সেপ্টেম্বর মুচিপাড়া থানার তরফ থেকে একাধিক নির্দেশিকা জারি করে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতিকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সেই নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছিল মণ্ডপে ঢোকা ও বেরনোর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে। মণ্ডপ থেকে বেরনোর গেটের কাছে বা পার্কের পূর্ব প্রান্তে কোনও হকার, স্টল বা বিক্রেতাকে বসতে দেওয়া হবে না। মণ্ডপের ভিতরে বা আশেপাশে কোনও ধরনের লাইন্ড অ্যান্ড সাউন্ড শো করা যাবে না। মণ্ডপ চত্বরে অন্তত ৬০টি CC ক্যামেরা বসাতে হবে। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মোড় থেকে ঢোকার গেট পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞাপনের গেট বা সেই ধরনের কোনও কাঠামো রাখা যাবে না। নাগরদোলনা বা কোনও জয় রাইড বসানো যাবে না। ২৫০ জন প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারকে মোতায়েন করতে হবে। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো ঘিরে পুলিশের এই বাড়তি নজরদারি নিয়ে এর আগেও একাধিকবার সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। এবার পুজোর শুরুতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন পোস্ট কী সত্যিই রাজনৈতিক চাপ— নাকি গিমিক তৈরির চেষ্টা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সাময়িক ভাবে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দিতে হল দেশপ্রিয় পার্কের মণ্ডপ

কলকাতার অন্যতম বড় পুজোগুলোর মধ্যে একটা দেশপ্রিয় পার্ক (Deshapriya Park)। প্রতিবারই তাদের তৈরি মণ্ডপ, প্রতিমা এবং আলোকসজ্জা নজর কাড়ে রাজ্যবাসীর। এবারেও উৎসবের আবহে সেজে উঠেছে দেশপ্রিয় পার্ক (Deshapriya Park)। কিন্তু হঠাৎই তাল কাটল চতুর্থীর সন্ধ্যায়। সাময়িক ভাবে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দিতে হল পুজো মণ্ডপ (Puja Pandal)। কলকাতার অন্যান্য পুজো মণ্ডপের মতো দেশপ্রিয় পার্কেও শুক্রবার দুপুর থেকেই মানুষের ঢল নেমেছিল। সন্ধে গড়াতেই বাড়তে থাকে ভিড়ও। তখনই মণ্ডপের প্রবেশ পথের একাংশে ফাটল নজরে আসে পুজো উদ্যোক্তাদের। বড়সড় দুর্ঘটনা এড়াতে তড়িঘড়ি পুজো মণ্ডপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন দেশপ্রিয় পার্ক পুজো কমিটি (Deshapriya Park Puja Pandal)। প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগে সবচেয়ে উঁচু দুর্গা করে শিরোনামে উঠে এসেছিল দেশপ্রিয় পার্ক (Deshapriya Park)। কিন্তু সে বছর মানুষের বিপুল চাপে পদপৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে দিতে হয়। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই এদিন তড়িঘড়ি মণ্ডপ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন পুজো কমিটি। কিন্তু পুজো উদ্যোক্তাদের সাময়িক মণ্ডপ বন্ধের ঘোষণা সত্ত্বেও মণ্ডপের বাইরে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকীতেই গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত শহরের একাধিক জায়গা। আবার পুজোর মধ্যে নিম্নচাপের সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ফলে মানুষ চাইছে দুর্যোগের আগেই ঠাকুর দেখে নিতে। স্বাভাবিক ভাবেই শহরের সর্বত্রই উপচে পড়ছে সাধারণ মানুষের ভিড়। তারই মধ্যে দেশপ্রিয় পার্কের এই ঘটনা কিছুটা হলেও দর্শনার্থীদের উৎসাহে জল ঢেলেছে। তবে দেশপ্রিয় পার্ক পুজো উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে খুব শীঘ্রই মেরামত কাজ শেষ করে মণ্ডপ সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তাদের আরও দাবি, দেশপ্রিয় পার্ক শুধু কলকাতা নয়, গোটা বাংলার মানুষের কাছেই সমান জনপ্রিয়। তাই দর্শনার্থীরা ঠাকুর দেখতে এসে যাতে কোনওরকম দুর্ঘটনার কবলে না পড়েন, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে আজ, অর্থাৎ পঞ্চমীর রাত থেকেই দেশপ্রিয় পার্কের দরজা দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। সব মিলিয়ে আজ থেকে কলকাতার অন্য সব পুজোর মতো দেশপ্রিয় পার্কের মণ্ডপ পরিদর্শনেরও স্বাদ নিতে পারবে শহরবাসী। তবে দুর্যোগের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে এখন থেকেই ঠাকুর দেখতে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় জমাচ্ছে তা রীতিমত চোখে পড়ার মতো। আপাতত সব ভুলে উৎসবের মেজাজে ভাসছে বাংলা।