বীরভূমের পাথর খাদানে ধসে মৃত পাঁচ, গুরুতর আহত চার শ্রমিক

বীরভূমে(Birbhum) বড়সড় দুর্ঘটনা। ধস নেমে পাথর খাদানে(Stone Quarry) চাপা পড়ে প্রাণ গেল পাঁচ শ্রমিকের। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়ছেন চারজন খাদান শ্রমিক। শুক্রবার দুপুরে পাথর খাদানে শ্রমিকরা পাথর কাটার সময়ই ঘটে এই ভয়াবহ ঘটনা। আচমকা ঘটনাতেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই আহতদের রামপুরহাট হাসপাতালে(Rampurhat Govt Hospital) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে নলহাটি থানার পুলিশ। বীরভূমে(Birbhum) এমন ঘটনায় আতঙ্কিত আশে পাশের সকলে। এমন ঘটনায় স্থানীয় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে প্রতিদিনের মতো এদিনও পাথর খাদানে(Stone Quarry) খাদান শ্রমিকরা গিয়েছিলেন পাথর কাটার কাজ করতে। দুপুরের দিকেই ঘটে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা। আচমকাই খাদানে ধস নামে। কোনও কিছু বোঝার আগেই সব শেষ। সরে যাওয়ার সময় টুকু পাননি সেখানকার শ্রমিকরা। প্রায় ১0 থেকে ১২ জন শ্রমিক নাকি সেই সময় খাদানে কাজ করছিলেন বলে জানা গিয়েছে। যেকজন কাজ করছিলেন সকলেই চাপা পড়ে গিয়েছিলেন। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই অন্যান্য খাদানের শ্রমিকরা সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে আসেন এবং নিজেরাই উদ্ধার কার্যে হাত লাগানো শুরু করেন। কিন্তু ততক্ষণে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়ে গিয়েছিল। যে চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তাদের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। গুরুতরভাবেই আহত হয়েছিলেন তারা। এরপরই তাদের রামপুরহাট গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়ছিল। সেখানেই শুরু হয় চিকিৎসা। তিনজনের অবস্থা স্থীতিশীল হলেও, একজনের অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ার পরই তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে খবর। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল নলহাটি থানার পুলিশ। সেখানেই শুরু হয়েছে উদ্ধার কাজ। দেখা হচ্ছে আর কোনও শ্রমিক সেখানে আটকে রয়েছেন কিনা সেটাই দেখা হচ্ছে। অন্যান্য শ্রমিকরাও পাথর সরিয়ে খোঁজ করার কাজে হাত লাগিয়েছে।
বরানগরের কালিবাড়িতে বাসি ভাতের মাহাত্ম্য

বরানগর : একদিন রান্না বন্ধ। আগের দিন যা রান্না হয়েছে, তাই খেতে হবে। শুনে শহুরে ভোজনরসিকরা হয়তো নাক সিঁটকোবেন—“বাসি খাবার?” কিন্তু এটাই রেওয়াজ, বরং পার্বণ। বৃহস্পতিবার বরানগরের (Baranagar Kalibari) নোয়াপাড়া ব্রহ্মময়ী কালিবাড়িতে সেই অরন্ধন উৎসবই পালিত হল ধুমধাম করে। মন্দিরের(Baranagar Kalibari) প্রতিষ্ঠাতা, হরিদ্বারের দশনামী শ্রীপঞ্চায়েতি আখড়া মহানির্বানি মহামন্ডলেশ্বর স্বামী পরমাত্মানন্দ ভৈরব নিজে এদিন ভোগ-আরতি করলেন। মন্ত্র পড়লেন, হাত নাড়লেন, আর ভক্তদের বললেন—“অরন্ধন মানে রান্না বারণ। আগের দিনই রান্না করে রাখুন, দেবীর(Baranagar Kalibari) উদ্দেশে নিবেদন করুন, তারপর সবাই মিলে উপভোগ করুন।” কথাটা এমন স্বচ্ছন্দে বললেন, যেন কালকে না খেয়ে থাকাটাও আনন্দের ব্যাপার। এই অরন্ধনের চর্চা বছরে দু’বার। একবার মাঘ মাসে সরস্বতী পূজোর পরদিন শীতল ষষ্ঠীতে, আরেকবার ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর সঙ্গে। কোথাও একে ইচ্ছারান্না, কোথাও আটাশে রান্না। আর যদি বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পড়ে, তবে নাম হয় ‘বুড়োরান্না’। নামকরণে বাঙালির এমন সৃজনশীলতা বিরল নয়। খাওয়ার তালিকায় অবশ্য কোনও কৃপণতা নেই। পান্তা ভাত থেকে শুরু করে ইলিশ-চিংড়ি পর্যন্ত—সবই হাজির। সঙ্গে আলু, কুমড়ো, কলা, পটল, ছোলা-নারকেল মেশানো কচুশাক, চালতা-গুড়ের চাটনি, তালের বড়া আর মালপোয়া। তবে নিয়ম আছে—পেঁয়াজ-রসুন চলবে না, আর রান্না হবে অল্প জলে। কারণ বাসি হলেও খাবার নষ্ট হওয়া চলবে না। ভাবুন তো, রেফ্রিজারেটরবিহীন যুগেও বাঙালিরা কী বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উৎসবের আয়োজন করেছে! এখন অবশ্য ফ্ল্যাটবাড়ির ইলেকট্রিক ওভেনে এসব রীতি শোনা মাত্রই কারও কারও হাঁসি পায়। অফিস-টিফিন সামলাতে গিয়ে বাসি ভাত খাওয়ার আনন্দ কোথায়! তবু গ্রামাঞ্চলে, শহরতলিতে, কিংবা বরানগরের কালিবাড়ির(Baranagar Kalibari) মতো জায়গায় এখনও এই উৎসব পালিত হয় উচ্ছ্বাসে। অরন্ধন কোনও সাধারণ খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন নয়। দেবীর(Baranagar Kalibari) উদ্দেশে নিবেদিত এই বাসি ভাতই আসলে সংসারের মঙ্গলকামনা, সর্পভয় থেকে রক্ষা, আর পারিবারিক ঐক্যের প্রতীক। ভক্তদের বিশ্বাস, একদিন রান্নাঘরের উনান ঠান্ডা হলে সংসারও একটু শান্তি পায়। তাই বাসি খাবারকে হেলা করে দেখবেন না। ওতে দেবী আছেন, আছেন পরম্পরার গন্ধ। আর বাঙালির রসনাতৃপ্তিও কম নয়—বাসি ভাতের সঙ্গে ইলিশ ভাজা, আর তার উপর দেবীর আশীর্বাদ—এর চেয়ে বড় ভোজ আর কী হতে পারে!