মতুয়া সমস্যা মেটাতেই কি আজ বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে বসলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

মতুয়া সমস্যা নিয়ে দলের অন্দরেই ক্রমশ অস্বস্তি বাড়ছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের। সম্প্রতি তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের করা একটি মন্তব্য মতুয়াদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলে কৃষ্ণনগরের সাংসদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল আরেক তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। সেই চিঠিতে মহুয়া মৈত্রকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এই আবহে আজ বনগাঁর দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে জেলাওয়াড়ি বৈঠকে বসলেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়েছে এই বৈঠক। ২৬শে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বৈঠকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বেশ কিছুদিন ধরে তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে বিভিন্ন জেলার নেতৃত্বদের নিয়ে জেলাওয়াড়ি বৈঠক করছেন। মূলত বিধানসভা নির্বাচনের আগে রণকৌশল তৈরি এবং একেবারে তৃণমূল স্তরের সংগঠনকে আরও মজবুত করতেই এই বৈঠক। ২৬শে বিজেপিকে যে এক ইঞ্চিও জমি ছেড়ে দিতে রাজি নয় তৃণমূল, তা এই বৈঠকের ফলে স্পষ্ট। এই বৈঠকে মূলত দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে বিশেষ তৎপর তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেইমতো আজ বনগাঁ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন অভিষেক। এই বৈঠকে যে অনিবার্য ভাবেই মতুয়াদের প্রসঙ্গ উঠবে তা স্পষ্ট। কেননা এই অঞ্চলের ভোটে নিঃসন্দেহেই একটা বড় ফ্যাক্টর মতুয়া ভোট। সাম্প্রতিক সময়ে মতুয়াদের সমর্থনের ক্ষেত্রে তৃণমূল একচ্ছত্র আধিপত্যে ভাগ বসিয়েছে বিজেপিও। তাই মতুয়া সমর্থন ফেরাতে কী কৌশল নেন অভিষেক, তা জানতেই কৌতূহলী রাজ্যবাসী। তার উপর যেখানে মহুয়া মৈত্রের বক্তব্যে দলের অন্দরেই তৈরি হয়েছে অস্বস্তি। সব মিলিয়ে সেই অস্বস্তি কাটিয়ে মতুয়া সমর্থনকে তৃণমূলের দিকে ঘোরাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
বালি পাচার কাণ্ড নিয়ে আবারও সক্রিয় ইডি, সাতসকালে রাজ্যের একাধিক জায়গায় অভিযান

বালি পাচার কাণ্ড নিয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ED)। সোমবার সাতসকালেই রাজ্যের একাধিক জায়গায় অভিযান চলল। একই সঙ্গে বেহালা ও ঝাড়গ্রামে অভিযান চালালো ইডি আধিকারিকরা। এর আগে এই মামলা নিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট অফিসারদের এত তদ্বির চোখে পড়েনি রাজ্যবাসীর। সোমবার সকালে বেহালার জেমস লং সরণীর একটি বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি আধিকারিকরা। সেই বাড়িতে ডিজি মাইনিং নামক একটি সংস্থার অফিস রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তারাও নাকি বালি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। সেখানেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সংস্থার আরও একটি অফিস রয়েছে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে। তবে সেখানে এখনও পর্যন্ত ইডি আধিকারিকরা যাননি। অন্যদিকে ঝাড়গ্রামে শেখ জহিরুল আলি নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও তল্লাশি চালায় ইডি আধিকারিকরা। ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে তাঁর বাড়ি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি দীর্ঘদিন ধরে সুবর্ণরেখা নদী থেকে বালি তুলে পাচার করতেন। জহিরুল নামের এই ব্যক্তি আগে ভিলেজ পুলিশে চাকরি করতেন। তারপর পাকাপাকি ভাবে চাকরি ছেড়ে বালি ব্যবসায় নামেন। এদিন একেবারে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়েই তল্লাশি অভিযানে নামে ইডি। শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘিরে রেখেছে গোটা গ্রাম। সব মিলিয়ে ইডির মোট ৪-৫টি টিম একই সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে।
SSC নিয়োগ প্রক্রিয়া কি বাতিল হতে পারে, বিস্ফোরক দাবি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত অযোগ্য ১৮০৬ জন জালি শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই তালিকা প্রকাশ হতেই তুমুল হইচই পড়ে যায় গোটা রাজ্য জুড়ে। দেখা যায় সেই ‘টেন্টেড’ তালিকায় নাম রয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। পাশাপাশি এই তালিকা যে সম্পূর্ণ নয়, বিরোধীদের তরফ থেকে সে দাবিও তোলা হয়। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল কোনও ভাবেই অযোগ্য শিক্ষকরা যেন নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না পারেন। কিন্তু বিরোধীদের তোলা অভিযোগের মধ্যেই গতকাল নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছে রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন। যেখানে পরীক্ষায় বসেছিল প্রায় ৩ লক্ষ ১৯ হাজার পরীক্ষার্থী। এবার আবারও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াও কি তবে বাতিল হতে পারে? এ প্রসঙ্গে এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমাদের মতে, দুর্নীতিগ্রস্তদের যে তালিকা স্কুল সার্ভিস কমিশন দিয়েছে, তা অসম্পূর্ণ। এবারের চাকরিপ্রার্থীদের ভিড়ে কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত লুকিয়ে রয়েছে কিনা, অর্থাৎ যাঁরা অযোগ্য, তাঁরাও পরীক্ষা দিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি তা হয়, তাহলে এই পরীক্ষাও বাতিল হবে। পাশাপাশি তার দায় অবশ্যই স্কুল সার্ভিস কমিশনকেই নিতে হবে।” গতকালের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে একের পর এক দুর্নীতির খবর সামনে এসেছে। পাশাপাশি এই ইস্যুতেই আদালতে বার বার ধাক্কা খেয়েছে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া। ফলত পরীক্ষা দেওয়ার পরেও রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের মনেও সেই সংশয় কিছুতেই কাটছে না যে, আদৌ স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং সুষ্ঠ ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তো? যদিও গতকাল কঠোর নিয়ম ও নিরাপত্তার মধ্যেই সুষ্ঠ ভাবে পরীক্ষা নিতে সক্ষম হয়েছে কমিশন। এমনকী এর জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও এক্স হ্যান্ডেলে পরীক্ষা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকী নির্বিঘ্নে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে হওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তুও তার পরেও সংকট কাটবে কি? সেই প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের মনে। এ বিষয়ে সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, “স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওপর ভরসা রাখা যাচ্ছে না। কারণ যেভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশন বিগত দিনে দুর্নীতি করেছে, যেভাবে এখনও তাঁরা দুর্নীতিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন, যেভাবে এখনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অযোগ্যদের হয়ে সওয়াল করে যাচ্ছেন—তাতে করে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের মনের এই আশঙ্কা যে ভিত্তিহীন, তা বলা যাবে না।”