SSC পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হলেও, কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয়ে পরীক্ষার্থীরা

সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে একের পর এক দুর্নীতি সামনে আসা নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ভূমিকা নিয়ে যে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছিল সাধারণ মানুষের মনে। যেখানে কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে নেওয়াটা রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছিল রাজ্য সরকার ও কমিশনের কাছে। রবিবার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ প্রার্থীরা। মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে পরীক্ষা দিলেও, পরীক্ষার্থীদের মনে কিন্তু সংশয় থেকেই গেল। এদিন হল থেকে বেরিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করলেন, আদৌ স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হবে তো? যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এদিন পরীক্ষা শেষে সেই আশ্বাসই দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, “একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য আগামী রবিবারের পরীক্ষা যাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সমগ্র প্রশাসন সকল সম্ভাব্য সহায়তা প্রদানের জন্য উন্মুখ।” এমনকী স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফ থেকেও একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, এদিন পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ছিল ৯১ শতাংশ। এর মধ্যে ভিন রাজ্যের পরীক্ষার্থী ছিল ৩১ হাজারেরও বেশি। এমনকি রবিবার শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে রাজ্য সরকার সমস্ত রকম ভাবেই সহযোগিতা করেছে, সে কথাও এসএসসি-র তরফ থেকে উল্লেখ করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছে। সেই বিবৃতিতে কমিশন জানিয়েছে, “পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে আমাদের পূর্ণ সহায়তার জন্য কমিশন সমগ্র রাজ্য প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ।” প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশ মেনেই ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে কমিশন দু’দফায় এসএসসি পরীক্ষার বন্দোবস্ত করে। ৭ সেপ্টেম্বরে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষায় যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপ করে কমিশন। এদিন সকাল ১০টার সময় পরীক্ষার্থীদের রিপোর্টিং টাইম দেওয়া হয়েছিল। এবার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কমিশনের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছিল একাধিক উদ্যোগ। অ্যাডমিট কার্ড নকল রুখতে বিশেষ বার কোড স্ক্যানারের বন্দোবস্ত করা হয়। এমনকী প্রশ্নফাঁস রুখতেও নেওয়া হয়েছিল একগুচ্ছ পদক্ষেপ। কিন্তু তারপরেও কমিশনের ‘স্বচ্ছতা’ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক পরীক্ষার্থীই। কেউ কেউ বলছেন, “যে কমিশনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগ, সেই কমিশনই তো পরীক্ষার দায়িত্বে। ফলে বিশ্বাস করি কী করে? তাও পরীক্ষা দিতে হয় তাই দিলাম। জানি না, এরকম পরীক্ষা দিয়ে কী লাভ হল!” আবার অনেক পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য, “পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ ভাবে নেওয়াটা বড় কথা নয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া যে স্বচ্ছভাবে হবে সেই গ্যারান্টি কোথায়? আসল খেলা তো হয় সেখানেই।”