সিউড়ি সদর হাসপাতালে প্রসূতির মৃত্যুকে ঘিরে উত্তেজনা, চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ

সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে বুধবার রাত থেকে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল। মৃতার নাম অঙ্কিতা চ্যাটার্জী। তাঁর বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। পেশায় তিনি একটি বি-টেক কলেজের অধ্যাপিকা ছিলেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ আগস্ট অঙ্কিতা একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে সন্তানের জন্ম দেন। সোমবার রাত আটটা নাগাদ হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তড়িঘড়ি তাঁকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, একাধিকবার অভিজ্ঞ চিকিৎসককে ডাকলেও সাড়া মেলেনি। এরপর একটি ইনজেকশন দেওয়ার পরপরই অঙ্কিতার মৃত্যু হয় বলে দাবি পরিবারের। ঘটনার পরপরই হাসপাতাল চত্বরে মৃতার আত্মীয়-পরিজনেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পরিবারের দাবি, চিকিৎসার গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে অঙ্কিতার। মৃতার বাবা রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে পুলিশের সামনেই দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে প্রাণনাশের হুমকিও দেন। শেষমেষ পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পরিবারের তরফ থেকে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবে বলেই জানানো হয়েছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির কারণে বন্ধ বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি। এর ফলে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন লাটে ওঠার জোগাড়। এই কর্মসূচি ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই অভিযোগ এর আগেও সামনে এসেছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে প্রায় আট হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় যা একপ্রকার বন্ধের মুখে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমছে। তারপরও যে সকল ছাত্রছাত্রী আছে, তাদের পঠন-পাঠনও বন্ধ করে এই সরকারি কর্মসূচি চলায় কার্যত প্রশ্নের মুখে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। বৃহস্পতিবার তেমনই এক ছবি ধরা পড়ল বারাসাতের বাণিকণ্ঠ নগর শশাঙ্ক শেখর স্মৃতি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ ক্যাম্পের জন্য বিদ্যালয় ছুটির বিজ্ঞপ্তি জারি না করায় ছাত্র-ছাত্রীদের এসে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হল। ছাত্র-ছাত্রীদের ফিরে যাওয়াটা খুবই দুঃখজনক। পঠন-পাঠন হলে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ভালো হত। এমনটাই অভিমত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরও। যদিও এ বিষয় নিয়ে আজব যুক্তি দিয়েছেন, স্থানীয় পৌরপিতা সমীর কুণ্ডু। তিনি বলেন, “বাচ্চাদের বাড়ির সামনে বিভিন্ন ড্রেন খোলা রয়েছে ফলে সেই ড্রেনে পড়ে একটা বাচ্চার যদি ক্ষতি হয়ে যায়, সে কারণেই এই কর্মসূচি তাদের বিদ্যালয়ে করতে বাধ্য হয়েছি, বিদ্যালয় একদিন না চললেও, জীবনহানির সমস্যা থেকে বাঁচবে বাচ্চারা।” অন্যদিকে এই বিষয়ে বাম শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদকের দাবি,” ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ এটি একটি সরকারি প্রকল্প। তার জন্য যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকেই বেছে নিতে হবে তার তো কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। সরকারি স্কুলগুলোকে সহজ সহজ মাধ্যম পেয়ে বসেছে রাজ্য সরকার। শিক্ষাব্যবস্থা মন্ত্রীদের খাটের তলায়।” এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একদিন ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠন বন্ধ ও তাদের মিড ডে মিলের আহার কেড়ে নেওয়ার মতন অভিযোগ তুলছেন নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির এক নম্বর জেনারেল কমিটির সম্পাদক সুমন কর্মকার। পাশাপাশি বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, “তৃণমূল কংগ্রেস তার রাজনৈতিক স্বার্থে সমস্ত কিছু জলাঞ্জলি দিতে পারে, কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্র-ছাত্রীদের এসে ফিরে যেতে হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে লাটে তুলে দিয়েছে। একদম গ্রাসরুট লেভেল থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে লাটে তোলার ব্যবস্থা করছে শাসক দল। তার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাই।” কেন ছাত্র-ছাত্রীদের পঠনপাঠন বন্ধ করে বিদ্যালয়গুলিতেই এই সরকারি কর্মসূচি করতে হচ্ছে তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। প্রতিটি পাড়ায় একাধিক ক্লাব থাকলেও কেন সেগুলোকে বেছে নেওয়া হচ্ছে না এই সমস্ত সরকারি কাজের জন্য— সে প্রশ্নও তুলছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
বিধানসভায় ধুন্ধুমার, বিজেপিকে ‘চোর’ আখ্যা মমতার, সাসপেন্ড পাঁচ বিজেপি বিধায়ক

বৃহস্পতিবারও ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করার কথা ছিল। সেই মতো দুপুর ১২টা নাগাদ শুরু হয় অধিবেশন। এর আগে গত মঙ্গলবার শঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাসপেন্ড হয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মতো তিনি আজ বিধানসভা কক্ষে ছিলেন না। বিজেপির হয়ে মুখ্য সচেতক ছিলেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ও বাঙালি ইস্যুতে সরাসরি বিজেপির বিজেপিকে নিশানা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘চোরেদের সরকার’ বলে আখ্যা দেন। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা কক্ষ। রীতিমত ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিজেপি বিধায়করা পাল্টা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই ‘চোর চোর’ শ্লোগান তুলতে থাকেন। এর পরেই সাসপেন্ড করা হয় বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে। বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীরা শঙ্কর ঘোষকে টেনে বের করার চেষ্টা করলে বিজেপির অন্যান্য বিধায়কদের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়। এরপর দু ঘণ্টার মধ্যে সাসপেন্ড হন বিজেপির পাঁচজন বিধায়ক। যদিও তৃণমূল বিধায়করা নিজেদের আসনে বসেই সবটা দেখেছিলেন। এদিন অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে বক্তব্য রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তাঁর আগে বলার কথা ছিল বিজেপির অগ্নিমিত্রা পলের। কিন্তু স্পিকার তাঁর নাম ডাকলেও তিনি সভাকক্ষে উপস্থিত না থাকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ডাকা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই অগ্নিমিত্রা পল সভাকক্ষে ঢোকেন। তখন বিজেপি বিধায়করা চিৎকার করতে থাকেন, যাতে অগ্নিমিত্রাকে বলতে দেওয়া হয়। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই স্পিকারকে বলেন বিজেপি বিধায়ককে বলতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় যেহেতু তিনি উপস্থিত ছিলেন না, তাই তাঁর জন্য বরাদ্দ সময় কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়। তারপর আবারও মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেন। তখনই বিজেপির তরফ থেকে পাল্টা শ্লোগান তোলা হয়। স্পিকার বারণ করা সত্ত্বেও থামেননি বিজেপি বিধায়করা। এরপরই প্রথমে শঙ্কর ঘোষ। তার পর সাসপেন্ড করা হয় অগ্নিমিত্রা পাল। এরপর একে একে মিহির গোস্বামী, অশোক দিন্দা, বঙ্কিম ঘোষকেও সাসপেন্ড করা হয়। মিহির গোস্বামীকে কার্যত চ্যাংদোলা করে বার করা হয় বিধানসভা কক্ষ থেকে। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এই ঘটনার জন্য সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই আঙুল তুলে বলেন, “স্পিকার মমতার দালাল, মমতার নির্দেশেই এই নাটকের চিত্রনাট্য লিখেছেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।” পাশাপাশি বিজেপিকে মুখ্যমন্ত্রী ‘চোর’ বলায়, তার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শুভেন্দু বলেন, “মমতা সবচেয়ে বড় চোর। ও চাকরি চুরি করেছে, আর ভাইপো টাকা নিয়েছে। পিসি-ভাইপো মিলে প্রশ্ন ফাঁস করে বিক্রি করেছে। তার অডিও প্রমাণও আমার কাছে আছে।” তারপরই মমতার নাম ধরেই শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, “ওকে নন্দীগ্রামে হারিয়েছি, ভবানীপুরেও হারাব।” পাশাপাশি এদিনের ঘটনা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আরও একবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, যাতে তাঁর বক্তব্য মানুষ শুনতে না পায় সে কারণেই বিজেপি পরিকল্পনা করেই এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তিনি বলেন, “আমি ধিক্কার জানাচ্ছি। এরা জেনেশুনেই, আমার কথা যাতে মানুষ শুনতে না পারে, আমার কন্ঠরোধ করার জন্যই ওদের এই কর্মসূচি। সকালে কিন্তু ওরা ছিল না। ওরা এসেছে, আমি আসার কিছুক্ষণ আগে। যখন নাম ডেকেছে, ওরা কিন্তু তখন বক্তব্য রাখেনি। যেই নিজেদের বলা হয়ে গিয়েছে, ওমনি অশান্তি। আমি বলবই, আমার কন্ঠরোধ করা যাবে না।” এরই সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালিদের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পর একটা দল, যাদের দেশ স্বাধীন করার পিছনে কোনও ভূমিকা ছিল না, তারা এখন দেশের সবথেকে বড় ডাকাত। মানুষে মানুষে ভাগাভাগি করেন। ব্রিটিশদের সঙ্গে মিশে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সাম্প্রদায়িক বিভাজন করেছিল। আগামী দিন বিজেপির কেউ নির্বাচিত হবেন না। স্বৈরাচারী শক্তি। যে বাঙালি দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে, সেই বাঙালিদের এরা অপমান করছে। এরা বাঙালির শত্রু।” সব মিলিয়ে রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে কেউ যে কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছেড়ে দিতে রাজি নয়, তা আজকের ঘটনায় স্পষ্ট। এরপর ভোট যত এগোবে ততই এই রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
নতুন জিএসটি মডেল নিয়ে নিজের কৃতিত্ব দাবি তৃণমূলের

গত বুধবার ৫৬তম জিএসটি (GST) কাউন্সিলের বৈঠক ভাতের জিএসটি রেটে বড়সড় বদল আনা হয়েছে। জিএসটি কাঠামোকে আগের চেয়ে অনেক সরলীকরণ করে মাত্র দুটি স্ল্যাবে সাজানো হয়েছে। ৫, ১২, ১৮ ও ২৮ শতাংশের বদলে শুধুমাত্র ৫ ও ১৮ শতাংশ জিএসটি মডেল তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে নিঃসন্দেহেই উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ। নতুন এই জিএসটি রেটের ফলে এক দিকে যেমন দাম কমবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের, পাশাপাশি জীবনদায়ী ওষুধ, চিকিৎসা ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সরঞ্জামের দাম কমায় স্বস্তিতে মধ্যবিত্ত জনগণ। এমনকী হেলথ ও লাইফ ইন্সিওরেন্স, দুধ, পনির, রুটির মতো অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যকে জিএসটির আওতার বাইরে রেখেছে সরকার। আর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের এই জিএসটি কমানোর সিদ্ধান্ত যে তৃণমূলের নিরন্তর কেন্দ্রকে চাপেরই ফসল, হাবে ভাবে সেটাই বোঝাতে চাইল রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের নতুন জিএসটি মডেলকে ‘সাধারণ মানুষের জয়’ বলে ঘোষণা করে তৃণমূলের তরফ থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। পাশাপাশি ওই পোস্টে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সামনে আনা হয়েছে বেশ কিছু পুরনো টিঠি। যেখানে দেখা যাচ্ছে ২০২৪ সালের ২ আগস্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে চিঠিগুলি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে স্বাস্থ্যবিমা ও জীবন বিমায় ১৮ শতাংশ জিএসটিকে ‘গণবিরোধী’ বলে দাবি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পোস্টে সেই চিঠির উল্লেখ করে যে তৃণমূল কংগ্রেস এই নতুন জিএসটি কমানোর সিদ্ধান্তের কৃতিত্ব নিজেদের দিকে টানতে চাইছে তা একপ্রকার পরিষ্কার। কেননা বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তাই নির্বাচনের আগে এই নতুন জিএসটি রেটকে যাতে কোনও ভাবেই বিজেপি হাতিয়ার করতে না পারে তার আগেই সাধারণ মানুষের কাছে এই তথ্য তুলে ধরে তৃণমূল আবারও প্রমাণ করে দিল নির্বাচনের আগে বিজেপিকে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দিতে তারা রাজি হয়। তাই এই পোস্টে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতি নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস ভবিষ্যতেও যে বিরুদ্ধে এভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাবে তারও বার্তা দেওয়ায় হয়েছে। যাতে করে সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছায় যে, বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে তৃণমূলই একমাত্র ভরসা। সব মিলিয়ে ২৬শে বিধানসভা নির্বাচনের আগে জিএসটি নিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করাকে নির্বাচনী কৌশল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
পুজোর আগেই GST রেটে বড়সড় বদল, সস্তা হচ্ছে কী কী?

পুজোর আগেই নতুন জিএসটি(GST) রেট বেঁধে দিল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। গত বুধবার ছিল ৫৬তম জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক। সেই বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের উপস্থিতিতে নতুন জিএসটি রেট ধার্য্য করল অর্থমন্ত্রক। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হবে নতুন এই জিএসটি রেট। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বাণিজ্য শুল্ক ৫০ শতাংশ করায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারতের বাণিজ্য মহল। স্বাভাবিক ভাবেই সকলের নজর ছিল জিএসটি কাউন্সিলের এই বৈঠকের উপর। বাণিজ্য ক্ষেত্রে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতে এই বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এই বৈঠকে মূলত দুই স্ল্যাবের জিএসটি কাঠামো সাজাতে চেয়েছে কেন্দ্র। পাশাপাশি কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে সবুজ সংকেত দিয়েছে কাউন্সিলও। ফলে এখন থেকে আর আগের মতো ৫, ১২, ১৮ ও ২৮ শতাংশের জিএসটি স্ল্যাব থাকছে না। পরিবর্তে জিএসটি অনেক সরলীকরণ করে ৫ শতাংশ ও ১৮ শতাংশের দুটি স্ল্যাব করা হয়েছে। তবে বিলাসবহুল দ্রব্যের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ জিএসটিই বহাল থাকছে। সরকারের এই নতুন জিএসটি রেটের ফলে সস্তা হতে পারে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন— ঘি, মাখন, চিজ, পাস্তা, সাবান, সস ও বিভিন্ন মিস্টিজাত খাবার। কেননা আগে এগুলোর উপর জিএসটির হার ছিল ১২ থেকে ১৮ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে আনা হয়েছে ৫ শতাংশে। এই একই জিএসটি রেটের আওতায় পড়ছে বিভিন্ন ড্রাই ফুড যেমন— কাজু, পেস্তা, আমন্ড, খেজুর ও বেশ কিছু রকমের ফল। পাশাপাশি দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন— দুধ, পনির, ছানা, রুটি ও পিৎজার উপর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে জিএসটি। একই সঙ্গে দাম কমবে বিভিন্ন জীবনদায়ী ওষুধ ও চিকিৎসার সরঞ্জাম যেমন থার্মোমিটার, অক্সিজেন, ডায়াগনস্টিক কিট প্রভৃতির ক্ষেত্রে। এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন— তেল, সাবান, শ্যাম্পু, দেশলাই, মোমবাতি, শেভিং ক্রিম প্রভৃতিতে আগে যেখানে ১২ থেকে ১৮ শতাংশ জিএসটি দিতে হত, এখন থেকে তা দিতে হবে ৫ শতাংশ। পাশাপাশি গ্রানাইট, মার্বেল, ইঞ্জিনিয়ারিং উডের মতো পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ সামগ্রীর উপরও মাত্র ৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য হবে। এই নতুন জিএসটি মডেলের দ্বিতীয় ধাপে রাখা হয়েছে বিভিন্ন আসবাবপত্র, খেলাধূলা ও খেলনা সামগ্রী, বিভিন্ন হস্তশিল্প ও স্টেশনারি জিনিসপত্র, লেখাপড়ার সরঞ্জাম যেমন— পেন, পেন্সিল, নোটবুক প্রভৃতি। এমনকী সিমেন্টের উপর জিএসটির হার ২৮ থেকে কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দাম কমতে পারে সাইকেল, মোটরবাইক, ছোট গাড়িও। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমলেও, কমছে না নেশার দ্রব্য সামগ্রী, যেমন— বিভিন্ন তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিড়ি, সিগারেট, গুটখা, পানমশলা প্রভৃতি। এদের ক্ষেত্রে জিএসটি রেট ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এই জিএসটি রেটের আওতায় পড়ছে বিভিন্ন ধরনের পানীয়ও।