শুভেন্দু গড়ে ফুটল ঘাসফুল, খাতা খুলতেই পারল না বিজেপি-সিপিএম জোট

নন্দীগ্রাম সমবায় ভোটে নিরঙ্কুশ জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার নন্দীগ্রাম ১নম্বর ব্লকের গড়চক্রবেড়িয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পরিচালন বোর্ড নির্বাচনে সিপিএম ও বিজেপি জোটকে কার্যত ধরাশায়ী করল শাসক শিবির। ১২টি আসনের সবকয়টি আসনে জয়ী হল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর খাস তালুকে এই জয় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তৃণমূলের কাছে। স্থানীয় বেশ কিছু সমবায়ে বিজেপি জয় পেলেও, নন্দীগ্রাম ১নম্বর ব্লকের গড়চক্রবেড়িয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তৃণমূল নিজেদের দখলে রেখেছে। এই জয়ের ফলে আগামী ৫ বছর আবারও এই সমবায় সামলাবে শাসক শিবির। এই সমবায় ভোটে ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি ও বাম জোট। তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছিল ১২টি আসনেই। স্বাভাবিকভাবে ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩টি আসনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বাকি ৯ টি আসনে ভোট হয়। সেই ৯ টি আসনে প্রত্যেকটিতে ১০ থেকে ১৫ টি করে ভোট পেয়েছে রাজ্যের শাসকদল। এই ভোট গ্রহণ কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পুলিশি তৎপরতা ছিল তুঙ্গে।
পুজোর আগে শর্তসাপেক্ষে কলকাতায় খুলছে রুফটপ রেস্তরাঁ

বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। এই কটা দিন বাঙালি কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করে না। বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরা-আড্ডা এবং সেই সাথে অবশ্যই পেটপুজো। খাদ্য রসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তির জন্য নতুন সুখবর দিল কলকাতা পুরসভা। পুজোর আগেই কলকাতার রুফটপ রেস্তরাঁ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল পুরসভা। তবে হ্যাঁ, তার জন্য মেনে চলতে হবে একাধিক শর্ত। কেননা আকাশ ছোঁয়ার আস্কারায় শহরের বুকে অগ্নিদগ্ধ স্মৃতিগুলো যে এখনও তাজা। তাই এক্ষেত্রে নিয়মের কোনও শিথিলতা থাকলে চলবে না, স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বুধবার পুরমন্ত্রী বলেন, “আমরা নতুন করে কোনও রেস্তরাঁর অনুমোদন দিচ্ছি না। তবে যেগুলি আগে থেকে ছিল, সেগুলি পুজোর আগেই চালু হবে। তবে রুফটপ চালু করা হলেও মানতে হবে একাধিক শর্ত। মোট রুফটপের ৫০ শতাংশ খালি রাখতে হবে। যেদিকে হাইড্রোলিক ল্যাডার ঢুকবে রেস্তরাঁর সেই দিকে ৫০ শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে, যাতে উদ্ধারকার্য করা যায়। মানুষকে বাঁচাতে যা যা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা দরকার, তা অবশ্যই রাখতে হবে। রাখতে হবে প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাও।” পাশাপাশি ফিরহাদ আরও বলেন, “ভবিষ্যতে আমরা একটা বিল আনব, যেখানে ছাদ কমন এরিয়া হিসেবে রাখতে হবে। ফায়ার, পুলিশ এবং কর্পোরেশন তিন মাস অন্তর সরোজমিনে খতিয়ে দেখবে। নিয়ম না মানলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।” তাঁর কড়া বার্তা—”মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ব্যবসা চলতে পারে না। ছাড়পত্র চাইলে নিয়ম মানতেই হবে।” এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে স্টিফেন কোর্টের কথা মনে করিয়ে দেন ফিরহাদ। ২০১০ সালে স্টিফেন কোর্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এমনকী গত বছরের এপ্রিলে বড়বাজারের মেছুয়ার ফলপট্টির হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। তাই এইসব পুরনো ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিয়মের বিষয়ে আরও কঠোর হতে চাইছে পুরসভা। পুরসভার গাইডলাইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রুফটপ রেস্তরাঁর ক্ষেত্রে ছাদে বসার জায়গার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ খালি রাখতে হবে। রাস্তার দিকে রেসকিউ স্পেস রাখতেই হবে। থাকতে হবে চলমান ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা — জলের পাইপ, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, অ্যালার্ম সিস্টেম সহ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সিঁড়ি খোলা রাখতে হবে। এই সমস্ত বিধিনিষেধ মানলে তবেই মিলবে ছাড়পত্র।
ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা ভারতীয় বস্ত্র শিল্পে

বুধবার থেকেই কার্যকর হল ভারতের উপর চাপানো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক। আর এর জেরেই বাণিজ্য শুল্ক পৌঁছাল ৫০ শতাংশে। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারতে বস্ত্র শিল্পে। ইতিমধ্যেই ভারতে অনেক জায়গাতেই বস্ত্র উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আজ থেকে ভারতীয় বস্ত্র পণ্যের উপর ৫৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে হোয়াইট হাউস। গতবছর সব মিলিয়ে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমেরিকায় রফতানি করেছিল ভারত। সেখানে এবার অতিরিক্ত শুল্কের কারণে উৎপাদনই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এস সি রালহান জানিয়েছেন, “ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতার কারণে বস্ত্র উৎপাদকরা তিরুপুর, নয়ডা এবং সুরাটে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশে কম খরচে তৈরি হচ্ছে পোশাক। তাদের তুলনায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি আমরা।” তাঁর মতে চিন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ফিলিপিন্স এবং দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির তুলনায় ভারতীয় পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির তরফে জানানো হয়েছে, ভারতে তৈরি পোশাকের ওপর ৬০.৩ থেকে ৬৩.৯ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যার ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারতের বস্ত্র ব্যবসা। শুধুমাত্র বস্ত্র নয়, কার্পেটে শুল্ক হার বেড়ে হয়েছে ৫২.৯ শতাংশ। গতবছর ১.২ বিলিয়ন ডলারের কার্পেট আমেরিকায় পাঠিয়েছিল ভারত। এখন এই বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নেয় সেদিকেই তাকিয়ে আছে বস্ত্র কারখানাগুলি। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রাকেশ মেহরা বলেছেন, “সরকার এই মুহূর্তে কীভাবে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলছে। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে দৃঢ় সমর্থন চাই এবং কাঁচামালের ক্ষেত্রে নীতি পর্যায়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাই।” সব মিলিয়ে রাশিয়ার থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসাবে ভারতের উপর অতিরিক্ত যে ২৫ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার ফেসারত দিতে হচ্ছে ভারতের বস্ত্র উৎপাদক সংস্থাগুলিকে। এর ফলে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তারা। শুধু বস্ত্র ব্যবসাই নয়, এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সোনা, হীরে সহ সামুদ্রিক মাছ— বিশেষত চিংড়ি রপ্তানিতে বড় ধাক্কা আসতে চলেছে। ভারতের সামুদ্রিক খাদ্যদ্রব্যের প্রায় ৪০ শতাংশই রপ্তানি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু এই শুল্ক বৃদ্ধির জেরে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি। সেক্ষেত্রে ভারতের অর্থনীতিতেও বড় ধাক্কা লাগবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কী হয় সেটাই দেখার।