মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে ফের প্রকাশ্যে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে মতুয়া কার্ড ও ধর্মীয় সার্টিফিকেট দেওয়া নিয়ে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আবারও প্রকাশ্যে। দ্বন্দ্ব বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর ভাই তথা বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের মধ্যে। পারিবারিক বিবাদে ঠাকুর বাড়ির দুই ছেলে বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই দূরত্ব বাড়ছিল। ঠাকুরবাড়ির অন্দরে এই গুনজন চলছিল অনেক আগে থেকেই। এবার সিএএ(CAA)-এর জন্য মতুয়া কার্ড ও ধর্মীয় সার্টিফিকেট দেওয়াকে কেন্দ্র করে শান্তনু ঠাকুর ও সুব্রত ঠাকুরের সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এল। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ঠাকুরবাড়ির নাঠ মন্দিরে মতুয়াদের সিএএ ফর্ম পূরণের জন্য ক্যাম্প করছিলেন। কিন্তু তাঁর দাদা সুব্রত ঠাকুরের অভিযোগ শান্তনু ইচ্ছে করে গায়ের জোরে এবং মন্ত্রীত্বের গরম দেখিয়ে ঠাকুর বাড়িতে কর্তৃত্ব ফলাতে চাইছে। সে বিষয়ে তাঁর মা ছোট ছেলে শান্তনুর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মাকে নাকি গালিগালাজ করে শান্তনু। অন্যদিকে, সুব্রত ঠাকুর ও শান্তনু ঠাকুরের মা ছবিরানী ঠাকুরের অভিযোগ, শান্তনু ঠাকুর মতুয়া মহাসংঘে একচ্ছত্র আধিপত্য চালাচ্ছে। মতুয়া কার্ড ও ধর্মীয় কার্ড দেওয়ার জন্য শান্তনু ঠাকুর সাম্প্রতিক নাট মন্দিরে ক্যাম্প করেছে। সুব্রত ঠাকুর এই ক্যাম্পের প্রতিবাদ করেছে। তাই নিয়েই শুরু হয়েছে দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এমনকী এই দ্বন্দ্ব মেটাতে তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুরের দ্বারস্থ হয়েছেন শান্তনু ও সুব্রত ঠাকুরের মা ছবিরানী ঠাকুর। নাট মন্দিরে সুব্রত ঠাকুর মমতা ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলেন। সুব্রত জানান, “জেঠিমার কাছে গিয়েছিলাম। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। আমি আমার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ঠাকুরবাড়ির নাট মন্দির ভক্ত-সেবায়েতদের জন্য সংরক্ষিত। সেখানে ঠাকুরের নাম-গান হয়। সেসব বন্ধ করে শান্তনু মন্ত্রীত্বের জোরে সেখানে সিএএ ক্যাম্প করছে। আমি তার প্রতিবাদ করেছি। এ লড়াই আমার অধিকারের লড়াই।” পাশাপাশি মতুয়া ভক্তদের কাছে সুব্রত ঠাকুর আবেদন করেছেন, যাতে করে এই অন্যায় কাজের জন্য ভক্তরা তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে ফেলেন। তাঁর আরও অভিযোগ, শান্তনু নিজের মাকে অপমান করেছেন। এর বিচার চেয়ে তিনি ভক্তদের কাছে শান্তনুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন। সুব্রত ঠাকুরের মা ছবিরানী ঠাকুর দাবি করেছেন, “মতুয়া মহা সংঘের অধিকার নিয়ে আমাদের এই লড়াই। আমি আমার বড় জা-এর কাছে গিয়েছিলাম। যেহেতু এটা আমাদের পারিবারিক সমস্যা সেকারণে। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। আমি কোনও রাজনিতি করি না।” তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুরের বক্তব্য, “সুব্রত ও ওর মা আমার কাছে এসেছিল। যেহেতু এটা ঠাকুরবাড়ির ব্যাপার সেকারণে। আমি মনে করি এই ঠাকুরবাড়িতে শান্তনুর যতটা অধিকার আছে, সুব্রতরও ততটাই। কিন্তু সুব্রতরও অধিকার বঞ্চিত করে ঠাকুরবাড়িতে শান্তনু একচ্ছত্র অধিকার আদায় করতে চাইছে। এটা অন্যায়।” যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শান্তনু ঠাকুর। তাঁর পাল্টা অভিযোগ সুব্রত তৃণমূলের মন্ত্রী হওয়ার জন্য এসব নাটক করছে। তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুরের সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের দূরত্ব নাকি অনেকটাই কমেছে। এক সঙ্গে ছবিও দেখা যাচ্ছে। তাই শান্তনু ঠাকুরের পাল্টা মন্তব্য, “এটা বিজেপি জন্য ভালো বার্তা নয়।” শান্তনুর দাবি, “সুব্রত ঠাকুর পাঁচ বছর সবকিছু ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিল। আমি মন্ত্রী হওয়ার পর এখন উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছে। আমি মন্ত্রী এটা ও মেনে নিতে পারছে না। বিজেপি বিধায়ক হয়ে তো মন্ত্রী হতে পারবে না। তাই তৃণমূলে যাবে। বিজেপি টিকিট দিলে সেই টিকিটে জিতে তৃণমূলে গিয়ে মন্ত্রী হবে। তাই এসব নাটক করছে। নাটক না করলে তো আবার তৃণমূলে দাম পাবে না। তাই এই নাটক। সব মিলিয়ে ভোটের আগে ঠাকুরবাড়ির অন্দরে আবারও যে রাজনৈতিক পারদ চড়তে শুরু করেছে তা বলাই বাহুল্য।
ভারতে অনুপ্রবেশের সময় বিএসএফের হাতে ধরা পড়ল শেখ হাসিনা সরকারের সেনা সচিব

গত বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের ফলে ভারতে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইউনূস আসার পর থেকেই বাংলাদেশে আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সব রকম তৎপরতা চালায়। একনকী হাসিনার পাশাপাশি জনরোষের হাত থেকে বাঁচতে আওয়ামী লিগের অনেক উচ্চপদস্থ নেতারাও লুকিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। এবার শেখ হাসিনা সরকারের সেনা আধিকারিকের ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা। গত শনিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে তিনি ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করার সময় বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের সেনাবাহিনীর এক সময়ের সচিব আফরুজ্জামান এসিপি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বে ছিলেন। ইউনূস সরকার আসার পরে সাতক্ষীরা জেলায় আত্মগোপন করে ছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের এই উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিক। বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। রাজ্যজুড়ে নাগাড়ে বৃষ্টি চলছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে আফরুজ্জামান গত শনিবার রাতে বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থানার ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তের হাকিমপুর চেকপোস্ট দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেন। আফরুজ্জামান ভারতে প্রবেশের সময়ই ১৪৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা আটক করে তাঁকে। তারপর তাঁকে স্বরূপনগর থানার পুলিশ হাতে তুলে দেওয়া হয়। আফরুজ্জামানের কাছ থেকে বেশকিছু নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। সেই সমস্ত নথিপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে ভারতের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের হাতে। বিএসএফ ও পুলিশের তরফ থেকে যৌথভাবে রাজ্যের উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের পুরো ঘটনাটি লিখিতভাবে জানানো হয়। এমনকী ভারতের হাই কমিশনারের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টিই জানানো হয়েছে বাংলাদেশ হাই কমিশনারকে। বাংলাদেশের সচিবকে আপাতত রাখা হয়েছে স্বরূপনগর থানায়। রবিবার তাঁকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে পেশ করা হবে। এনআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের হাইকমিশনারের মধ্য তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ইউনূস সরকারের হাতে তাঁর জীবন সুরক্ষিত নয়, সেই কারণেই বাংলাদেশে দীর্ঘ কয়েক মাস সীমান্তবর্তী এলাকায় আত্মগোপন করে ছিলেন আফরুজ্জামান। শনিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢোকার সময়ই বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
আরজি কর কাণ্ডে নয়া মোড়? আবারও সক্রিয় সিবিআই

গতবছর ৯ আগস্ট আরজি করে জুনিয়র তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার সময়ই সামনে এসেছিল একাধিক অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগ। সেই ঘটনায় আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। এমনকী গ্রেফতার হয়েছিলেন সন্দীপের দেহরক্ষী, সন্দীপ ঘনিষ্ঠ এক জুনিয়র চিকিৎসক এবং দুই ব্যবসায়ী। আরজি কর হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে সেসময় মামলা করেছিলেন সেই হাসপাতালেরই প্রাক্তন সুপার আখতার আলি। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আরজি কর দুর্নীতির সেই মামলাতেই নাকি নতুন তথ্য হাতে এসেছে সিবিআইয়ের। সেই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতেই গত শনিবার তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের শ্রীরামপুরের বাড়িতে যান তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিকরা। দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয় এই তৃণমূল বিধায়ককে। যদিও এর আগেও সিবিআই একাধিক বার জেরা করেছিলেন সুদীপ্তকে। তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায় আগে আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতির প্রধান ছিলেন। সে সময় আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় একাধিকবার জেরার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। গত শনিবার সুদীপ্ত রায়ের বাড়ির পাশাপাশি তাঁর নার্সিংহোমেও হানা দেন সিবিআই আধিকারিকরা। যদিও সুদীপ্ত রায়কে জেরা করে তদন্তকারী অফিসাররা নতুন কোনও তথ্য জানতে পারল কী না সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। কিংবা কেনই বা এই মামলায় আবারও নড়েচড়ে বসল সিবিআই, তাও স্পষ্ট নয়। তবে সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের হাতে নতুন করে এমন কিছু তথ্য এসেছে, তা খতিয়ে দেখতেই সুদীপ্ত রায়ের বাড়ি ও নার্সিংহোমে হানা দেন সিবিআই আধিকারিকরা। তবে সিবিআইয়ের তরফ থেকে এ বিষয়ে মুখ না খোলা হলেও, তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায় জানিয়েছেন, “মামলা সংক্রান্ত যা প্রশ্ন করা হয়, তার জবাব দিয়েছি। আমি প্রথম থেকেই এই মামলায় সহযোগিতা করে এসেছি।” আরজি কর দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়েছে আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে। এই মামলায় শুরু হয়ে গিয়েছে বিচার প্রক্রিয়াও। তারই মধ্যে এই মামলা নিয়ে সিবিআইয়ের ফের তৎপর হয়ে ওঠা সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ।