চাকরিহারা শিক্ষকের মৃত্যুতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ আন্দোলনকারীদের

ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের সকালেই মৃত্যু হল চাকরিহারা শিক্ষক সুবল সোরেনের। স্কুল সার্ভিস কমিশন(SSC) মামলায় যে ২৬ হাজার জন শিক্ষক চাকরিচ্যুত হয়েছেন, সেই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন সুবল। বেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৫ বছরেই মৃত্যু হয়েছে চাকরিহারা এই শিক্ষকের। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন ৩৫ বছরের সুবল। সোমবার হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রাথমিকভাবে ডেবরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কিন্তু আইসিইউ না থাকায় তাঁকে আনা হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই ভর্তি ছিলেন। শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। এবার সুবল সোরেনের মৃতদেহ লোপাটের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নির্যাতিতা চিকিৎসকের ক্ষেত্রে যেরকমভাবে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছিল, ঠিক একইভাবে পরিবারের লোকজনকে না জানিয়ে সুবলের দেহ নিয়েও পুলিশ চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। শেষমেশ আন্দোলনকারীরা শববাহী গাড়ি আটকে দেন। এই পুরো ঘটনার দায় তারা চাপিয়েছেন রাজ্য সরকারের উপর। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতির কারণেই যোগ্য হয়েও চাকরি চলে গিয়েছিল সুবলের। সেই মানসিক চাপ সামলাতে না পারায় বেনস্ট্রোক হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। অনেকদিন ধরেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন সুবল। তাঁর স্ত্রীর দাবি, চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকেই সুবল প্রবল মানসিক কষ্টে ভুগছিলেন। এমনকী ওষুধ পর্যন্ত খেতে চাইতেন না। এই গোটা ঘটনার দায় রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়েছেন শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, “মৃত্যুর সমস্ত দায় রাজ্য সরকারের। তাদের দুর্নীতির দায় যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ঘাড়ে করে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।” সেইসঙ্গে তিনি আরও দাবি করেছেন যে, সুবলের পরিবারের এক সদস্যকে চাকরি দিতে হবে। পাশাপাশি ১০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবিও তুলেছেন শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক।
লালকেল্লা থেকে নাম না করে আবারও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন প্রধানমন্ত্রী

গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন ভারতের উপর বাণিজ্য শুল্ক বাড়িয়ে চলেছে। তেমনি আমেরিকার মদতে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনির থেকে শুরু করে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতকে কার্যত একের পর এক হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। এই আবহে দেশবাসী অপেক্ষা করেছিলেন দেশের ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে কী বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে কারও নাম না করেই পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতকে পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়েছিলেন পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির। তিনি বলেছিলেন, “আমরা পরমাণু শক্তিধর দেশ। আমরা যদি ডুবি, অর্ধেক বিশ্বকে নিয়ে ডুবব।” পাশাপাশি মুনিরের মুখে গুজরাটের জামনগরে আম্বানিদের তেল শোধনাগারে হামলার হুঁশিয়ারিও শোনা গিয়েছিল। স্বাধীনতা দিবসের সকালে লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে মুনিরের নাম মুখে উচ্চারণ না করেও এর স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “পরমাণু হামলার হুমকি আমরা বরদাস্ত করব না। দীর্ঘদিন ধরে নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেল সহ্য করছি। কিন্তু আর নয়। এই ধরনের চেষ্টা হলে আমাদের সেনা তার উপযুক্ত জবাব দেবে।” পাশাপাশি এদিন সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল নিয়েও সরব হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করে ভরত। সেই নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গত কয়েকদিন আগে ভারতকে নিশানা করে। শাহবাজ জানান, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করার ফল ভারতকে ভুগতে হবে। শুক্রবার লালকেল্লা থেকে তারও জবাব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী বলেন, “নিজেদের তৃষ্ণার্ত রেখে শত্রুদের জল দেওয়া হচ্ছিল। তা আর হবে না। সিন্ধুর জলে ভারত এবং ভারতের কৃষকদেরই অধিকার থাকবে। জল আর রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না।” ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ যে পাকিস্তান রীতিমত ভয় পেয়েছে, সেকথাও জানান তিনি। স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর গলায় আবারও শোনা গেল আত্মনির্ভরতার কথা। জ্বালানি ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ার প্রক্রিয়া যে ভারত ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে শুক্রবার সে কথাও ঘোষণা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন বলেন, “সেমিকন্ডাক্টর খাতে মিশন মোডে কাজ চলছে। চলতি বছরের শেষেই মেড ইন ইন্ডিয়া চিপ বাজারে আসবে।” সব মিলিয়ে ভারত যেকোনও প্রশ্নেই যে কারও কাছে মাথা নত করবে না, তা প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট।