নবান্নের বৈঠক থেকেই পুলিশের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা মমতার

গত কয়েক দিনে রাজ্যে খুন হয়েছেন বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা। ইংরেজবাজার, ভাঙড়, সুতি, লাভপুর-মল্লারপুর থেকে কোচবিহার সব মিলিয়ে গত এক মাসে সংখ্যাটা দশের কাছাকাছি। একাধিক জায়গায় শাসক দলের নেতা খুনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকেই আঙুল উঠেছে। গ্রেফতার হয়েছে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। এসব নিয়ে যে রীতিমত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা মঙ্গলবার নবান্নের বৈঠকে স্পষ্ট করে দিলেন। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ নিয়ে আজ নবান্নে বৈঠকে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক এবং বিভিন্ন জেলার এসপি থেকে শুরু করে কমিশনারেটের সিপিরা। সেখানে কোনও পুলিশ অফিসারের নাম না করেই পুলিশ সুপার, আইসি, ওসিদের নিজের নিজের এলাকা দায়িত্ব সহকারে দেখার নির্দেশ দেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী এই বৈঠক থেকেই থানার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। মমতার প্রশ্ন, আইবিদের কাছে কেন আগে থেকে কোনও খবর থাকছে না। মুখ্যমন্ত্রীর এদিন পরিষ্কার বলে দেন, শুধুমাত্র বড় বড় পদ আঁকড়ে বসে থাকলে চলবে না। দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোচবিহারে সঞ্জীব রায়, বাঁকুড়ার সোনামুখীর সেকেন্দার খাঁ, কোন্নগরের পিন্টু চক্রবর্তী সহ গত কয়েক মাসে রাজ্যে একাধিক তৃণমূল নেতা ও শাসক ঘনিষ্ঠরা খুন হয়েছেন। সেই আবহে মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া বার্তা যে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মঙ্গলবার নবান্নের এই বৈঠকে প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তাবড় তাবড় কর্তাদের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর এহেন ভর্ৎসনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা আদৌ কতটা তৎপর হয়ে ওঠে এখন সেটাই দেখার। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যে জেলা পুলিশের আধিকারিকদের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
বিজেপি বিধায়কের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে, এসডিও অফিসে ডেপুটেশন

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারের বিরুদ্ধে বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের সাধারণ মানুষরা মঙ্গলবার বনগাঁ এসডিও (SDO) অফিসে একটি ডেপুটেশন জমা দেয়। তাদের অভিযোগ ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই স্বপন মজুমদার ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। পরবর্তীতে তাঁরা কবে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে সেই বিষয়ে আমরা জানতে চাই বলেই এসডিও-র দারস্থ হয়েছি। বিজেপি সাংসদ ও বিধায়করা যখন জোর করে বাংলায় সিএএ করানোর চেষ্টা করছে, তখন আমরাও চাই এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ করা হোক। যদিও সাধারণ মানুষের এই অভিযোগের পাল্টা বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার জানিয়েছেন, “এটা সত্য যে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আমার নাম নেই। কারণ আমি সেই সময় কর্মসূত্রে মুম্বাইতে ছিলাম। আমার বয়স তখন ১৮-১৯ বছর ছিল। তার আগেই আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১২-১৩ সালে ২৪-২৫ বছর বয়সে আমার ভোটার তালিকায় নাম ওঠে। এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, অনেকের ক্ষেত্রে হয়। আর এটা তো ঠিক যে আমরা উদ্বাস্তু। বাবা-মা বাংলাদেশ থেকে এসেছে ১৯৭১ সালে, তার প্রমাণ অবশ্যই আমি দেখাব।” তিনি আরও জানান, “তৃণমূলের চোরগুলো সাধারণ মানুষের নাম করে বিভ্রান্ত করছে। সবাইকে আবেদন করতে অনুরোধ করছি।” তিনি সিএএ(CAA)-তে আবেদন করবেন কিনা সে প্রসঙ্গে বলেন, “আমি জন্মসূত্রে ভারতীয়। আমার মা সিএএ-তে আবেদন করবে।” এই বিষয়ে বনগাঁ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “স্বপন মজুমদারের মত মানুষরা অবৈধ পথ অবলম্বন করে ভোটার লিস্টে নাম তুলেছে। শুধু তাই নয়, বিজেপি নেতা অশোক কীর্তনিয়ারও কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। এরা সকলেই অবৈধ পথ অবলম্বন করে এখানকার ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। এখানে এসে ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে গেছে ওরা। ভাবছে ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে গেলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। অন্ধকার জগতের লোক বিজেপি করছে। ২০২৬ সালে মানুষ এর উপযুক্ত জবাব দিয়ে দেবে।”
তৃণমূলের ডেপুটেশন কর্মসূচি ঘিরে আবারও রণক্ষেত্র মালদা

তৃণমূলের ডেপুটেশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি তৈরি হল মালদায়। রাজ্যের বিরোধী জোট তথা বিজেপি ও কংগ্রেসের দখলে থাকা পঞ্চায়েতে কার্যত গুন্ডামি চালালো তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। গেট ভেঙে পঞ্চায়েতে ঢুকে মারধরের চেষ্টা, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ এবং ইট ছুঁড়ে মারার চেষ্টা চলল ওই পঞ্চায়েতের শাসক পক্ষের প্রতিনিধিদের। এই ঘটনায় কাঠগড়ায় তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও পাল্টা বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের ভিতর আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। মালদহের গাজোল ব্লকের আলাল গ্রাম পঞ্চায়েতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায়। বর্তমানে এই পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে বিরোধীদের মহাজোট। প্রধান রয়েছেন বিজেপির উমা মণ্ডল। উপপ্রধান রয়েছে কংগ্রেসের শফিকুল ইসলাম। তৃণমূল কংগ্রেস এখানে বিরোধীর আসনে। টেন্ডারে দুর্নীতি ও বেনিয়ম সহ মোট নয় দফা দাবি নিয়ে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের এই পঞ্চায়েতে একটি ডেপুটেশন কর্মসূচি ছিল। সেখানে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিরোধী দলনেতা ফারুক হোসেন জোর করে পঞ্চায়েতের মূল ফটকে ধাক্কা দিয়ে পঞ্চায়েত চত্বরে ঢুকে পড়ে। পুলিশ কার্যত দাঁড়িয়ে দেখছিল গোটা ঘটনাটি। তারপর আরেকটি দরজা ভেঙে উপরে ওঠার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আটকায়। নিচ থেকেই চলতে থাকে গালিগালাজ। ছোড়া হয় ইট-পাথর। পঞ্চায়েতের বাইরে এক ঠিকাদারকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিজেপি এবং কংগ্রেস পঞ্চায়েতে বহিরাগত গুন্ডা এবং আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রেখে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে। পরিস্থিতি এতটাই নাগালের বাইরে চলে যায় যে, তা সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেতে হয় গাজোল থানার পুলিশকে। এখনও থমথমে রয়েছে পঞ্চায়েতের আশেপাশের এলাকা।
‘বাংলায় এসআইআর করতে হলে, লোকসভা ভেঙেই করতে হবে’— অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর (SIR) নিয়ে আবারও সরব হলেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে এসআইআর নিয়ে আবারও বিজেপিকে নিশানা করলেন অভিষেক। তাঁর মতে, বিজেপি বা এনডিএ সরকারের লক্ষ্য যদি ভুয়ো ভোটার বাদ দেওয়াই হয়, তা হলে সবার আগে লোকসভা ভেঙে দেওয়া উচিত। তার পরে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলা, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, ঝাড়খণ্ড, কেরালা সর্বত্র এসআইআর হোক। যে সব রাজ্যে বিজেপির সরকার, সেই সব রাজ্য বাদ দিয়ে শুধুমাত্র বাংলায় এসআইআর হলে, তৃণমূল তা কোনও ভাবেই মেনে নেবে না। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বলেন, “বিজেপি নেতাদের বলব, আপনারা শুরু করুন। তৃণমূলের যত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন বা বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টির সব সাংসদ পদত্যাগ করবেন। লোকসভা ভেঙে দিন। তারপর আপনারা এসআইআর করুন। লোকসভা ভেঙে দিয়ে সারা দেশে এসআইআর হোক।” পাশাপাশি বিজেপি যে ইচ্ছাকৃত ভাবে এসআইআর-এর নাম করে বাংলায় অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে, সেই দাবি তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি জানান, “আপনি নির্বাচিত হয়েছেন, আপনার ভোটার লিস্টে গরমিল নেই। অথচ আমি নির্বাচিত হয়েছি, আমার ভোটার লিস্টে গরমিল রয়েছে, এটা তো হতে পারে না। এক যাত্রায় পৃথক ফল হতে পারে না। বাংলার একজন যোগ্য ভোটারও যদি বাদ পড়েন, তা হলে এক লক্ষ মানুষ নিয়ে গিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করা হবে।” এদিন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের ভূমিকা নিয়েও সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। তিনি বলেন, “তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে কমিশন ঠিক বলছে, ভোটার লিস্টে গরমিল আছে, তা হলে তো রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা উচিত। এফআইআর করা উচিত তাঁর বিরুদ্ধে। কারণ তাঁর নজরদারিতেই তো এক বছর আগে লোকসভা ভোট হয়েছিল। অভিষেকের মতে গত বছর যে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাংসদরা নির্বাচিত হয়েছেন, সেই ভোটার তালিকা নিয়ে যদি নির্বাচন কমিশন প্রশ্ন তোলে, তা হলে গত বছরের লোকসভা ভোটও স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়ে। এই অবস্থায় ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন করতে হলে, আগে নির্বাচিত সংসদ ভেঙে দিতে হবে। তার পরে নতুন করে ভোট হবে। সদ্য লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পরেই সংসদে এবং সংসদের বাইরে যেভাবে বিজেপি বিরোধিতায় সরব হয়েছে তৃণমূল সাংসদরা, তাতে করে এটা স্পষ্ট যে, ২৬শে ভোটের আগে বিজেপিকে এই ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দিতে রাজি নয় তৃণমূল কংগ্রেস।
অভয়ার মায়ের উপর পুলিশি আক্রমণের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের

আরজি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে গত ৯ অগস্ট নবান্ন অভিযানে পা মেলান অভয়ার বাবা-মা। পার্কস্ট্রিটের কাছে তাঁদের মিছিল আটকানো হয়। অভিযোগ ওঠে, সেইসময় নির্যাতিতার বাবা-মাকে পুলিশ মারধর করে। তারপরও তাঁরা নবান্নে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। কিন্তু রেসকোর্সের পাশে অবস্থান চলাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়েন অভয়ার মা। চোখেমুখে জল দেওয়ার পরেও অসুস্থ বোধ করতে থাকেন তিনি। সেই পরিস্থিতিতে নির্যাতিতার মা এবং বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গত রবিবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় অভয়ার মাকে। এবার এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন অভয়ার বাবা। জানা যাচ্ছে, সোমবার শেক্সপিয়র সরণী থানায় অনলাইনে একটি মেইল পাঠিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। অভিযোগপত্রে অভয়ার বাবার দাবি, পুলিশ অভয়ার মায়ের মাথায় ও পিঠে আঘাত করে। এর জেরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যদিও এর আগে নির্যাতিতার বাবা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর স্ত্রীর কপালে যে চোট লেগেছে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট নাকি হাসাপতালের তরফ থেকে ‘বদলে’ ফেলা হয়েছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেছিলেন, সরকারের চাপে হাসপাতাল তাঁর স্ত্রীকে ভর্তি নেয়নি। যদিও মাথায় চোট লাগায় নির্যাতিতার মাকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছিল হাসপাতাল। রবিবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ নিয়ে অভয়ার মা সেসময় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিল, “কলকাতা পুলিশই আমাকে মেরেছে। পুরুষ ও মহিলা পুলিশ মিলে আমাকে লাঠিপেটা করেছে। আমার শাঁখা ভেঙে দিয়েছে। আমার পিঠে লেগেছে। আমাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এমনকী ওর বাবাকেও মেরেছে। কেন আমায় মারা হল? কেন আমার মেয়েকে কাজের জায়গায় মারা হল? কেন প্রশাসন তৎপর হল না সেদিন?” যদিও পুলিশের তরফ থেকে অভয়ার মায়ের ওপর লাঠিচার্জের সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করা হয়। এবার সেই পুলিশের বিরুদ্ধেই থানায় লিখিত অভিযোগ জানালেন অভয়ার বাবা। তাঁর বাবার অভিযোগ, “রাজ্য সরকারের চাপে মেডিক্যাল রিপোর্টও বদলে দিয়েছিল হাসপাতাল। ডিসচার্জ রিপোর্টে কোথাও রোগীর বয়ানে আঘাতের কথা উল্লেখ ছিল না। পরে আমাদের আইনজীবীর প্রশ্নের মুখে পড়ে রিপোর্ট বদল করে মায়ের অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয় হাসাপাতালের ডিসচার্জ রিপোর্টে।” এবার সেই রিপোর্টের কপি সহ মেইল করে সেক্সপীয়র সরণী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অভয়ার বাবা। এখন দেখার, এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আদৌ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিনা।
অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পর ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা হুমায়ুন কবীরের

সম্প্রতি তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ বিধায়ক হুমায়ুন কবীর দলের অন্দরের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে একাধিক বার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন। নিজের বিধানসভা এলাকার ব্লক সভাপতি যে তাঁর এবং দলের নির্দেশ মানছেন না, এও খোলসা করেছিলেন ভরতপুরের বিধায়ক। পাশাপাশি এ বিষয়ে দলের উচ্চ নেতৃত্ব পদক্ষেপ না নিলে নতুন দল গড়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তৃণমূলের এই বিদ্রোহী নেতা। আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তিনি স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন যে, এর মধ্যে তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্ব তাঁর সমস্যা নিয়ে কথা না বললে তিনি নতুন দল গঠনের ঘোষণা করবেন। সেই দল যে শুধুমাত্র বহরমপুর কেন্দ্রীক নয়, তাও জানিয়েছিলেন হুমায়ুন। মালদা, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, নদিয়ায় ৫০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনাও ছোকে রেখেছিলেন তৃণমূলের এই বিক্ষুব্ধ বিধায়ক। শেষ পর্যন্ত ১৫ আগস্টের আগেই গত সোমবার ক্যামাক স্ট্রিটে বহরমপুর এবং মুর্শিদাবাদ জেলার সাংগঠনিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে হুমায়ুন সহ ১০ জন বিধায়ককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে নাকি অভিষেকের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় হুমায়ুন কবীরকে। দলের অন্দরের বিষয় বার বার প্রকাশ্যে আনায় হজম করতে হয়েছে বকুনিও। বৈঠকে নাকি হুমায়ুনকে অভিষেক বলেন, “আপনি সবকিছু নিয়ে কথা বলেন। দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেন।” এদিনের বৈঠকে হুমায়ুন কবীরও তাঁর অভাব-অভিযোগের কথা অভিষেককে জানান। পাশাপাশি সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণেরও আবেদন জানান। এদিনের বৈঠকে হুমায়ুনের প্রধান অভিযোগ ছিল তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্ব শুধুমাত্র হুমায়ুনের নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেকের নির্দেশও মানছেন না। সোমবারের বৈঠকে হুমায়ুন কবীরের করা সব অভিযোগ ডাইরিতে নোট করেন অভিষেক। এ বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নেবেন, সে কথাও জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সোমবারের বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকের সামনে বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিলেন ভরতপুরের বিধায়ক। মুখের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বেশ রহস্যময় উক্তি হুমায়ুনের, ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়’। এদিন সাংবাদিকদের সামনে খুব বেশি কিছুই বলতে চাননি হুমায়ুন। তিনি বলেন— “আজকের বৈঠকে আমি সন্তুষ্ট। দল যা নির্দেশ দিল তা প্রকাশ্যে বলা যাবে না, সেটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।” তবে তাঁর করা, ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়’— এই হেঁয়ালি নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে কি নতুন দল গড়ছেন হুমায়ুন? যদিও ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তার পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেন, আগামী নির্বাচনেও জয়ী হবে তৃণমূল কংগ্রেসই। তার ফলে মনে করা হচ্ছে, হুমায়ুন তৃণমূলেই থাকছেন।
গভীর রাতে ভয়াবহ গঙ্গা ভাঙনে তলিয়ে গেল আট থেকে দশটি বাড়ি

গভীর রাতে সামসেরগঞ্জে আবারও ভয়াবহ গঙ্গা ভাঙন। সোমবার রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় গঙ্গায় ভাঙনে তলিয়ে গেল আট থেকে দশটি বাড়ি। স্বভাবতই প্রাণভয়ে আতঙ্ক আর হুড়োহুড়ি পড়ে যায় উত্তর চাচন্ড এবং মধ্য চাচন্ড গ্রামজুড়ে। মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে শুরু হয়েছে ভয়াবহ এই ভাঙন। কোনরকমে পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হঠাৎ করে ভাঙনের ফলে ঘরের আসবাবপত্র থেকে দরকারি কাগজপত্র কোনও কিছুই বের করে আনতে পারেনি গ্রামবাসীরা। সবকিছু তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গা বক্ষে। গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি গৃহপালিত গরু-ছাগল। তলিয়ে গিয়েছে বহু গাছপালাও। ফাটল ধরেছে গঙ্গা সংলগ্ন এলাকায় থাকা প্রাচীন কালীমন্দিরে। যেকোনও মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে মন্দিরও। মঙ্গলবার সকাল থেকেই আতঙ্ক আর হুড়োহুড়িতে গ্রামবাসীরা প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পারছেন পালাচ্ছেন। নতুন করে ভাঙনের আশঙ্কায় বাড়ির আসবাবপত্র নিয়ে অন্যত্র পালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কোথায় যাবেন, কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তারা। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত কয়েকদিন থেকেই সামসেরগঞ্জের বেশ কয়েকটি গ্রামে বন্যা আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এরই মাঝে ভাঙন ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ভোররাতে বাড়ি তলিয়ে গেছে মাধুরী সরকার, পলাশ সিংহ, লোহারাম সিংহ, অরিজিৎ বর্মণ, লক্ষণ বর্মণ সহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবারের। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে কয়েকশ পরিবার। অবিলম্বে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি এই পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, সরকার যদি প্রথম থেকেই পাকা নদীবাঁধ তৈরি করতে তাহলে এই সমস্যার মুখোমুখি তাঁদের পড়তে হত না।