সিএএ এবং এসআইআর নিয়ে ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে প্রশিক্ষণ শিবির শান্তনু ঠাকুরের

সিএএ(CAA) এবং এসআইআর (SIR) নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্যে শাসক-বিরোধী তরজা তুঙ্গে। এই তরজায় স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিধায় সাধারণ মানুষ। এসআইআর নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ইতিমধ্যেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিএএ এবং এসআইআর নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করলেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ’। ঠাকুরবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন মূলত বিভিন্ন জেলা এবং ব্লকের সদস্যদের নিয়ে এই প্রশিক্ষণ শিবির শুরু করা হয়েছে। যেখানে তাদের শেখানো হবে কিভাবে সিএএ-তে ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। সেখানে কী কী ধরনের কাগজপত্র তথ্যপ্রমাণ হিসাবে দাখিল করতে হবে এবং কেনই বা সিএএ-তে আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি এসআইআর নিয়েও চালু করা হয়েছে প্রশিক্ষণ শিবির। এই শিবির সম্পর্কে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ’-এর সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর বলেন, “এখান থেকে যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, আগামীতে তারা নিজের এলাকায় সিএএ-এর জন্য ক্যাম্প করবে। সিএএ এবং এসআইআর নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে যাতে কোনও আতঙ্ক তৈরি না হয় এবং অযথা তারা যাতে দ্বিধার মধ্যে না পড়েন সে কারণেই এই ক্যাম্পের আয়োজন। আশাকরি এই ক্যাম্পের ফলে তাদের মনের সব সংশয় কেটে যাবে। এই ক্যাম্পের পাশাপাশি এদিন এমপিএস-টু(MPS-2) রোগে আক্রান্ত আরুষ বণিকের পরিবারের হাতে ১০ লক্ষ টাকা তুলে দিলেন মতুয়া মাতৃসেনা। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার ঠাকুরনগর শিমুলপুরের দুই বছর বয়সী আরুষ বণিক MPS-2 রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান তুলে সেই টাকা যোগাড় করছে তার পরিবার। ঠাকুর বাড়িতেও সাহাযের জন্য আবেদন করেছিল আরুষের পরিবার। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে এদিন আরুষের পরিবারের হাতে ১০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন মতুয়া মাতৃসেনার সভানেত্রী সোমা ঠাকুর।
নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার, পার্ক স্ট্রিটে অবস্থান বিক্ষোভ শুভেন্দুর

আরজি করের চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণ কাণ্ডের একবছর পূর্ণ হল। কিন্তু বছর ঘুরলেও তাঁর মেয়ে ন্যায় বিচার পায়নি বলে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বারবার সরব হয়েছেন অভয়ার বাবা-মা। এমনকী গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গেও দেখা করতে যান। কিন্তু অমিত শাহ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় সাক্ষাৎ হয়নি। পরে সিবিআই ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করে একপ্রকার হতাশা নিয়েই কলকাতায় ফেরে অভয়ার বাবা-মা। এই আবহে আজ শনিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অভিযান ঘিরেই এবার রণক্ষেত্রে পরিণত হল মহানগরী। এই আবহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করলেন, আরজি করে নির্যাতিতার মা-বাবার ওপর লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। পার্ক স্ট্রিট থেকে ডোরিনা ক্রসিং, হাওড়া ময়দান থেকে সাঁতরাগাছিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এদিকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে নবান্ন অভিযানের শুরুতেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বাধা দেয় পুলিশ। এরপর নির্যাতিতার মা-বাবার ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় বসে পড়ে প্রতিবাদ শুরু করেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনকী নবান্ন অভিযানে গিয়ে পুলিশের লাঠিতে মাথা ফেটেছে বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক যুব নেতা প্রিয়াংগু পান্ডের। আহত হয়েছে বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক। বিজেপির তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশের লাঠির আঘাতে নির্যাতিতার মায়ের কপালে চোট লেগেছে। তাঁর কপাল ফুলে গিয়েছে। এদিন নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন অভয়ার বাবা-মা। যদিও এই অভিযানে শুভেন্দু অধিকারীর নাম জড়িয়ে পড়ায় জুনিয়র ডাক্তারদের তরফ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। শনিবার পরিকল্পনা মাফিক ধর্মতলা থেকে প্রতিবাদীদের একটি মিছিল নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেই মিছিলেই সামনের সারিতে ছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। কিন্তু পার্কস্ট্রিট মোড়েই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। তার কিছুক্ষণ পরেই আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। সেই সময়েই নির্যাতিতার মা আঘাত পান বলে দাবি করা হচ্ছে। অন্যদিকে নির্যতিতার বাবার দাবি, “আমরা যে গাড়িতে করে আসছিলাম, তার নম্বর সব জায়গা দেওয়া হয়েছে। আমাদের গাড়ি বার বার আটকানো হয়েছে। বলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি করে এখানে পৌঁছেছি। হাই কোর্ট শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দিয়েছে। তার পরেও বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করেছে পুলিশ।’ অভয়ার বাবার সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল আটকাতে পুলিশ যেভাবে ব্যারিকেড দিয়েছে, যেভাবে নিরীহদের উপর পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে তাতেই স্পষ্ট যে মুখ্যমন্ত্রী মানবিক নন। তিনিও চান না অভয়া বিচার পাক। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়েছেন।”
প্রকৃতি বাঁচাতে ম্যানগ্রোভকে রাখি পরিয়ে অভিনব বার্তা দিলেন সুন্দরবনের মহিলারা

সুন্দরবন বাঁচাতে ম্যানগ্রোভকে রাখি পরিয়ে পরিবেশ বাঁচানোর অনন্য বার্তা দিলেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার সর্ব ধর্মের মহিলারা। তাঁদের দাবি, ম্যানগ্রোভ বাঁচলে বাঁচবে নদীর বাঁধ, আর নদীর বাঁধ বাঁচলে বাঁচবে সুন্দরবন এলাকার নদীপাড়ের প্রত্যন্ত সব গ্রাম। আর তাই ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর বার্তা দিতে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মহিলারা ম্যানগ্রোভকে ভাই ও দাদা হিসাবে রাখি পরিয়ে একদিকে যেমন ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর বার্তা দিলেন, তেমনি পাশাপাশি সুন্দরবন বাঁচানোর বার্তাও দিলেন। অনন্য এই ছবি ধরা পড়ল হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার বরুনহাট এলাকায়। ইছামতি ও গৌড়েশ্বর নদীর সংযোগস্থলে নদীর বাঁধে ম্যানগ্রোভে রাখি পরালেন গ্রামের মহিলারা। তাদের বক্তব্য, “ম্যানগ্রোভ বাঁচলে বাঁচবে নদীর বাঁধ, বাঁধ বাঁচলে বাঁচবে গ্রাম, গ্রাম বাঁচলে বাঁচব আমরা। বাঁচবে জমির ফসল, মাছের ভেড়ি। আয়লা, আমফান ও বুলবুলের মত ভয়াবহ দুর্যোগ আমরা দেখেছি। আমরা উপলব্ধি করেছি মাসের পর মাস বাড়ি ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে ফ্ল্যাট সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার কী দুর্বিষহ পরিস্থিতি। তাই আমরা সমাজকে বার্তা দিতে চাই যে ম্যানগ্রোভ কাটবেন না, ম্যানগ্রোভ বাঁচান এবং বেশি বেশি করে ম্যানগ্রোভ লাগান এবং তাদেরকে রক্ষা করুন। ম্যানগ্রোভ রক্ষা করার জন্যই আমরা যেমন বাড়িতে দাদা ভাইকে রক্ষা করার জন্য রাখি পরাই, ঠিক তেমনই বাধাবিঘ্ন থেকে রক্ষা করার জন্য ম্যানগ্রোভকে রাখি পরিয়ে তাদেরকে রক্ষা করার বার্তা দিলাম।” পাশাপাশি এদিন সুন্দরবনের ‘স্বপ্ন সমিতি’-র পক্ষ থেকেও সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভে রাখি পরানোর কর্মসূচী নেওয়া হয়। হিঙ্গলগঞ্জের ঘোষ পাড়াতে ‘স্বপ্ন সমিতি’-র পক্ষ থেকে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভকে রাখি পরালেন তারা। বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনার্থে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভকে রাখি পরালেন। তাদের ভাইয়েরা কাজকর্ম সূত্রে বাইরে। তাই ভাইদের মঙ্গল কামনার্থে বোনেরা ম্যানগ্রোভকে রাখি পরালেন। ইছামতি নদীর তীরে সুন্দরবনের বাদাবন অর্থাৎ এই ম্যানগ্রোভ ভরা অরণ্যে এই অভিনব উদ্যোগ নিলেন তারা। এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জের প্রধান রূপা গুপ্তা তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। সব মিলিয়ে প্রকৃতি বাঁচানোর এক অভিনব বার্তা দিলেন সুন্দরবনের মহিলারা।
রাহুল-অভিষেক বৈঠক, বঙ্গ রাজনীতিতেও কি তবে নতুন সমীকরণ?

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তে সদ্য তৃণমূলের লোকসভার নেতা হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই নাকি দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দীর্ঘ একঘণ্টার একান্ত বৈঠক করেছেন তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক। রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, অভিষেককে নাকি নিজে ফোন করে রাহুল গান্ধী তাঁর গৃহপ্রবেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক ও ডিনার মিলিয়ে ঘণ্টা দুয়েকের পর্বে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে প্রায় ৫০ মিনিট কথা হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর কাছ থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেমন আছেন, তাও জানতে চান কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধী। এনসিপি (শরদ) প্রধান শরদ পাওয়ারের সঙ্গেও আলাদা করে কথা হয় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধেয় নয়াদিল্লিতে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর বাসভবনে এই নৈশভোজে অভিষেক ছিলেন বিরোধী শিবিরের অন্যতম মধ্যমণি। সেখানেই তৃণমূলের তরফ থেকে আমন্ত্রিত ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। অভিষেকের সঙ্গে একই টেবিলে বসে ডিনার সারেন রাহুল। সেই টেবিলে ছিলেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ন’জন সিনিয়র নেতা। দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের এই সমীকরণের প্রভাব কি পড়বে বঙ্গ রাজনীতিতে। দিল্লিতে অভিষেক-রাহুল বৈঠকের পরেই এই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে জোরালো হচ্ছে। বাংলায় ২০২১ বিধানসভা এবং ২০২৪ লোকসভায় সিপিএমের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন লড়েছে কংগ্রেস। সেক্ষেত্রে ১টি লোকসভা আসন জিততে পেরেছে কংগ্রেস। মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন ইশা খান চৌধুরী। যদিও সেই আসনে বামেদের সাহায্যের চেয়েও বেশি কাজ করেছিল ‘গনি খান ম্যাজিক’। পাশাপাশি প্রথম বারের মতো হেরে যান প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী। যদিও রাহুল গান্ধী তাঁর হয়ে প্রচারে আসেননি বলেও প্রশ্ন উঠেছিল। তবে এখনও যে বাংলায় কংগ্রেস খুব সুবিধাজনক জায়গায় আছে, তেমনটা বলা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতায় বাড়ায় বঙ্গ রাজনীতি ঘিরেও তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা। যদিও এই জল্পনার মাঝেই বাংলায় কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গত শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, ‘বাংলায় একলা চলব—না তৃণমূলের সঙ্গে চলব তা নিয়ে এআইসিসি এখনও কোনও নির্দেশ দেয়নি। তবে আগামী দিনে বাংলা নিয়ে এআইসিসি যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত।’ ফলে সব মিলিয়ে ২০২৬ বিধানসভার আগে বঙ্গ রাজনীতিতে যে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে না, তা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।