বাংলায় কারোর নাম তালিকা থেকে বাদ করলে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিলেন অভিষেক

লোকসভার বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব পেয়েই ‘হায়ার এন্ড ফায়ার ‘ মুডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় এসআইআরে একজনেরও নাম বাদ পড়লে লক্ষ বাঙালি নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনকে ‘ভোট চোর’ আখ্যা দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। রীতিমত প্রমাণ দিয়ে ভোট চুরি ধরিয়েও দেন তিনি। রাতে নৈশ ভোজে ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের পাঠ নেন রাহুল। আর কমিশনের বিরুদ্ধে ‘ঠোঁস সবুদ’ পেয়ে বাংলায় এস আই আর ইস্যুতে গর্জে উঠলেন অভিষেক। বিহারের মতো পরবর্তীকালে বাংলাতেও এই বিশেষ প্রক্রিয়া চালানো হলে তার ফল যে ভালো হবে না এদিন তা বুঝিয়ে দিয়ে জল্পনা দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে সাংবাদিকের তিনি বলেন, “যাঁরা ‘হ্যাঁ স্যার’ বলে নির্বাচন কমিশনকে বিক্রি করে দিয়েছে, আমরা তাদের সতর্ক করছি। যদি ভোটার তালিকা থেকে কোনও বাঙালির নাম বাদ যায়, এক লক্ষ বাঙালি নিয়ে নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাও করব।” অভিষেক আরও জানিয়েছেন, এসআইআর প্রশ্নে এক বন্ধনীতে আসতে রাজি ইন্ডিয়া জোটের বাকি দলগুলি। আগামী ১১ আগস্ট সোমবার বিরোধী সাংসদরা দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।তৃণমূলের লোকসভার দলনেতার দায়িত্ব পাওয়ার পর অভিষেক স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেছেন। ভিন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর অত্যাচার ও বাঙালির অস্মিতার উপর আঘাতের বিষয়ে সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই দাবি মানা হয়নি বলেই খবর। যা নিয়ে আগামিদিনে সংসদ উত্তাল হতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশ্বভারতীর কবি প্রয়াণ অনুষ্ঠানে এসে বাংলা ভাষা নিয়ে সরব সুকান্ত মজুমদার

বাইশে শ্রাবণ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকেই বিশ্বভারতীতে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হচ্ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। বৈতালিক, ব্রহ্মউপাসনা, বৈদিক মন্ত্রপাঠ ও রবীন্দ্রসংগীতে ভরে ওঠে শান্তিনিকেতনের গৌরপ্রাঙ্গণ। এ দিন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার যোগ দেন এই অনুষ্ঠানে, বৃক্ষরোপণ করেন এবং বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নে ভিন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিক আক্রান্তের ঘটনা ও বাংলা ভাষার ‘শুদ্ধতা’ প্রসঙ্গে সরব হন তিনি। বলেন, “আমরা উর্দু-আরবি মুক্ত বাংলা ভাষা চাই। মাকে মা, জলকে জল বলব।” দিল্লি পুলিশের পক্ষে দাঁড়ানো নিয়ে বিজেপি নেতা অমিত মালব্যর মন্তব্যের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ হচ্ছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। ভিন রাজ্যে বাঙালি আক্রান্ত প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “এটা রাজনৈতিক আক্রমণ করার চেষ্টা। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আলাদা করতে গিয়ে কয়েকজন ভারতীয় বাঙালির নাম চলে আসতে পারে, তাদের রক্ষা করা দায়িত্ব বিজেপির। এতে তাদের চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।” অন্যদিকে বাংলায় এসআইআর (SIR) নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে সরব হয়েছেন, তার পাল্টা উত্তরে এদিন সুকান্ত মজুমদার জানান, “এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এটা সারা দেশেই হবে।” বিরোধীরা ভোটার তালিকায় থাকা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ না দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিনের অনুষ্ঠানে বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষও উপস্থিত ছিলেন।
নবান্ন নয়, আইন মেনে প্রতিবাদ সভা করতে হবে সাঁতরাগাছি বাস স্ট্যান্ড এবং রানী রাসমণিতে, সিদ্ধান্ত পুলিশ প্রশাসনের

শনিবারের নবান্ন অভিযান নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল পুলিশ প্রশাসন। নবান্ন নয়, শনিবার অর্থাৎ ৯ আগষ্টের প্রতিবাদ সভা করতে হবে সাতরাগাছি বাস স্ট্যান্ড এবং রানী রাসমণি এভিনিউতে। প্রসঙ্গত শনিবারের এই নবান্ন অভিযানের বিরোধিতা করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলা দায়ের করেন হাওড়া ব্যবসায়ী সমিতি অপর একটি জনস্বাস্থ্য মামলা দায়ের করেন হাওড়ার জনৈক বাসিন্দা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামীম, এডিজি ( দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতীম সরকার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভর্মা ও হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী। সেখানেই বেশ কিছু নির্দেশকা দেওয়া হয়, সাংবাদিকদের সম্মেলনে এডিজি ( দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতীম সরকার জানান,” যেহেতু নবান্ন রাজ্যের প্রধান সচিবালয় স্বাভাবিকভাবেই নবান্ন বা তার আশেপাশের অঞ্চল হাই সিকিউরিটি জোন। স্বাভাবিকভাবে ওখানে বিএনএসএস – ১৬৩ ( ১৪৪ ধারা) জারি থাকবে। সেই কারণে মহামান্য আদালত আমাদের দুটি অন্য জায়গা নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মতো হাওড়ার জন্য সাঁতরাগাছি বাস স্ট্যান্ড এবং কলকাতার জন্য রানী রাসমণি এভিনিউ স্থির করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে এই দুই জায়গায় জমায়েত ও প্রতিবাদ সভা করা যাবে, পুলিশ সব ধরনের সাহায্য করবে।” তবে শনিবারের এই নবান্ন অভিযান কর্মসুচির জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে এদিন জানান এডিজি ( আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামীম , তিনি বলেন,” শনিবারের এই কর্মসূচি নিয়ে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট, কলকাতা পুলিশ বা ভবানী ভবনে এখনো পর্যন্ত কেউ কোন অনুভূতির জন্য আবেদন করেননি. তবে আদালতের নির্দেশ মেনে এই অভিযান শান্তিপূর্ণভাবে আইন মেনে করতে হবে কোন ব্যক্তি বা সংগঠন যদি নির্দেশ অমান্য করে অশান্তি তৈরি সৃষ্টি করে তাহলে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেবে।”
খুনের আতঙ্কে ঘুম উড়েছে মালদার তৃণমূল নেতার

মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা বুলবুল খান। জেলায় দলের সাধারণ সম্পাদক তিনি। এমনকী মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যও রয়েছেন তিনি। এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে পরিচিত। বুলবুলের অভিযোগ তাঁকে খুনের জন্য বিহারের কিছু মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল চক্রান্ত করছে। ভাড়া করা হয়েছে শার্প শুটারও। হরিশ্চন্দ্রপুরের সুলতাননগর গ্রামে তাঁর বাড়ির সামনে পাঠানো হয়েছে রেকি করতে। গোপন সূত্র মারফত তিনি সেটা জানতে পেরেছেন। আর তারপর থেকেই আতঙ্কে ঘুম উড়েছে তাঁর। চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিষয়টি জানার পরেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানার দারস্থ হয়েছেন তিনি। থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। এমনকী ইমেইল মারফত পুরো বিষয়টাই জানিয়েছেন মালদার পুলিশ সুপারকেও। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যদি বুলবুল খানের অভিযোগ সত্যি হয়, তবে দাপুটে এই নেতাকে কারা খুনের চক্রান্ত করছে? কেনই বা চক্রান্ত করছে? এই নিয়ে ক্যামেরার সামনে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি ওই নেতা। তবে এর পেছনে দলের একাংশের যোগসূত্রের কথাও তিনি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেননি। অভিযোগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ভাগলপুরের এক জেলবন্দী, এবং মালদায় জেলবন্দী বিহারের এক শার্প শ্যুটার ও দাগি অপরাধীকে তাঁর নামে সুপারি দেওয়া হয়েছে। তাঁকে খুনের ষড়যন্ত্রে বিহারের অপরাধীদেরই ব্যবহার করা হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতেই মালদা শহরে খুন হন তৃণমূলের সহ সভাপতি দুলাল সরকার। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হন ইংরেজবাজার শহর তৃণমূলেরই সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। আবার অতি সম্প্রতি মানিকচকে তৃণমূল কর্মী খুনে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য। হরিশ্চন্দ্রপুরেও মন্ত্রী তাজমুলের সঙ্গে ইদানিংকালে বারবার বুলবুল খানের সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। এই ঘটনাগুলোকে হাতিয়ার করেই বিরোধীদের অভিযোগ, এটা ২০২৬ বিধানসভার টিকিট নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যেখানে তৃণমূল নেতারা নিজেরাই নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা তারা কিভাবে দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয় মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের দাবি, বিজেপি শাসিত বিহার থেকে দুষ্কৃতিদের পাঠানো হচ্ছে মালদা জেলাকে অশান্ত করার জন্য। যদিও এই চক্রান্ত নিয়ে ভয় পেতে নারাজ বুলবুল। পুলিশের উপর এখনও তিনি ভরসা রাখছেন। তবে বিষয় নিয়ে পরিবার যে আতঙ্কে রয়েছে, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। সমগ্র ঘটনা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এই ঘটনার তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।
সিবিআইতে অনাস্থা পরিবারের, তাহলে কি বিচার অধরা অভয়ার?

সুমন গাঙ্গুলী: ৩৬৫ দিন। হ্যাঁ একবছর। অভয়া কান্ডের বছর ঘুরলেও মিললো না বিচার। রাত দখল থেকে শুরু করে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ‘ এর স্লোগানে দখল হয়েছিল রাজপথ। বিচার আটকে ছিল রাজ্য পুলিশের হাতে সঞ্চয় রাই এর গ্রেফতারিতে। তবে কি রাজ্য পুলিশেই ভরসা? না সেদিন জাস্টিস এর স্লোগান দেওয়া আন্দোলনকারী থেকে শুরু করে অভয়ার পরিবার, কেউই ভরসা রাখতে পারেনি রাজ্য পুলিশের উপর। ভরসা ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আদালতের রায় ‘ ন্যায় বিচার ‘ এর দায়িত্ব বর্তায় সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিকেশনের হাতে। তারপর? তারপর কেটে গিয়েছে এক বছর, সঞ্জয় রাই ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করে তদন্ত এগোতে পারেনি তারা। তবে রাজ্যের তরফে প্রথমদিন থেকে এই তদন্তে সিবিআই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, যেহেতু ঘটনার মাত্র ১২ দিনের মাথায় রাজ্য পুলিশই সঞ্জয় রাইকে গ্রেফতার করে, তাই কার্যত রাজ্য পুলিশের সাফল্যকেই বারবার তুলে ধরা হচ্ছিল। আজ প্রায় ১ বছর। আমার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ন্যায় বিচারের আন্দোলন, ৯ আগষ্টকে সামনে রেখে আবার হয়তো রাত জাগবে রাজপথ, আবার হয়তো গিটার এর সুরে আর হাততালিতে স্লোগান উঠবে উই ওয়ান্ট জাস্টিস। আর বিচার এর দাবীতে ঠিক এক বছরের মাথায় রাজ্যের বিরুদ্ধে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে অভয়ার পরিবার। দাবী ন্যায় বিচারের। কিন্তু কে দেবে সেই বিচার? তদন্তের ভার এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে। কিন্তু সত্যি কি বিচার হবে? না অন্তত তেমন আশা করছেন না অভয়ার পরিবার। শনিতে নবান্ন অভিযান, দিল্লী থেকে তাই বৃহস্পতি রাতেই ফিরে আসেন অভয়ার বাবা-মা। তবে যে ন্যায় বিচারের দাবিতে শনিবার রাজ্যের প্রধান সচিবালয় অভিযান করবেন ‘ উই ওয়ান্ট জাস্টিস ‘ স্লোগান দেওয়া সহ-নাগরিকেরা। সেই বিচার শুধু স্লোগানেই থেকে যাবে না তো? যে বুকভরা আশা নিয়ে দিল্লী গিয়েছিলেন অভয়া’র পরিবার, সিবিআই-এর ডিরেক্টর এর সঙ্গে দেখা করে রীতিমতো হতাশা নিয়ে ফিরলেন তাঁরা। ” ১৪০ কোটির দেশের মানুষ যাদের উপর ভরসা করেন, সেই সংস্থা যে কতোটা বোগাস, তা নিজের চোখে দেখলাম।” কার্যত সিবিআই এর ওপর ভরসা হারিয়ে আক্ষেপ, অভয়ার বাবার। ” ভাবতে পারছেন সিবিআই ডিরেক্টর নিজে মামলা ছেড়ে দেবেন, আমাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর ওদের কাছে নেই। কে? কবে? কোথায়? ধর্ষণ করলো তার কোনো উত্তর নেই , এই অবস্থান মেনে নেওয়া যায় না।” হতাশ সন্তানহারা পিতার। এই আন্দোলন চলাকালীন কলকাতা পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসনকে বারেবারে শিরদাঁড়া উপহার দিতে দেখা গিয়েছিল। এবারও একইভাবে সেই শিরদাঁড়া দেওয়া হলো, খোদ সিবিআই ডিরেক্টকেই মেরুদন্ড তুলে যে দিলেন অভয়ার মা। তবে শিরদাঁড়া আছে বলে তা নিতে অস্বীকার করেন সিবিআই ডিরেক্টর। অভয়ার মায়ের বক্তব্য,” ওদের মেরুদন্ড নেই, থাকলে অজুহাত দিত না।” শনিবার নবান্ন অভিযান হবে, আবার কিছু মানুষ বিচারের দাবী নিয়ে রাস্তায় নামবে, কিন্তু ন্যায় বিচার? একদিন হয়তো বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদতে কাঁদতে সময়ের সারণী বেয়ে হারিয়ে যাবে।
দিনহাটায় আক্রান্ত নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পৌঁছল বিজেপির প্রতিনিধি দল

গত বৃহস্পতিবার দিনহাটার নাজিরহাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চার বিজেপি কর্মীর বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যা যূথিকা বর্মণ, বিজেপির ৬ নম্বর মণ্ডল মহিলা মোর্চার সভানেত্রী মোলিনা বর্মণ, বিজেপি কর্মী জিতেন্দ্র নাথ বর্মণ, বিজেপির প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি তরণীকান্ত বর্মণের বাড়ি। এমনকী মারধর করা হয় এক গর্ভবতী মহিলাকে। যদিও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে অন্তসত্তাকে দিনহাটা থেকে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় শিলিগুড়ির এক বেসরকারি হাসপাতালে। এই ঘটনায় তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন আক্রান্ত বিজেপি কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মদনমোহন বর্মণের নেতৃত্বে হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতিরা। এবার আক্রান্ত দিনহাটায় শালমারায় বিজেপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পৌঁছাল বিজেপির বিধায়ক ও প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতি রাভা, মাথাভাঙ্গার বিধায়ক সুশীল বর্মণ এবং রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ও ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণ সহ অন্যান্য জেলা নেতৃত্বরা। শুক্রবার তারা আক্রান্ত বাড়িগুলি ঘুরে দেখেন। কথা বলেন আক্রান্ত পরিবারের লোকজনের সঙ্গে। তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতি রাভার দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার চিৎকার করছেন বাঙালি আক্রান্ত হচ্ছে বলে। কিন্তু দিনহাটায় আক্রান্ত এই হতদরিদ্র পরিবারগুলি কি বাঙালি নন। তাহলে শুধুমাত্র বিজেপি করার অপরাধে কেন তাদের উপর অত্যাচার করা হল? কেন তাদের ভাড়িঘর ভাঙচুর করা হল। অন্যদিকে ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মণও এই ঘটনায় তৃণমূলকে নিশানা করেছেন। তাঁর দাবি, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এমনটা ঘটে না। এই ছবি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই দেখা যায়। পাশাপাশি আক্রান্ত পরিবারগুলিও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বাইশে শ্রাবণ বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা

১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ প্রয়াত হন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই প্রথা মেনে শুক্রবার ভোরে বিশ্বভারতীর গৌরপ্রাঙ্গণে বৈতালিক, বিশেষ উপাসনা ও কবিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে পালিত হল বাইশে শ্রাবণ। ১৩৪৯ সাল থেকেই শান্তিনিকেতনে এই দিনটি বৃক্ষরোপণ উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কবির জীবদ্দশায়ও তিনি বহুবার বৃক্ষরোপণ করেছেন। ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখে নিজের জন্মদিনে তিনি উত্তরায়ণের উত্তরে পঞ্চবটী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে বাইশে শ্রাবণকেই বৃক্ষরোপণের দিন হিসাবে স্থির করা হয়। এ বছরও প্রথা মেনেই উৎসব শেষে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী দিনে শ্রীনিকেতন মেলার মাঠে হলকর্ষণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠান শেষে বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীর কুমার দাস জানান, ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে হেরিটেজ ওয়ার্ক শুরু হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য লাইট ও সাউন্ড শো চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে কবিগুরুর জন্ম থেকে বিশ্বভারতীর ইতিহাস তুলে ধরা হবে। বছরের শেষের দিকে এই প্রকল্প শুরু করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এদিন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয় এদিনের অনুষ্ঠান থেকে। বিশ্বভারতীতে একটি আধুনিক রেকর্ডিং স্টুডিওর উদ্বোধনের কথা জানানো হয়েছে। সেখানে গানসহ নানা ধরনের অডিও রেকর্ডিংয়ের সুযোগ থাকবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরাই নয়, বাইরের আগ্রহীরাও নির্দিষ্ট ফি দিয়ে এই স্টুডিও ব্যবহার করতে পারবেন।
রবীন্দ্রনাথকে হাতিয়ার করে মমতার বিজেপি বিরোধিতা

নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণে হাতিয়ার রবীন্দ্রনাথ। কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লিখলেন, “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে আমাদের প্রাণের ঠাকুরকে জানাই আমার অন্তরের শ্রদ্ধা ও প্রণাম। বছরের প্রতিটি দিনে, প্রতিটি মূহূর্তে তিনি আমাদের ঘিরে রয়েছেন। বিশেষত, আজ শুধু বাংলা ভাষা বলার জন্য বাঙালির উপর যখন সন্ত্রাস নেমে আসছে, তখন তিনিই আমাদের লড়াই করার প্রেরণা।’’ মূলত: রবি ঠাকুরকে আঁকড়ে ধরেই যে ভাষার আন্দোলন শুরু করেছেন তা মনে করিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ প্রতিভা। আজ যখন তাঁর ভাষার ওপর আক্রমণ নেমেছে, তখন আমরা দুঃখিত, ব্যথিত, মর্মাহত। চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির, সেই ভারতের নির্মাণে রবীন্দ্রনাথ-ই আমাদের ধ্রুবতারা। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন থেকে তাঁকে প্রণাম জানিয়ে, আমরা ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছি। যতদিন এই বাংলা-বিদ্বেষ চলবে – আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো। আর এই লড়াইয়ের পথে রবীন্দ্রনাথই আমাদের পথনির্দেশক।আজ আমাদের নতুন করে শপথ নেবার দিন – বাংলার উপর ভাষা সন্ত্রাস মানব না ৷’’ শুক্রবার ফের নাম না করে বিজেপিকে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চরণে আমার প্রণতি জানাই। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ তিনি আমাদের অন্তরে থাকেন। তিনি আমাদের প্রাণের কবি – আজ, শুক্রবার তাঁকে বিশেষভাবে অন্তরে আহ্বান করি। তিনি আমাদের অভিভাবক, তিনি আমাদের ধ্রুবতারা। ঝাড়গ্রামে আমাদের সরকারি কর্মসূচি ছিল। সেখানে সর্বসমক্ষে অনেক মনীষীকে একত্র শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ ছিল। বিশ্বকবিকে সেই অবকাশে প্রণাম জানাই। সেই অনুষ্ঠানের আগে প্রকাশ্যে সমাজমাধ্যমেও তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিই। রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী। তাঁর স্মরণে প্রতিদিন-ই পুণ্যদিন। কবিকে স্মরণ করি ও তাঁকে উদযাপন করি বছরভর এবং দিবারাত্র। জাগরিত হোক সেই দেশ, যেখানে রবীন্দ্রনাথের ভাষা, বাংলা ভাষা, সম্মান পায়, মর্যাদা পায় ও সকল দেশবাসীর ভালবাসা পায়। বিকশিত হোক সেই দেশ, যে দেশে ভাষা-সন্ত্রাস থাকবে না।’’
মমতার এনআরসি আর বাংলা ইস্যুতে কি অসমের বাঙালি ভোট হারানোর আশঙ্কা হেমন্তের?

২৬ শের নির্বাচনে বাঙালি অস্মিতার সাথে সাথে যে ফের এনআরসিকেই হাতিয়ার করে তিনি ভোটে নামতে চাইছেন বারে বারে প্রমাণ করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই এনআরসি নিয়ে মমতার টার্গেট অসম। নিজের বক্তব্যে একাধিকবার অসম সরকারকে কাঠগড়ায় করিয়েছেন তিনি, আসলে এনআরসি’র নাম করে যে আসলে বাঙালিদেরই বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে, একাধিক বক্তব্যে সেটাই তুলে ধরেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। এবার এই ইস্যুতে ময়দানে নামলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা। এন আর সি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যে কথা বলছেন বলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কে সরাসরি আক্রমণ অসমের মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর বক্তব্য, “শেষ পাঁচ বছরে এটা নিয়ে একটাও কথা বলেননি। আসলে এনআরসির নামে ভয় পাইয়ে তাদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছে।” বিহারের পাশাপশি অসমেও বিধানসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার পাশাপশি এই জেলাতেও প্রচুর বাঙালি ভোটার আছেন। মোট জনসংখ্যার ৩০% মানুষ বাঙলাভাষী, ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী হাইলাকান্দি, বরাক ভ্যালি সহ অঞ্চলে প্রায় ৩১,২০৫,৫৭৬ জন বাঙালি। বেশ কয়েকটি বিধানসভা আসনে এই বাঙালিরাই বড় ফ্যাক্টর। রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতার এই এনআরসি আর বাংলার অপমান ইস্যু একটা বড় প্রভাব নিজের রাজ্যের বাঙালিদের ওপর পড়তে পারে এই সম্ভাবনা থেকে এবার ময়দানে হেমন্ত। তাঁর আরোও বক্তব্য,”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ করে বলছেন এন আর সি মানবেন না, এনআরসি কোথায়? কেউ এন আর সি র নির্দেশ দেয়নি। আসলে ভয় দেখিয়ে বাঙালি ভোট পাওয়ার জন্য উনি চেষ্টা করছেন।”
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ফলে শেয়ার বাজারে ধ্বস

ভারতের রপ্তানি করা পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রভাব যে শেয়ার মার্কেটে পড়বে, তা জানাই ছিল। শুক্রবার বাজার খোলার পর থেকে সেই ছবিই ধরা পড়ল। এক ধাক্কায় সেনসেক্স ও নিফটি৫০-র পয়েন্ট কমছে। এদিন সকাল ১০টা ৫ নাগাদ বাজার খুলতেই নিফটি ব্যাঙ্ক, নিফটি অটো, নিফটি পিএসইউ ব্য়াঙ্ক, নিফটি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস, নিফটি মেটাল, নিফটি এনার্জি, নিফটি প্রাইভেট ব্য়াঙ্ক, নিফটি ইনফ্রা, নিফটি কমোডিটিজ, নিফটি কনজাম্পশন, নিফটি পিএসই, নিফটি সার্ভিসেস সেক্টর, নিফটি কনজিউমার ডিউরেবলস এবং নিফটি অয়েল অ্যান্ড গ্যাসের সূচক মতো একাধিক সূচক রেডজোনে চলে যায়। এদিন নিফটি মিডক্যাপ ১০০ এবং নিফটি স্মলক্যাপ ১০০-এর সূচক হ্রাস পেয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবারও এই ধরনের ঘটনাই ঘটেছিল। তবে বেলা গড়াতেই ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে গ্রাফ। বাজার বন্ধের সময় সেনসেক্স ও নিফটি৫০-র গ্রাফ ফের পজিটিভে পৌঁছেছিল। যা দেখে কিছুটা হলেও আশ্বস্ত ছিল লগ্নিকারীরা। শুক্রবারও তেমন কিছুই আশা করছেন তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই খামখেয়ালিপণার প্রভাব শুধু ভারতের উপর যে পড়বে তা নয়, এর দাম চোকাতে হতে পারে আমেরিকার সাধারণ নাগরিকদেরও। কেননা ভারতের অর্থনীতি অনেক বেশি দেশীয় চাহিদা নির্ভর, এবং ইতিমধ্যেই বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করে দিয়েছেন রফতানিকারীরা। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজারে যতটা প্রতিক্রিয়া আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ততটা বরং দেখা যায়নি। দেশের রফতানি, আর্থিক বৃদ্ধি যেখানে চোট খেতে পারে, সেখানে এটুকু ধাক্কা লাগা খুব স্বাভাবিক ঘটনা বলেই মনে করছেন তাঁরা। এমনকী ইক্যুইনমিক্স রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা জি চোক্কালিঙ্গমও মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি বৃদ্ধির ফলে ভারতের অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব পড়বে না। তার প্রধান কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তা ভারতের মোট জিডিপি-র মাত্র ২ শতাংশ।